ইভিএমে সরকারের দুরভিসন্ধি দেখছে বিএনপি

সরকারের জনপ্রিয়তা ‘শূন্যের কোঠায় নেমেছে’ বলে আগামী নির্বাচনে কারচুপির দুরভিসন্ধি থেকে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে চায় বলে সন্দেহ করছে বিএনপি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2017, 10:29 AM
Updated : 12 May 2017, 01:34 PM

ইভিএম নিয়ে আগের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই সন্দেহের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “দুই দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা ও প্রধানমন্ত্রীতনয় বলেছেন যে, আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য সেটিরই প্রতিধ্বনি মনে হয়েছে।

“নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য সরকারের ইচ্ছাপূরণেরই প্রতিফলন। আমরা মনে করি, ইভিএম বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের আবার সামনে নিয়ে আসা দুরভিসন্ধিমূলক।”

ইভিএম পদ্ধতিকে ‘ক্রটিপূর্ণ’ হিসেবে বর্ণনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “সরকারের জনপ্রিয়তা এখন শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে, সেজন্যই প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ভোট কারচুপির জন্য বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন কি না- এটা এখন মানুষের মধ্যে বড় ধরণের প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।”

২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পথম ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এরপর স্থানীয় সরকারের কয়েকটি নির্বাচনে সফলভাবে ইভিএম ব্যবহার হলেও কারিগরি ত্রুটি নিয়ে নির্বাচন কমিশন-বুয়েট দ্বন্দ্বে এর ব্যবহার আটকে যায়।

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে গত ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ই-ভোটিং’ চালুর প্রস্তাব দেওয়া হয়।

নতুন কমিশন ভোট আয়োজনের যে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে, তাতে ডিজিটাল ভোটিং পদ্ধতি হিসেবে ইভিএম নিয়ে প্রস্তুতির জন্যও সময় রাখা হয়েছে।

এর মধ্যে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেন,  ইভিএম নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের ভাবনা চলছে। পরীক্ষামূলক ব্যবহারের পর রাজনৈতিক দলসহ সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা পেলেই তা ব্যবহার করা যাবে।

নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, জামার্নি ও ভারতে ইভিএম নিয়ে বির্তক হওয়ায় তার ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বা আংশিক রাখা হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।

“পত্রিকায় দেখলাম, ভারতের কোনো রাজ্যের উপ-নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছিল, সেখানে এমপিরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। গত কয়েদিন আগে ভারতে কীভাবে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট কারসাজির ঘটনা ঘটেছে সেটির ছবিসহ প্রকাশ করেছে।

“জার্মান আদালত ২০০৯ সালে এক রায়ে বলেছে, ইভিএম সহজে টেম্পারিং করা সম্ভব, এতে ভোট পুনঃগণনার সুযোগ নেই। তাই জার্মান আদালত ওই মেশিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।”

ঢাকায় দুই ছাত্রী ধর্ষণের মামলার প্রসঙ্গ টেনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের উচ্ছৃঙ্খল সন্তানরা এখন বেপরোয়া হয়ে নারীর প্রতি সহিংস হয়ে উঠেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর চাপ প্রয়োগ করে এরা নারকীয় তাণ্ডবলীলা চালিয়ে আইনের কাছে অধরাই থেকে যাচ্ছে।

“সম্প্রতি ঝিনাইদহের দুজন নারী শ্রমিক ঢাকায় কাজের খোঁজে আসার পথে তাদের শ্লীলতাহানিসহ এরকম অসংখ্য ঘটনা দেশবাসীকে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে নিপতিত করেছে।”

গত ৫ মে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর রেল স্টেশনে দুই নারীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহীন শেখসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

রিজভী বলেন, “দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিদ্যমান বলেই অনাচারের বিষাক্ত ডালপালা সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে। এই সংস্কৃতি পশু ও মানুষের মৌলিক পার্থক্য ঘুচিয়ে দিয়েছে।”

চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার ক্ষমতাসীন দলের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে অভিযোগ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গত এক সাপ্তাহে লাফিয়ে লাফিয়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী গালভরা বুলি আওড়িয়ে ছিলেন রমজানে কোনো পণ্যের দামই বাড়বে না। উনার বক্তব্যে যে বাচালতা তা প্রমাণ হয়েছে।

“বরং ক্ষুধা নিয়ে মানুষের দারিদ্র্যকে নিয়ে, মানুষকে কষ্ট দিয়ে, মানুষের সাথে রসিকতা করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। জনগণের পকেট কাটার জন্য রমজান মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণ না করে সরকার তাদের সিন্ডিকেটকে সহায়তা করছে।”

নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে শিগগিরই সরকারের তরফে জোর পদক্ষেপ নেওয়ারি আহ্বান জানান তিনি।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, বাবুল আহমেদ, মুনির হোসেন ও জাহেদুল কবির জাহিদ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

‘ভিশন ২০৩০’ পড়ুন, শিক্ষা নিন

এদিকে রাজধানীতে আরেক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার দেশকে একটি বন্দি খাঁচায় ঢুকিয়ে দিয়েছে, তাদের কাছ থেকে দেশের কারো শেখার কিছু নাই।

“আমি তাদের (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) অনুরোধ করব- দয়া করে এই ‘ভিশন ২০৩০’ পড়ুন এবং এখান থেকে আপনাদের শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে। অনেক কিছু জানতে পারবেন, বুঝতে পারবেন।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের তৃতীয় তলার সভা কক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় দলের উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য্’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

আমীর খসরু বলেন, ‘‘ বিএনপি একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমাদের ভিশন, পরিকল্পনা থাকতেই পারে। কিন্তু তার আগেই তারা (আওয়ামী লীগ) এটাকে ধাপ্পাবাজি ও ভাওতাবাজি বলছে। এসব কথা বলে তারা নিজেদেরকে নিজেরাই বোকা বানিয়েছে। আসলে তাদের মধ্যে নার্ভাসনেস দেখা দিয়েছে, সরকারের মধ্যে একটা অসহনীয় অবস্থা। কেন তাদের মধ্যে জ্বালা বা গ্রাত্রদাহ তা আমরা বুঝতে পারছি না।”

ব্যাংকিং খাতের লুটপাট বন্ধে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তদারকি মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশন তুলে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে দেওয়ার দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

জাতীয় দলের সভাপতি সৈয়দ এহসানুল হুদার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ন্যাপের সভাপতি জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া বক্তব্য রাখেন।