অর্থনীতিতে ‘ম্যাজিক’ দেখাতে চায় সরকার: ফখরুল

সরকার দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করার লক্ষ্যে কাজ করছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পরিসংখ্যানের ধূম্রজাল তৈরি করে তারা অর্থনীতিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখাতে চায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2017, 05:24 PM
Updated : 26 May 2017, 06:02 PM

শুক্রবার এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দেশের বর্তমান অর্থনীতি হচ্ছে একটা লুটেরা অর্থনীতি, লুম্পেন ইকোনমি। এখন এই অর্থনীতি রসাতলে যাচ্ছে।

“অর্থনীতির পরিসংখ্যানে একটা ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে। জুয়েল আইচ ম্যাজিক দেখান, একটা ফুল নিয়ে এসে একশটা ফুল দেখান। আজকে এরা (সরকার) অর্থনীতিতে একটা ফুল দিয়ে ১০০টা ফুল দেখাতে চায়।”

আগামী ১ জুনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করার আগে হোটেল পূর্বানীর বলরুমে এক প্রাক বাজেট আলোচনায় এসব কথা বলেন অর্থনীতির সাবেক শিক্ষক মির্জা ফখরুল।

এমবিএ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ম্যাব আয়োজিত এ আলোচনায় ১/১১ এর সেনা সমর্থিত সরকারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, ১/১১ এর আগে এদেশে যারা নতুন এন্টারপ্রেনরশিপ গড়ে তুলছিল, যেসব উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছিল, যেসব ব্যবসায়ীরা তাদের নিজেদের পুঁজি বাংলাদেশে বিনিয়োগ চাচ্ছিল, তাদেরকে ধরে নিয়ে গিয়ে এমন পিটুনি দিয়েছে আর টাকা নিয়েছে যে, ওরা আর বিনিয়োগের কথা জীবনেও ভাববে না। এটা বাস্তবতা।”

বর্তমানে ব্যবসায়ীরা নতুন করে বিনিয়োগের কথা ‘চিন্তাও করে না’ দাবি করে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে বাংলাদেশকে উদ্যোক্তাদের আশা-প্রত্যাশা অনুযায়ী ‘মুক্ত অর্থনীতির সমৃদ্ধ দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলা কখনোই সম্ভব হবে না বলে ভাষ্য বিএনপি মহাসচিবের।

দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক তুলে ধরে অর্থনীতির সাবেক শিক্ষক মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের রূপ্তারি প্রবৃদ্ধি ক্রমান্বয়ের কমছে, আমাদের রেমিট্যান্স গ্রোথ ধস নামছে। এই অবস্থায় দেশের অর্থনীতিকে কিভাবে আবার ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনা যাবে, এটা আমি জানি না, অর্থনীতিবিদরা বলতে পারবেন।”

দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “লুটপাট কী রকম হয়েছে…, পানামা স্ক্যান্ডেলের কথা শুনেছেন, আজকের পত্রিকায় একটি খবর আছে, বাংলাদেশ হচ্ছে পঞ্চম দেশ যেখানে বিএমডাব্লিউ গাড়ি (বিলাসবহুল) সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। তার মানে এটা মনে কইরেন না যে, এখানকার মানুষ সবাই বিএমডাব্লিউ গাড়ি কেনার মতো বিত্তশালী হয়ে গেছেন, তাদের সমৃদ্ধি বেড়েছে।

“এখানে লুটেরা অর্থনীতির মানুষের, যারা লুট করছে তারা এখন এভাবে লুট করছে যে, তারা বিএমডাব্লিউ গাড়ি বেশি কিনছে।”

বিএনপির শাসনামলে ব্যাষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীল ছিল বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল।

“বিএনপির সময়ে মেক্রো ইকোনমি অত্যন্ত স্থিতিশীল ছিল, শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেজন্য এখানে ব্যাংকি সিস্টেমটা অত্যন্ত ভালোভাবে কাজ করেছে। আজকে সেই ব্যাংকি সিস্টেমকে তারা শেষ করে দিয়েছে।

“শুনেছেন ইতোমধ্যে ব্যাংকিংয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা মূলধন ঘাটতির জন্য এখন আবার ভর্তুকি দিতে হবে। লুট করেছে তারা, দেবে আমরা জনগণ, আমাদের ট্যাক্সের টাকা থেকে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে গেছে।”

ব্যক্তিখাতে ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে প্রশ্ন তুলেন মির্জা ফখরুল।

“ব্যক্তিখাতে কাদেরকে ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়েছে? দেখবেন, সমস্ত আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী যারা আছেন, তারাই পেয়েছে। এরপর হুসাইন মো. এরশাদ সাহেবও বাদ যাননি, আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন মহীউদ্দিন খান আলমগীরও বাদ যাননি।”

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন, ব্যবসা করেন না এমন সব ব্যক্তিকে ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

এ অবস্থার থেকে উত্তরণে সুষ্ঠু নির্বাচনে মধ্য দিয়ে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ফখরুল।

অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে মেগা প্রকল্পের ৬০ শতাংশ চুরি হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

জাতীয় প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে তিনি বলেন, “সরকার বলছে, জিডিপি নাকি ৭ দশমিক ২৪ হচ্ছে। কোনো বাজেটে মানব উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ ছাড়া প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়, এটা বুঝতে হবে। প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের উপরে যেতে হয়, মানব উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা আছে। বাংলাদেশ সরকার যেখানে বিনিয়োগ করছে জিডিপির ২ শতাংশের মতো।

“বিনিয়োগ ছাড়া মানব উন্নয়ন সম্ভব নয় এবং মানবউন্নয়ন আমরা করতে পারি নাই বলে আমরা বিশ্বের ১৩৯ নম্বরে। যেখানে সব অর্থনৈতিক সূচক নিম্নগামী তাহলে কীভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়ল? যে দেশের ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়, সেই দেশের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে পাড়ি দেবে? যে দেশের ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়, সেদেশে বাইরের থেকে লোক আসে- এটা সহজ উদাহরণ। সরকারের প্রতিটি তথ্য মেন্যুফেকচার করা।”

ম্যাব সভাপতি সৈয়দ আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব শাকিল ওয়াহেদের পরিচালনায় এ প্রাক বাজেট আলোচনায় সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।

তার প্রবন্ধে জাতীয় প্রবৃদ্ধি, সঞ্চয়, রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়, শিল্পায়ন, কৃষিখাত, বেসরকারি বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পরিসংখ্যান উপাত্তের তুলনামূলক বিশ্লেষণ দেখানো হয়।

আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ, কবি ফরহাদ মজহার, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বক্তব্য রাখেন।