সরকার ‘বিএনপি ফোবিয়ায়’: ফখরুল

সরকার বিএনপিকে নিয়ে এক ধরনের ‘আকঙ্কে’ ভুগছে বলে মন্দব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2017, 01:45 PM
Updated : 7 May 2017, 01:45 PM

রোববার বিকালে ঢাকা দক্ষিণ মহানগরের এক কর্মীসভায় তিনি বলেন, “বিএনপি নাকী নাই, বিএনপির নাকী অস্তিত্বই নাই, বিএনপি নাকী ভীতু রাজনৈতিক দল- এসব কথা বলে। তাহলে আপনারাদের বক্তব্য শুনলে, আপনাদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে সারাক্ষণ বিএনপিভীতি কেন, সবসময় বিএনপি ফোবিয়াতে ভোগেন কেন। দুঃস্বপ্নে ভোগেন কেন যে বিএনপি ক্ষমতায় আসছে।

“আপনাদের নেতারা কর্মীদেরকে বলেছেন যে, ভালো করে কাজ করেন, ক্ষমতায় যদি যেতে না পারেন, তাহলে টাকা-পয়সা যা কামিয়েছেন, তা নিয়ে পালাবারও পথ পাবেন না। তাই হবে, তারা পালাবারও পথ খুঁজে পাবে না।”

রাজধানীর গুলিস্তানে কাজী বশির (মহানগর নাট্যমঞ্চ) মিলনায়তনে দক্ষিণ মহানগরের উদ্যোগে এই কর্মীসভা হয়।

একাদশ নির্বাচন

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি ফের তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে যেসব আইন তৈরি করছেন, সেগুলো আপনাদের জন্য, সংবিধান পরিবর্তন করছেন তাও আপনাদের জন্য কাটা-ছেড়া করে। আর বলছেন সংবিধানের অধীনেই নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচন তো আমরা করতে চাই। কিন্তু সেই নির্বাচনে আপনারা বাধার সৃষ্টি করে রাখবেন, আপনারা একা খেলতে পারেন সেই অবস্থা তৈরি করে রাখবেন।

“আমরা যারা বিরোধী দলে আছি, আমরা কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবো না, তাহলে কী আহম্মক যে, সেই নির্বাচন করতে যাব? আমরা সেই নির্বাচনে যাব, যে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে। যে নির্বাচনে সকলের সমান সুবিধা থাকবে। অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন হতে হবে।”

কক্সাবাজারের মেরিন ডাইভ প্রসঙ্গে

শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পটি খালেদা জিয়ার সময়ে শুরু হয়েছিল বলে মন্তদব্য করেন ফখরুল।

চার দলীয় জোট সরকারের বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী ফখরুল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কালকে (শনিবার) কক্সবাজার গিয়েছিলেন। সেখানে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত নতুন মেরিন ড্রাইভ রাস্তার উদ্বোধন করলেন তিনি। আওয়ামী লীগ প্রচার করে যেন প্রধানমন্ত্রী নতুন একটা উন্নয়নের কাজ করেছেন।

‘‘ এই মেরিন ড্রাইভ শুরু হয়েছিল বিএনপি সরকারের খালেদা জিয়ার আমলে। শুধু তাই নয়, বলা হচ্ছে এয়ারপোর্ট নতুন করে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পরিণত করেছেন, সেটারও কাজ শুরু হয়েছিলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ারই আমলে।”

প্রধানমন্ত্রী শনিবার কক্সবাজারে এক সমাবেশে দেওয়া ভাষণে সেখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের হত্যার জন্য বিএনপিকে দায়ী করেন।

২০১৪ সালে নির্বাচন বানচাল ও এর পরে সরকার পতনের আন্দোলনে গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার কথাও বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, “আওয়ামী লীগ ১৯৭৫ সালে গণতন্ত্র হত্যা করেছে, একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে। আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসেননি। জনগণ তাকে নিয়ে এসেছে, সৈনিকরা তাকে নিয়ে এসেছে এবং তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ আপনারা গণতন্ত্র ধবংস করেন আর বিএনপি আবার গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করে।”  

ভিশন ২০-৩০

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা ভিশন ২০-৩০ অর্থাৎ ২০৩০ সালে বিএনপি কী করবে এটা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আগামী ১০ তারিখ জানাবেন জাতির সামনে। সে সম্পর্কে উনারা (আওয়ামী লীগের নেতারা) কী বলছেন এটা নাকী ধাপ্পাবাজি। ইতিবাচক রাজনীতিকেও তারা ধাপ্পাবাজি মনে করেন।”

হাওয়া ভবন প্রসঙ্গে

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময় আলোচিত ‘হাওয়া ভবন’ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বলতে শুরু করেছেন বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নাকী হাওয়া ভবন তৈরি হবে।

“আমি আপনাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই, আপনারা এর আগে ১৯৭২-৭৫ সালে যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন এদেশের মহান নেতা মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আপনাদের দুর্নীতি-লুন্ঠনের কারণে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, হাজার-লক্ষ মানুষ না খেতে পেয়ে মারা গিয়েছিল, সেদিন তিনি (মওলানা ভাসানী) বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের নামটা পাল্টিয়ে এখন রাখা উচিৎ ‘নিখিল বাংলাদেশ লুটপাট সমিতি’। আজকে আওয়ামী লীগ লুটপাট সমিতিতে পরিণত হয়েছে।”

তিনি বলেন, “তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) হাইওয়ে বানাচ্ছে, উড়াল সেতু বানাচ্ছে, নতুন মতিঝিল হীরা-ঝিনুক দিয়ে অনেক কিছু বানাচ্ছে রং দিয়ে। আজকে যে উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে, সেই উন্নয়ন কী? উন্নয়ন হচ্ছে তাদের লুন্ঠন ও লুটপাট। অন্যদিকে সাধারণ মানুষরা না খেয়ে থাকছে আর তারা সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে।”

বিদেশে অর্থ পাচারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “কয়েকদিন আগে পত্রিকায় বেরিয়েছিল, গত কয়েক বছেরে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। ২০১৪ সালে ৭৪ হাজার কোটি টাকা এদেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। কারা এগুলো লুট করছে, আওয়ামী লীগের লোকেরা লুট করছে, আওয়ামী লীগের নেতারাই লুট করছে, আওয়ামী লীগের বড় বড় সাহেবরা তারা লুট করে বিদেশে অর্থ পাচার করে দিচ্ছে। আর তারা বলেন সততার কথা।”

সারাদেশে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও নিপীড়নের কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “আজকে সারা দেশটাকে তারা একটা অন্ধকারের গহ্বরে পরিণত করেছে। আমাদের নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, খায়রুল কবির খোকন কারাগারের অন্ধকারে রয়েছেন। এরকম অসংখ্য নেতাকর্মী কারাগারে।”

দক্ষিণ মহানগর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে ও  সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের পরিচালনায় কর্মী সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ, শিরিন সুলতানা, মহানগর দক্ষিণের শামসুল হুদা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, মহানগর যুবদলের গোলাম মওলা শাহিন, মহানগর ছাত্রদলের খন্দকার এনামুল হক, জাকির হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।