শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “চাল, ডাল, লবণ, তেল, নাশপাতি থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনী সকল পণ্যের দাম এই রমজান মাসে বাড়িয়ে অবৈধ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা।
“বাণিজ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন, রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে না। অথচ এমন কোনো জিনিস নেই, যার মূল্য দেড় গুণ, দুই গুণ, তিন গুণ বৃদ্ধি পায়নি। বাণিজ্যমন্ত্রী কথা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে, নাকি জনগণের সাথে রসিকতা করেছেন-এটি এখন সবচাইতে বড় প্রশ্ন।”
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এই সংবাদ সম্মেলনে চালের মূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে রিজভী বলেন, “মোটা চালের দাম এখন ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে এখন বাংলাদেশে চাল বিক্রি হচ্ছে।
“চালের মূল্যের এই লাগামহীন বৃদ্ধিতে মানুষ অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। একদিকে চালের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে দেশে লাখ লাখ টন চালের ঘাটতি রেখে বর্তমান সরকার শ্রীলঙ্কায় চাল রপ্তানি করছে। তারা বাহাদুরি দেখানোর জন্য শ্রীলঙ্কায় চাল রপ্তানি করছে।”
গত এক বছরে দেশে চালের দাম বেশ কয়েক দফায় বেড়েছে। সরকারি পর্যবেক্ষণেই এক বছরে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি প্রায় ৩২ শতাংশ বাড়তে দেখা যায়।
ঢাকা মহানগরী এলাকার বাজার পর্যবেক্ষণে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি মে মাসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৪২ থেকে ৪৫ টাকা জানানো হয়, যা এক বছর আগে ছিল ৩২ থেকে ৩৪ টাকা।
এছাড়া ওই তালিকা অনুযায়ী মাঝারি আকারের চালের দাম আগের বছরের থেকে ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়ে ৪৬ থেকে ৫০ টাকা হয়েছে। তবে সরু চালের দাম এক বছরে বেড়েছে সাত শতাংশ।
দেশের মানুষকে ক্ষমতাসীনরা ১০ কেজিতে চাল খাওয়ানোর নির্বাচনী অঙ্গীকার করেছিল দাবি করে একে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা বলে মন্তব্য করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।
বাজেটে ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার অর্থের ওপর আবগারী শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠী’র জমানো টাকায় হাত দেওয়া বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নামফলক ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ভাংচুর করেছে অভিযোগ করে এর নিন্দা জানান রিজভী।
তিনি বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাম ফলক ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গতকাল ভাংচুর করে সরিয়ে ফেলেছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে অবহিত করলেও তিনি বরং উল্টো ছাত্রলীগকেই উৎসাহিত করেছে অপকর্মটি সাধনের জন্য।
“সরকারের ইশারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির তত্ত্বাবধানেই এই অপকর্মটি করা হয়েছে। এটি একদলীয় নিষ্ঠুর বাকশালী ফ্যাসিস্ট শাসনেরই নমুনা। আমরা এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেদ মঞ্জুর রোমেলকে গত রাতে তার গ্রামের বাড়ি শাহাজাদপুর থেকে সাদা পোশাকধারী লোকেরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে গেছে অভিযোগ করে অবিলম্বে তাকে জনসম্মুখে হাজির করার জোর দাবি জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, আমিরুল ইসলাম খান আলীম উপস্থিত ছিলেন।