রুষ্ট খালেদা ‘নিজেই মেটাবেন’ চট্টগ্রামের কোন্দল

চট্টগ্রামের বিএনপির দুই সাংগঠনিক জেলার বিভক্তি নিরসনের দায়িত্ব নিজের কাঁধেই নিয়েছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

সুমন মাহমুদ প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2017, 11:58 AM
Updated : 16 May 2017, 04:38 PM

সোমবার রাতে চট্টগ্রামের ১৫ নেতার সঙ্গে প্রায় আড়াই ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয় চট্টগ্রাম ‘উত্তর’ ও ‘দক্ষিণ’ জেলা কমিটি কেন্দ্র থেকেই করে দেওয়া হবে।

বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রামের দুটি কর্মীসভা কোন্দলের কারণে পণ্ড হয়ে যাওয়ায় বৈঠকে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। দুই জেলা শাখার কর্মীসভায় মারামারি এবং সংগঠনে বিভক্তির জন্য চট্টগ্রামের দায়িত্বে থাকা নেতাদের ব্যর্থতাকেই তিনি দায়ী করেন।

গত ২ মে চট্টগ্রাম উত্তর এবং ৩ মে দক্ষিণের কর্মীসভা দলীয় কোন্দলের কারণে মারামারিতে পণ্ড হয়ে যায়। তবে ৪ মে মহানগর বিএনপির কর্মী সভা হয়। 

কেন্দ্র থেকে সারা দেশে সংগঠন পুনর্গঠনে কর্মী সভা করতে যে ৫১টি দল গঠন করে দেওয়া হয়েছিল, সেখানে চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগরের দায়িত্বে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

কোন্দলে ওই দুই সভা পণ্ড যাওয়ার পর সেখানকার নেতাকর্মীদের নিয়ে সোমবার রাতে নিজের গুলশানের কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

বৈঠকে উপস্থিত একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এরকম গ্রুপিংয়ের জন্য কয়েকজন নেতাকে বৈঠকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। আমাদের চেয়ারপারসন বলেছেন, তিনি আর কোনো গ্রুপিং দেখতে চান না। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। যারা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

চট্টগ্রামের জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। দলের নতুন জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠনের পর এই প্রথম গুলশান কার্যালয়ে কোনো বৈঠকে তাকে দেখা গেল।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ছাড়াও চট্টগ্রামের নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাছির উদ্দিন, গিয়াস কাদের চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য গোলাম আকবর খন্দকার, এসএম ফজলুর হক, চট্টগ্রাম  মহানগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, দক্ষিণের সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহজাহান জুয়েল, সহসভাপতি এনামুল হক এনাম, ‍উত্তরের সদস্য সচিব কাজী আবদুল্লাহ আল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীমসহ ১৫ জন জ্যেষ্ঠ নেতা ছিলেন।

রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকের বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেছেন, চট্টগ্রাম ‘উত্তর’ ও ‘দক্ষিণের’ কমিটি কেন্দ্র থেকেই করে দেওয়া হবে বলে চেয়ারপারসন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম উত্তরে কোনো নির্বাচিত কমিটি নেই। ২০১৪ সালে আসলাম চৌধুরীকে আহ্ববায়ক ও কাজী আবদুল্লাহ হাসানের সদস্য সচিব করে ৭৪ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

তার আগে উত্তরের কমিটির সভাপতি ছিলেন গিয়াস কাদের চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আসলাম চৌধুরী। উত্তর জেলার অধীন থানা ও ওয়ার্ডগুলোতেও দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচিত কমিটি নেই।

অন্যদিকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ও সাবেক সাংসদ গাজী শাহজাহান জুয়েলের নেতৃত্বে দক্ষিণের কমিটি হয়েছিল ২০১১ সালে। দক্ষিণেও থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্বাচিত কমিটি নেই দীর্ঘদিন ধরে।

নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা শাখায় ছোট বড় মিলিয়ে অন্তত এক ডজন গ্রুপ সক্রিয়।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কর্মীসভার সময় সংঘর্ষে আহত হন সহসভাপতি এনামুল হক

উত্তরের গ্রপগুলো আবর্তিত হচ্ছে ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস কাদের চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাছির, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এসএম ফজলুল হক, কারাবন্দি যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, চাকসুর সাবেক ভিপি নাজিম ‍উদ্দিনকে ঘিরে।

আর দক্ষিণে ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান, দক্ষিণ জেলা সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহজাহান জুয়েল, সিনিয়র সহসভাপতি শেখ মহিউদ্দিন, সহসভাপতি এনামুল হক এনাম এবং গন্ডামারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীকে ঘিরে আলাদা আলাদা গ্রুপ সক্রিয়।

দলীয় এই কোন্দলের জেরে দুই সাংগঠনিক জেলার অধীনে উপজেলা পৌরসভা-ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে একাধিক কমিটি রয়েছে। যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্র দল, মহিলা দল, কৃষক দল ও শ্রমিক দলের মত বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলোর পরিস্থিতিও একই রকম।

এর বাইরে ভাইস চেয়ারম্যান নোমান ও মীর নাছির, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা।

গোলাম আকবর এবং যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীও প্রভাব রয়েছে দুই জেলা ও মহানগর কমিটির ওপর।