নির্বাচনে সমান সুযোগ পেতে মামলা প্রত্যাহার চান ফখরুল

নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে বিএনপি চেয়ারপারসন ও নেতাকর্মীদের নামে হওয়া মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2017, 09:33 AM
Updated : 29 May 2017, 10:44 AM

সোমবার ঢাকায় এক আলোচনা অনুষ্ঠানে অবিলম্বে খালেদা জিয়াসহ সব নেতাকর্মীর মামলা প্রত্যাহার ও নির্বাচনে সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি তোলেন তিনি।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, “আপনারা সবাই মহাআনন্দে নির্বাচন করবেন আর আমরা কারাগারের ভেতর থেকে অথবা আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে শুধু দেখব, সেটা হবে না।

“এরকম নির্বাচন এদেশে আর হবে না। আমরা নির্বাচন চাই। সেটা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে।”

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৬তম মৃত্যবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে সরকার ‘মিথ্যাচার’ করে জনগণকে প্রতারিত করছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “আজকে প্রবৃদ্ধির হার বলতে গিয়ে মানুষকে যে বোকা বানানো হচ্ছে, সেই বোকা বানানোর মূল বিষয়টা হচ্ছে, আসলে পরিসংখ্যানকে বানিয়ে বানিয়ে তারা বিভিন্নভাবে কথা বলছে। এর কোনোটাই ঠিক নয়। প্রত্যেকটাই গরমিল আছে।”

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে অর্থনীতির সাবেক শিক্ষক মির্জা ফখরুল বলেন, “এই যে সরকার অর্থনীতির কথা খুব বলে, এখন নাকী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনীতির ক্ষেত্রে এতো অর্জন করেছে, প্র্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে। তার প্রমাণ আজকের পত্রিকা খুললে পাবেন- বলা হচ্ছে যে, ১০ বছর আগে প্রতিবছর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতো ১৩ লাখ। এখন  হচ্ছে ৯ লাখ। তাহলে প্রবৃদ্ধিটা কার হচ্ছে?

“প্রবৃদ্ধিটা হচ্ছে শুধু আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীদের, এই সরকারের মন্ত্রীদের। তারা আজকে হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন খাত থেকে লুটপাট করে বিদেশে টাকা পাচার করছে। কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখেছেন, কত হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। কানাডাতে বেগম পল্লী নামে নতুন পল্লী তৈরি হয়েছে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সব জায়গায় এখন বাড়ি-ঘর তৈরি করছে এই নতুন নব্য সব ধনীরা।”

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়ার জীবনাদর্শ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “দেশে এমন কোনো ক্ষেত্রে নেই, জিয়াউর রহমান সাহেবের অবদান নেই। তাকে সবসময় আমাদের শুধু স্মরণ নয়, অনুকরণ করতে হবে। তার কাজগুলো যদি আমরা এগিয়ে নিয়ে আসি, সেভাবে চলতে চাই, চলতে পারি, তবেই আমরা সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হব।”

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আওয়ামী লীগ অতীতে বাকশাল করে গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছিল, আজকে তারা গায়ের জোরে বিনা ভোটে সরকার গঠন করে গণতন্ত্রকে ধবংস করেছে। সেজন্য তারা ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী আচরণ করছে। দেশের জনগণ আর এই সরকারকে দেখতে চায় না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আমাদেরকে আন্দোলনের প্রস্তত নিতে হবে।”

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মওদুদ আহমেদ বলেন, “আওয়ামী লীগ ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ধর্ম নিরপেক্ষতা একটা ক্যাচি ওয়ার্ড। আসলে তারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে না। দেখেন, তারা পঞ্চদশ সংশোধনী করেছে, সংবিধানকে ওলোট-পালট করে দিয়েছে। কিন্তু সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ মুছে ফেলতে পারেন নাই এবং ইসলাম রাষ্ট্র ধর্ম সেটাও সংবিধান থেকে বাদ দিতে পারে নাই। তাহলে কী ধরনের ধর্মনিরপেক্ষতার কথা আপনারা বলেন?

“আর বর্তমানে এখন যা দেখছি, ভোট পাওয়ার জন্য এখন আবার হেফাজতেরসাথে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করছে। তাতে কোনো লাভ হবে না। ২০০৬ সালে নির্বাচনের আগে এরকম একটি দক্ষিণপন্থি, ডানপন্থি কট্টর রাজনৈতিক দল খেলাফতে মজলিশের সঙ্গে ৫ দফা চুক্তি করেছিল।”

আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সহ-সভাপতি সেলিমা রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কাজী আবুল বাশার, উত্তরের মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, যুবদলের সাইফুল আলম নিরব, শ্রমিকদলের আনোয়ার হোসেইন, স্বেচ্ছাসেবকদলের শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদলের রাজীব আহসান বক্তব্য রাখেন।