দ্রুত বিচারে সাজা বৃদ্ধি বিএনপির জন্যই, শঙ্কা ফখরুলের

দ্রুত বিচার আইনে সাজা বাড়ানোর যে পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে, তা বিএনপিকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার জন্য বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2017, 10:22 AM
Updated : 6 June 2017, 11:39 AM

মন্ত্রিসভায় সংশোধিত আইনের খসড়া পাস হওয়ার পরদিন মঙ্গলবার এক প্রতিক্রিয়ায় এই শঙ্কার কথা জানান বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপি আমলে প্রণীত দ্রুত বিচার আইনের বিভিন্ন অপরাধের জন্য সাজার মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ৭ বছর করে আইন সংশোধনের প্রস্তাব সোমবার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

চাঁদাবাজি, যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, যানবাহনের ক্ষতি সাধন, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিনষ্ট, ছিনতাই, দস্যুতা, ত্রাস ও সন্ত্রাস সৃষ্টি, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি, দরপত্র কেনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন অপরাধ দ্রুততার সঙ্গে বিচারের জন্য এ আইন বলে সরকারের ভাষ্য। তবে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি, যে যখনই বিরোধী দলে থাকে, আইনটির সমালোচনায় মুখর থাকে।

সাজার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, “এরা (সরকার) কী করেছে দেখেন, গতকাল মন্ত্রিসভায় পাস করিয়েছে দ্রুত বিচার আইন। তারা ওই আইনে সাজার মেয়াদ ২ থেকে বাড়িয়ে ৭ বছর করেছে। কেন করেছে?

“এখন নির্বাচন-টির্বাচন কথা উঠেছে, এই সময় যদি দ্রুত বিচার আইনে আমাদের বিরোধী দলের সব নেতা-কর্মীকে অভিযুক্ত করে সাজা দিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে তারা আবার সেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একা একা নির্বাচন করতে যাবে।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, খালেদা জিয়াসহ তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য করার পাঁয়তারা করছে সরকার।

ফখরুল বলেন, “আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, এবার সেটা হবে না। এদেশের মানুষ আপনাদের ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করতে দেবে না। এ দেশের মানুষ তার অধিকার আদায় করবে, ভোটের অধিকার আদায় করবে। সত্যিকার অর্থেই তারা জনগণের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।”

আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে দাবি করে ফখরুল বলেন, “কতটুকু রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেলে, কতটুকু জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে ভয় পায়। তারা বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করতে চায় না, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করতে চায় না।

“নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কেন তুলল? কারণ তারা জানে যে, ওই রকম সরকার থাকলে কোনো দিন তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। সেজন্য এই সরকার সেই পদ্ধতি বাতিল করেছে।”

পরনির্ভরশীল করার চক্রান্ত

আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “এই সরকার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যে সম্ভাবনা, সেই সম্ভাবনাকে সুচিন্তিতভাবে পরিকল্পিতভাবে একটা পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করবার জন্য তারা কাজ করছে।

“আপনারা লক্ষ করে দেখবেন, ধারাবাহিকভাবে যতগুলো বাজেট এসেছে, প্রত্যেকটা বাজেটে দেখবেন, কতগুলো খাতকে তারা একেবারে গুরুত্বই দেয় নাই। শিক্ষাখাতের খারাপ অবস্থা, স্বাস্থ্যখাতের খারাপ অবস্থা, দুরবস্থা সমস্ত জায়গায়।”

অর্থনীতির সাবেক শিক্ষক ফখরুল বলেন, “গত কয়েক বছরে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়েনি, কোনো গ্রোথ নেই, বেসরকারি বিনিয়োগ নিচের দিকে। পাবলিক সেক্টারে যে এলটমেন্ট (বরাদ্দ) দেবে, সেই টাকার ৮০ শতাংশই তারা চুরি করে নেয়।

“ব্যাংকগুলোকে একেবারে ফোকলা করে ফেলেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়েছে। স্টক মার্কেট শেষ করে দিয়েছে।”

“নিজেরা তাদের শরীরকে অনেক মোটা করে ফেলেছে, গর্দান মোটা করে ফেলেছে। টাকা-পয়সা যে কামাচ্ছে, তা দেশেও রাখছে না এবং পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন, কিছুদিন আগে যেসব অর্থ বিদেশে পাচার করছে। কারা করছে এগুলো? সব আওয়ামী লীগের লোকেরা,” বলেন ফখরুল।

বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গি দমন অভিযানে হতাহত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপি মহাসচিব। 

তিনি বলেন, “বাবা-মায়েরা তাদের যুবক ছেলেদের বাইরে যেতে দেয় না। কখন তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বলবে সে জঙ্গি; ক্রসফায়ারে দিয়ে দেবে। প্রত্যেকদিন পত্রিকায় দেখবেন ক্রসফায়ারে একটা-দুইটা-তিনটা করে মরছে।

“আবার নাটকও করে ভালো ভালো। চারিদিক দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে দেয় এক-দেড় মাইল এলাকা। বলে যে এখানে এনকাউন্টার হচ্ছে। এনকাউন্টারে কয়েকটা পুলিশ আহতও হয়। আজকেও হয়েছে কয়েকজন পুলিশ। এই ধরণের ঘটনা ঘটছে।”

“এসব বললে আবার পুলিশ বাহিনী মনক্ষুণ্ন হয় যে আমরা তাদেরকে প্রশ্ন করছি। কেন প্রশ্ন করব না? আপনারা তো একটা জঙ্গিকে এখন পর্যন্ত বিচারের সামনে নিয়ে আসতে পারলেন না। দেখেন আর গুলি করে মেরে ফেলেন আপনাদের ভাষায়,” বলেন ফখরুল।

“তাহলে তদন্তটা হচ্ছে কোথায়, বিচারটা হচ্ছে কোথায়? এসমস্ত নাটক বোঝে মানুষ। মানুষকে এত বোকা মনে করার কোনো কারণ নেই।”

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ড্যাব আয়োজিত এই আলোচনা সভায় ফখরুল ছাড়াও বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্ অধ্যাপক আবদুল মান্নান মিয়া, ড্যাবের সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম এ কুদ্দুস, মহাসচিব অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক মোস্তাক রহিম স্বপন, অধ্যাপক এসএম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ডা. আতিকুর রহমান।

বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী, কাদের গনি চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন সভায়।