আ. লীগ ক্ষমতায় না থাকলে টাকা-পয়সা নিয়ে পালাতে হবে: কাদের

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দল ক্ষমতায় না থাকলে এখন তারা যে টাকা-পয়সা করছেন তা নিয়ে তাদের পালাতে হবে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 April 2017, 04:52 PM
Updated : 29 April 2017, 04:52 PM

শনিবার চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের বলেন, “পাওয়ার, ক্ষমতা বেশি দিন থাকে না। অনুরোধ করি, ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না। এটা আমানত। টাকা পয়সা বেশি দিন থাকবে না।

“আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে টাকা-পয়সা নিয়ে পালাতে হবে। তা কি ভাবেন না? দল যদি ক্ষমতায় না থাকে, এখন যে টাকা- পয়সা রোজগার করছেন, তখন এই টাকা নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হবে। এটা ভাবতে হবে।”

নগরীর পাঁচলাইশে একটি কমিউনিটি সেন্টারে ওই সভায় দলে নতুন সদস্য নেওয়ার ক্ষেত্রেও নেতাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “পকেট ভারী করার জন্য খারাপ লোকদের দলে টানবেন না। দুঃসময় আসলে তাদের হাজার পাওয়ারের বাতি দিয়ে খুঁজে পাবেন না।”

চাটুকার-মোসাহেবদের কাছ থেকে দূরে থাকার আহ্বানও জানান তিনি।

কোন্দল মিটিয়ে দলের ঐক্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ হলে আমাদের রক্ষা করার আর কেউ থাকবে না। ঐক্যবদ্ধ থাকলে বাইরের শক্তিকে আমরা মোকাবেলা করতে পারব। আপন ঘরে যদি শত্রু থাকে তার আর বাইরের শত্রুর দরকার নেই।”

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের মধ্যে দ্বন্দ্ব আর সামনে দেখতে চান না বলে মন্তব্য করেন কাদের।

‘ছেলের মতো’ নাছিরের সঙ্গে বিবাদে না জড়াতে মহিউদ্দিনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “দুঃসময়ে ঐক্যবদ্ধ চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগই পথ দেখিয়েছে। আমি মনে করি, চট্টগ্রামের সবার মুরুব্বি মহিউদ্দিন চৌধুরী।

“…নাছির মহিউদ্দিন ভাইয়ের ছেলের মতো। সে কোনো ভুল করলে ঘরে ডেকে নিয়ে শাসন করবেন।”

ওবায়দুল কাদের বলেন, “সুসংগঠিত, স্মার্ট, আধুনিক আওয়ামী লীগ হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাই।”

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে তার দলের কোনো চুক্তি হয়নি।

“তাদের সাথে আমরা কোনো চুক্তি করিনি। তাদের মূল ধারায় আনতে স্বীকৃতি দিয়েছি। স্বীকৃতি আর এলায়েন্সের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।”

হেফাজতকে নিয়ে বিএনপি ষড়যন্ত্র করেছিল দাবি করে তিনি বলেন, “তারা হেফাজতকে নিয়ে আগামী ৫ মে আরেকটা শাপলা চত্বর বানানোর খায়েশ ছিল। তা আপাতত চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে। শফী হুজুর নিজেও তো এখন বলেন ‘জঙ্গিবাদ ইসলামের শত্রু’।”

প্রতিনিধি সভায় দলের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল- আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম ও প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।

দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসহাক মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী  নওফেল, সংসদ সদস্য এম এ লতিফ ও সাবিহা মুছা, কেন্দ্রীয় নেতা মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনও মঞ্চে ছিলেন।

প্রতিনিধি সভায় চট্টগ্রাম মহানগরের অধীন বিভিন্ন থানা কমিটির নেতারা দলকে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠিত করা, অনুপ্রবেশকারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ, এলাকার সংসদ সদস্যদের সঙ্গে নেতাকর্মীদের দূরত্ব কমানোর দাবি তোলেন।

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কাকে কোথায় নমিনেশন দেওয়া হবে, কোনো ঠিক নেই। আমাকেও না দিতে পারে। যাকেই নৌকা প্রতীকে ইলেকশন করতে দেওয়া হবে, তার সাথে আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে।”

কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, “তৃতীয়বারের মতো দলকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। নিজেদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকলে তা আলোচনার টেবিলেই সমাধান করতে হবে।”

প্রতিনিধি সভায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়াম লীগের অধীন ১৫ থানা ও ৪৪টি ওয়ার্ডসহ মিলিয়ে আটশ’র মতো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন বলে দলের এক নেতা জানিয়েছেন।