ব্যাংকগুলো দখলে রাখতে আইন সংশোধন: ফখরুল

ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে পরিচালকদের মেয়াদ বাড়ানো এবং এক পরিবার থেকে চারজনকে রাখার সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগের সমালোচনা করছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2017, 02:39 PM
Updated : 8 May 2017, 03:27 PM

সোমবার মন্ত্রিসভায় সংশোধিত আইনের খসড়া অনুমোদিত হওয়ার পর এক আলোচনা অনুষ্ঠানে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ব্যাংকগুলো দখলে রেখে লুটপাট’ চালাতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

বর্তমান আইনে বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালকরা তিন বছর করে দুই মেয়াদে ছয় বছর পরিচালক থাকতে পারেন। প্রস্তাবিত আইনে কোনো কোম্পানির পরিচালক একনাগাড়ে নয় বছর থাকতে পারবেন।

বর্তমানে একই সময়ে এক পরিবারের দুইজনের বেশি সদস্য পরিচালক পদে থাকতে পারেন না। ওই ধারা সংশোধন করে এক পরিবার থেকে চারজন পরিচালক করার সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই বিষয়টি তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “অর্থাৎ তারাই যখন সব ব্যাংক দখল করে নিয়েছে, এখন তাদের পরিবারের চারজন করে পরিচালক থাকবেন এবং সেই ব্যাংকিং ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গোটা অর্থনীতিকে তারা লুট করে ছেড়ে দেবেন।”

“সরকার দেশের অর্থনীতিকে রসাতলে নিয়ে গেছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা একেবারে শেষ হয়ে গেছে,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।

বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ না করায় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার উষ্মা প্রকাশের বিষয়টি তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত জরুরি কথা বলেছেন, সত্য কথা বলেছেন। যে কথাগুলো আমরা বার বার বলে আসছি, এদেশের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন নয়। এর উপরে প্রশাসন চাপ নিয়ে বসে আছে, সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে।”

বিএনপিবিহীন সংসদ নিয়ে তিনি বলেন, “সরকারেরই একটা গৃহপালিত বিরোধী দল দিয়ে একটা পার্লামেন্ট আছে যেখানে কোনো কিছুরই জবাবদিহি দেওয়া হয় না।

“অর্থাৎ গণতন্ত্রের লেশমাত্র এখানে নেই। এই দেশে পুরোপুরিভাবে একনায়কতন্ত্র চলছে, ফ্যাসিবাদ চলছে। সেইজন্যই আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বেশি সখ্য স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে।”

আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচন একতরফা করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে ফখরুল বলেন, “আপনারা একা খেলবেন, একা আপনারা রেফারি হবেন, মাঠ দখল করে রাখবেন, সেই নির্বাচন তো হবে না।

“লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন এদেশে হতে হবে, অন্য কোনো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না।”

বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ার পর্যায়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের চাওয়ার প্রতিক্রিয়াও জানান বিএনপি মহাসচিব। 

“সিঙ্গাপুরে গণতন্ত্র নেই, মানুষ সেখানে তাদের নিজেদের কথা বলতে পারে না। মালয়েশিয়াতেও নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র। এদেশের মানুষ কোনোদিন ওই সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে না।”

বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের এই কর্মীসভায় বক্তব্যে ফখরুল ভোটের অধিকারের আন্দোলনের জন্য নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে নামার আহ্বান জানান।

ঢাকা মহানগর উত্তরের নতুন সভাপতি এম এ কাইয়ুমকে সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ইতালীয় নাগরিক হত্যাকাণ্ডে জড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

কাইয়ুম মালয়েশিয়া থেকে টেলিফোনে এই সভায় যুক্ত হন। তার বক্তব্য সবাইকে মাইকে শোনানো হয়।

মহানগর উত্তরের সহসভাপতি মুন্সি বজলুল বাছিদ আনজুর সভাপতিত্বে কর্মীসভায় মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমান উল্লাহ আমান, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, কাজী আবুল বাশার, আহসান উল্লাহ হাসান, সাহাব উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম নিরব, এসএম জাহাঙ্গীর, ইয়াসীন আলী, পেয়ারা মোস্তফা, সাজ্জাদ হোসেন রুবেল বক্তব্য রাখেন।