রোববার দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান।
তিনি বলেন, “সরকার সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে চেয়াপারসনের কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। এজন্য আমরা আজকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি। কারণ আমরা মনে করি, সম্পূর্ণভাবে বেআইনি কাজ করেছে পুলিশ। সেজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবশ্যই সেটার জবাব দিতে হবে, তাকেই এর দায় বহন করতে হবে।”
শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুই ঘণ্টা ধরে গুলশানে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে আকস্মিক অভিযানে যায় পুলিশ। আদালতের পরোয়ানা নিয়ে তল্লাশির কথা জানালেও শূন্য হাতেই ফিরে যায় তারা।
এই তল্লাশিকে বেআইনি অভিযোগ করে প্রতিবাদে বিএনপি রোববার ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। একই ইস্যুতে জাতীয়তবাদী যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলও ওইদিন বিক্ষোভ সমাবেশের আলাদা কর্মসূচি দিয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা যখন দেশে একটা শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক চর্চার শুরু করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি, যখন আমরা ‘ভিশন ২০৩০’ দিয়েছি। এর পরপরই গুলশানে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেত্রীর কার্যালয়ে যে আগ্রাসন হয়েছে- এটা নজিরবিহীন ঘটনা। এই ধরণের ফ্যাসিবাদী আক্রমণ দেশে যে গণতন্ত্রের ন্যূনতম ভবিষ্যৎ আছে, তাকে বিনষ্ট করবার একটা পাঁয়তারা, এটা উসকানিমূলক।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পুলিশের পরিচালিত তল্লাশি বেআইনি হয়েছে দাবি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন।
তিনি বলেন, “সিআরপিসির বিধান হচ্ছে- এরকম তল্লাশি করতে হলে স্থানীয় দুই গণমান্য ব্যক্তি অবশ্যই থাকতে হবে। এখানে দেখা যাচ্ছে যে, গণমান্য ব্যক্তি কাউকেই অবহিত করা হয় নাই।
“আইনের আরও বিধান হচ্ছে, যে ভবনটি তল্লাশি করবে, সেই ভবনের যে মালিক বা সেই ভবনে যারা থাকেন, তাদেরকে অবহিত করবেন। প্রথমে বলবেন, তাদের দরজা এবং যেভাবে আছে সেগুলো খুলে দিতে।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের ক্ষেত্রে আইন মানা হয়নি অভিযোগ করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, “তল্লাশির পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জেনেছি, তারা (পুলিশ) কোনো গণমান্য ব্যক্তি তো নেননি। ওই অফিসে যে দুইজন পিয়ন ছিলে, তাদেরকে একটি কক্ষে আটকে রেখে তল্লাশি করেছে। এসব কাজ সম্পূর্ণ বেআইনি।
“পুলিশ সিআরপিসির ১০৩ ধারা লঙ্ঘন করেছে এবং ৯৬ ধারাও যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হয়নি। আদালত যে আদেশ দিয়েছে তা প্রতিপালনে তারা (পুলিশ) আইনের কোনো তোয়াক্কা করে নাই। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলের অফিসে তল্লাশি করা ইতিপূর্বে আমার প্রায় ৩৭ বছরে আইন পেশায় আমি কখনো দেখি নাই। এখানে আদালত শুধুমাত্র আদেশ দিয়েছে, কিন্তু কোনো পরোয়ানা ইস্যু হয় নাই।”
বিষয়টি নিয়ে দলের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বসে ‘পরবর্তী পদক্ষেপ’ নেবেন বলে জানান অ্যাডভোকেট জয়নাল।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্টের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, হাবিবউন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, বিলকিস জাহান শিরিন, শামা ওবায়েদ, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের জুয়েল ও কাজী আবুল বাশার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।