সরকারকে উদ্দেশ্য করে এই শরিক নেতা বলেছেন, “সকল ভাস্কর্য রক্ষা করুন। ভাস্কর্যকে উপলক্ষ করে হেফাজতি তেঁতুল হুজুর চক্রের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জিকির তোলার চক্রান্ত কঠোরভাবে প্রতিহত করুণ।”
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাসদ ঢাকা মহানগরী কমিটি আয়োজিত এক সমাবেশে তথ্যমন্ত্রী ইনুর এই আহ্বান আসে।
তিনি বলেন, সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রদত্ত অধিকার রক্ষায় সকল ভাস্কর্য, ইতিহাস, ঐহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা, শিল্প-সাহিত্যের চর্চা রক্ষা করার দায়িত্ব প্রশাসন ও সরকারের ওপর বর্তায়।
“আমরা আশা করব, প্রশাসন এবং সরকার তার উপরে ন্যস্ত সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের সকল ভাস্কর্য রক্ষা করবে। শিল্প সাহিত্যের চর্চা নির্বিঘ্ন করার জন্য সকল পদক্ষেপ নেবে।”
হেফাজতে ইসলামসহ ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারী সকল ‘ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অপচেষ্টা’ কঠোরভাবে দমন করার আহ্বান জানান তিনি।
ইনু বলেন, “হেফাজতি সাম্প্রদায়িক তেঁতুল হুজুর চক্রের সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা, রাজনৈতিক লেনদেন করবেন না। হেফাজতে ইসলাম তেঁতুল হুজুর চক্র, রাজাকার গোষ্ঠী, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সঙ্গে যে কোনো লেনদেন বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী, তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ক্ষতি করে।”
ওই ভাস্কর্য অপসারণ করা না হলে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের ঘটনার মত আবারও ঢাকা অচল করে দেওয়ার হুমকি দেয় কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজত।
এরপর গত ১১ এপ্রিল হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী নেতৃত্বাধীন এক দল ওলামার সঙ্গে গণভবনে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাস্কর্যটি সরাতে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ভাস্কর্যটি সরানোর পক্ষে এর নান্দনিক ‘ত্রুটির’ পাশাপাশি জাতীয় ঈদগাহের কাছে অবস্থানের কথা বলেন তিনি।
ওই সিদ্ধান্তের সমালোচনায় বিভিন্ন বাম সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এর মধ্য দিয়ে সরকার মৌলবাদীদের সঙ্গে আপস করছে এবং তাতে ধর্মীয় মৌলবাদ আরও উৎসাহিত হবে।
এই সমালোচনার মধ্যেই গত শুক্রবার মধ্যরাতে ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে পরদিন মধ্যরাতে এনেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপন করা হয়।
এদিকে ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুরে প্রগতিশীল ছাত্রজোট বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস, জলকামান ও রবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে উল্টো হত্যাচেষ্টার মামলাও দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর ভাস্কর্য সরানোর কথা বলার পর জাসদ নেতারা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের আদর্শচ্যুতির শঙ্কা প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, “আমাদের কথা অত্যন্ত পরিষ্কার। শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা এবং ভাস্কর্য নির্মাণ ও স্থাপন মূর্তিপূজা নয়। ভাস্কর্য স্থাপনে ধর্মের কোনো অসম্মান হয় না। ভাস্কর্য বাংলাদেশ ও পৃথিবীর হাজার হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐহিত্য সংরক্ষণ ও প্রকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প মাধ্যম।
“আমরা বলতে চাই, সুপ্রিম কোর্টের ভাস্কর্যকে উপলক্ষ করে হেফাজতি সাম্প্রদায়িক তেঁতুল হুজুর চক্র বাংলাদেশের সকল ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।”
ইনু বলেন, যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক সমাজ নির্মাণের পথে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই উদ্যোগকে ‘বাধা দেওয়ার জন্যই’ ভাস্কর্যকে উপলক্ষ করে আবার ‘চক্রান্তের রাজনীতি শুরু হয়েছে’।
“জাসদ রাজপথে থেকে সব ধরনের চক্রান্ত প্রতিহত করবে এবং বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালিত করবে।”
অন্যদের মধ্যে ঢাকা মহানগর জাসদের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মীর হোসেন আকতারের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে দলের সহ-সভাপতি শফিউদ্দিন মোল্লা, ফজলুর রহমান বাবু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল আকতার, নাদের চৌধুরী, শওকত রায়হান ও ওবায়দুর রহমান চুন্নু সমাবেশে বক্তব্য দেন।