খালেদার দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাতেও বিচারক বদল

এতিমখানা দুর্নীতি মামলার পর এবার দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাতেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আবেদন মঞ্জুর করে বিচারক বদলে দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2017, 08:21 AM
Updated : 17 May 2017, 08:25 AM

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেয়।

সাত বছর আগে দুদকের দায়ের করা জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলা বর্তমানে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের আদালতে খালেদার আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি পর্যায়ে রয়েছে। 

পুরান ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের মাঠে জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে এতদিন এ মামলার বিচার চলছিল।

হাই কোর্টের আদেশ অনুযায়ী, এখন এ মামলার বাকি শুনানি হবে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে।

খালেদার বিরুদ্ধে দুদকের করা জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলাও এক সময় তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের আদালতে ছিল। তার প্রতি অনাস্থা জানিয়ে খালেদা হাই কোর্টে গেলে মামলাটির দায়িত্ব পান ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কামরুল হোসেন মোল্লা। 

কিন্তু তিনি এক সময় দুদকের আইন শাখার পরিচালক থাকায় খালেদা আবারও অনাস্থা জানান এবং গত ১৪ মে কামরুল হোসেন মোল্লার আদালত থেকে মামলাটি স্থানান্তরের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। তবে এ মামলার জন্য নতুন বিচারক এখনও ঠিক করে দেওয়া হয়নি।

এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় বিচারক বদলের আদেশ পাওয়ার পর গত ১৩ মে দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারক আবু আহমেদ জমাদারের কাছে মামলার বিচার স্থগিতের আবেদন করেন খালেদার আইনজীবীরা।

ওই আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় গত ১৫ মে তারা হাই কোর্টে আসেন এবং দাতব্য ট্রাস্ট মামলার বিচারকের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে আদালত বদলে দেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে বুধবার তাদের পক্ষেই আদেশ দিল হাই কোর্ট। 

খালেদার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন এ জে মোহাম্মদ আলী ও জাকির হোসেন ভূঁইয়া। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন খুরশীদ আলম খান।

পরে জাকির হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, “যেহেতু ওই আদালতের (তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার) প্রতি অনাস্থার কারণে একটি মামলা (জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট) হাই কোর্ট স্থানান্তর করে দিয়েছে, সেহেতু এ মামলা (জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলা) আর ওই আদালতে চলতে পারে না। এই যুক্তি দেখিয়ে আমরা আবেদন করেছিলাম। হাই কোর্ট তা মঞ্জুর করেছে।”  

খালেদা জিয়ার অনাস্থার কারণে এর আগেও একবার জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় বিচারক বদল হয়েছিল। 

ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ বাসুদেব রায়ের আদালতে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হলেও পরে খালেদার আবেদনে হাই কোর্টের আদেশের বিচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আবু আহমেদ জমাদারকে।

জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে আসা তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ অগাস্ট তেজগাঁও থানায় এই মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

খালেদা জিয়া ছাড়া অভিযুক্ত অপর আসামিরা হলেন- বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তৎকালীন একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ-এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চার জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। পরের বছর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরু করে আদালত।

এ মামলায় মোট ৩২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আসামিদের মধ্যে জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

গত বছরের ১ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। এরপর কয়েক দফা সময় নিলেও বাকি বক্তব্য তিনি আর উপস্থাপন করেননি।