ডাকাতের কাছ থেকে দেশ গড়ার প্রস্তাব চাই না: ইনু

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভিশন ২০৩০-কে ‘ফাঁকা বুলি’ ও ‘অর্থহীন’ মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলছেন, ডাকাতের কাছ থেকে তিনি দেশ গড়ার প্রস্তাব শুনতে চান না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2017, 12:43 PM
Updated : 11 May 2017, 12:43 PM

খালেদা জিয়ার ২৫৬ দফার রূপকল্প নিয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া জানান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ইনু।

তিনি বলেন, “উনি (খালেদা) দুই মেয়াদে ১০ বছর ধারাবাহিকভাবে দেশ শাসন করেছেন। কোনো রাজনৈতিক নেতা বা দল যারা ক্ষমতায় ছিলেন বা ক্ষমতা প্রয়াসী তারা বড় বড় কথা বলার আগে জাতির কাছে তার শাসনকালীন সময়ের অপকর্ম, দুষ্কর্ম, আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ড নিয়ে জাতির কাছে প্রকাশ্যে মাফ চাওয়া উচিত ছিল, কৈফিয়ত দেওয়া উচিত ছিল।

“উনি ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলেছেন এটা গণতান্ত্রিক চল কথা কিন্তু ক্ষমতার ভারসাম্যের ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা ও প্রস্তাব উনি দেননি, এটা দেওয়া উচিত ছিল। সুতরাং সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছাড়া ক্ষমতার ভারসাম্য চাই, গণতন্ত্র চাই- এগুলো হচ্ছে ফাঁকা বুলি, এই ফাঁকা বুলি আমরা গ্রাহ্য করি না।”

আগামীতে ক্ষমতায় যেতে পারলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চান বুধবার তার একটি রূপরেখা তুলে ধরেন খালেদা জিয়া, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর ‘একক নির্বাহী ক্ষমতা’য় ভারসাম্য আনার পাশাপাশি বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সাংবিধানিক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার কথা বলা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার প্রস্তাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা রয়েছে, বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন- এমন প্রশ্নে ইনু বলেন, “অর্থনৈতিক বিষয়ে যেসব প্রস্তাব আছে আলোচনা হতে পারে। একটা প্রস্তাব উত্থাপন করার আগে তার নৈতিকতা ও যোগ্যতা আছে কি না, সেই দলের নৈতিক অবস্থান আছে কি না …।

“এই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে উনি পরিস্কারভাবে পাকিস্তানপন্থি সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পক্ষে ওকালতি করেছেন। উনি যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে মুখ খোলেননি, সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে মুখ খোলেননি।

“সুতরাং উনি কি সংস্কার করবেন? কি অর্থনৈতিক সংস্কার করবেন? দুই হাজার ডলার করবেন নাকি দশ হাজার ডলার করবেন এ বিষয়গুলো পরে আলোচনা করতে, আমি মনে করি না এটা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। ডাকাতের কাছ থেকে দেশ গড়ার প্রস্তাব আমি শুনতে চাই না।”

দু্র্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার আগে খালেদা জিয়াকে তার দুই ছেলের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলা উচিত ছিল মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “কারণ আদালতে উনার দুই ছেলের দুর্নীতির প্রমাণ হয়েছে। … হাওয়া ভবনের মাধ্যমে উনার শাসনামলে উনি দুর্নীতিকে শিল্পে পরিণত করেন।

“দুর্নীতির সঙ্গে আপস করব না বলে খালেদা জিয়ার যে দম্ভ, এটা করার আগে তাকে জাতির কাছে মাফ চাওয়া উচিত ছিল। নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার নিয়ে কথা বললেও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেননি, এটি ফাঁকবুলি, এই ফাঁকাবুলি যদি অব্যাহত রাখেন এটা চক্রান্তের শামিল।”

সংবিধানের ১৫তম ও ১৬তম সংশোধনী নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কথা না বলে খালেদা জিয়া ‘থলের বিড়ালটা বের করতে চাননি’ বলেও মন্তব্য করেন ইনু।

“চারনীতি, সামরিক শাসন ও অবৈধ ক্ষমতা দখল সম্পর্কে উনার পরিস্কার অবস্থান নাই। সুতরাং উনি কি পর্যালোচনা করবেন? এই জায়গাটা ধোঁয়াশা অবস্থার মধ্যে রেখে দিয়েছেন, এই অবস্থার মধ্য দিয়ে সংবিধানে আবার হাত দিয়ে সংবিধানে সাম্প্রদায়িকীকরণ বা সামরিক শাসনের যে জঞ্জলগুলো আমরা দূর করেছি সেগুলো পুনঃস্থাপনের আভাস দিয়েছেন।”

ইনু বলেন, “উনি বলেছেন নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করবেন, নিরপেক্ষ করবেন কিন্তু কোনো প্রস্তাব দিতে পারেননি। বরং খালেদা জিয়ার শাসনকালে আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন আমাদের উপহার দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে কৈফিয়ত দেওয়া উচিত ছিল।

“উনি বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিলের কথা বলেছেন কিন্তু দুই দুই বার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় কেন এই আইন বাতিল করলেন না কেন, এগুলো ফাঁকা কথা, এগুলোর কোনো মূল্য আমি দেখি না।”

ইনু বলেন, “উনি না গণতান্ত্রিক না অসম্প্রদায়িক, না বাংলাদেশ পন্থি। উনি কেবল মাত্র পাকিস্তানের রাজনীতির একজন যোগ্য দালাল।”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ চালাবেন বলে খালেদা জিয়া উল্লেখ করেছেন। … প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে জামায়াতকে এখনও পাশে রেখেছেন। জামায়াতকে পাশে নিয়ে যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গী তাণ্ডবের পক্ষে ওকালতি করে খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ চালাবেন- এটা হচ্ছে ভূতের ‍মুখে রাম নাম।”