এই সরকার আসলে চালাচ্ছে কে, প্রশ্ন ফখরুলের

‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে’ বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে পুলিশের ‘নিষ্ফল তল্লাশি’ অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সরকারকে কারা চালাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2017, 11:19 AM
Updated : 27 May 2017, 12:10 PM

গত ২০ মের ওই অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গোয়েন্দা তথ্য পেয়েই গিয়েছিল বলে পরদিন এক অনুষ্ঠানে বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শনিবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের ওই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, “তিনি বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে। সেই তল্লাশির পর পুলিশ কর্মকর্তারা বের হয়ে সাংবাদিকদের সামনে বললেন যে, তল্লাশির প্রাপ্তি হচ্ছে শূন্য… ওইখানেই প্রশ্নটা।

“তাহলে তারা কারা, তারা কোন গোয়েন্দা- যারা সরকারকে বিভ্রান্ত করছেন, পুলিশকে বিভ্রান্ত করছেন। এই সরকার আসলে চালাচ্ছে কে? রাজনৈতিক নেতারা, আওয়ামী লীগের লোকেরা নাকি গোয়েন্দা বাহিনী লোকেরা- এটা আজকে জাতির কাছে বড় প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই এই সরকারের দেওয়া উচিৎ, ওবায়দুল কাদের সাহেবের দেওয়া উচিৎ।”

‘নিষ্ফল’ ওই তল্লাশির পর সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছে তারও ব্যাখ্যা দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “যে তথ্যের ভিত্তিতে দেশের জনপ্রিয় নেতা, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রীর কার্যালয়ে একটা হীন অভিযোগ নিয়ে তল্লাশি চালানো হয়, সেই অভিযোগ যখন মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তখন এই সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে, জনগণ তা জানতে চায়।

“আসলে জনগণকে জানানোর তারা প্রয়োজন বোধ করে না। তাদের জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তা নেই। তাদের জন্মই হয়েছে বেআইনিভাবে, তারা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয় নাই।”

বিএনপি চেয়ারপারসনে খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশির প্রতিবাদে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল।

‘বিএনপি ফোবিয়ায় আক্রান্ত সরকার

‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণার পর থেকে সরকার বিএনপি ফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তাদের নেতাকর্মীদের ‘বেআইনি গ্রেপ্তার’ অভিযান শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “‘ভিশন ২০৩০’ দে্ওয়ার পরেই আওয়ামী লীগের মাথা গেছে খারাপ হয়ে গেছে। আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, তারপর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতানেত্রীরা এমন এমন কথা-বার্তা বলছেন, অনেকে সন্দেহ করছে তারা আদৌও সুস্থ আছে কিনা।

“সরকার বিএনপি ফোবিয়াতে ভোগতে শুরু হতে করেছে। যেকারণে আবার নতুন করে বেআইনি গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেছে।”

বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, “আমি আসার আগেই মৎস ভবনের কাছে আমাদের আটজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রতিদিন আমাদের নয়া পল্টনের অফিসের সামনে থেকে ৪/৫ জনকে তারা ধরে নিয়ে চলে যায়। এটা কোন গণতন্ত্র, কোন দেশে আমরা বাস করছি।”

সরকারের বিরুদ্ধে পুলিশ ও প্রশাসনকে কব্জা করার অভিযোগ এনে মিডিয়াকে কব্জা করার জন্য বিভিন্নভাবে বিভিন্ন আইন তৈরি ও বিচার বিভাগকে কব্জা করার চেষ্টার অভিযোগ আনেন মির্জা ফখরুল।

‘উন্নয়নের নামে ভুল পরিসংখ্যান’

জনগণকে বোকা বানানোর জন্য সরকার উন্নয়নের বিভিন্ন পরিসংখ্যানের ভুল ব্যাখ্যা ও ভুলভাবে উপস্থাপন করছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “রেমিট্যান্স কমে গেছে, মারাত্মকভাবে প্রায় ২২ পার্সেন্টের নিচে নেমে এসেছে। রপ্তানি আয় কমে যাচ্ছে, বিনিয়োগ নাই, মানুষ চাকরি পায় না, গ্রামের কৃষকরা ধানের দাম পাচ্ছে না। আর মোটা চালের দাম ৫০ টাকায় উঠে গেছে। কাল থেকে রোজা, প্রতিটি জিনিষের দাম বাড়তে শুরু করেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন… সব মনে হচ্ছে এখনই সিঙ্গাপুর হয়ে যাচ্ছে।”

সরকারকে নির্বাচনের মাধ্যমে সরানো বিএনপির দায়িত্ব মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন দেওয়ার জন্য ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসানের পরিচালনায় আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, কেন্দ্রীয় নেতা মোরতাজুল করিম বাদরু, এসএম জাহাঙ্গীর, রফিকুল ইসলাম মজনু, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, মোস্তফা কামাল রিয়াদ বক্তব্য রাখেন।