সরকার বকধার্মিক সেজেছে: রিজভী

হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকার ভোটের জন্য সখ্য গড়েছে দাবি করে একে ক্ষমতাসীনদের ‘বকধার্মিকতা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপি জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2017, 04:46 PM
Updated : 24 April 2017, 04:46 PM

সোমবার দুপুরে রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সরকারের পায়ের তলায় মাটি সরে গিয়ে চোরাবালির মধ্যে ডুবে যাচ্ছে, যার কারণে এখন তারা বকধার্মিক সাজছে।

“হেফাজতের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নিরীহ ছাত্র ও আলেমদের ওপর পৈশাচিক রক্তাক্ত আক্রমণ চালিয়ে যে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে, তা দেশবাসী ভুলে যায়নি। বিশেষ নজরদারির নামে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের জঙ্গিদের সাথে যুক্ত করে যেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দারা দলন-পীড়ন করে হয়রানি ও জুলুম করেছে, তা নজিরবিহীন।”

২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ঢাকার মতিঝিলে তাণ্ডব চালানো কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামকে সরকার রাজধানীছাড়া করলেও গত ১১ এপ্রিল কওমির আলেম-ওলামাদের সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী কওমির দাওরায়ে হাদিস সনদকে সাধারণ শিক্ষার সমমান মর্যাদার ঘোষণার পাশাপাশি হেফাজতের দাবি করা সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে রোমান যুগের ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘লেডি জাস্টিস’র আদলে একটি ভাস্কর্য অপসারণেরও আশ্বাস দেন।

শুধুমাত্র ভোটের জন্য সরকার সেই হেফাজতের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতে চাচ্ছে বলে মনে করেন বিএনপি নেতা রিজভী।

তিনি বলেন, “এটা ভোটারবিহীন সরকার ও সরকার প্রধানের আপোষকামী অনৈতিক রাজনীতির এক কলঙ্কজনক দৃষ্টান্ত। অতীতেও ভোটের সময় বর্তমান সরকার প্রধান ধর্মীয় লেবাস পরিধান করে জনগণকে ধোঁকা দিয়েছেন, ভোট শেষ হওয়ার পর লেবাস খুলে স্বমূর্তি ধারণ করেন।”

একে সরকার প্রধানের ‘দ্বিচারিতার রাজনীতি’ আখ্যায়িত করে এ ‘দ্বিচারিতার রাজনীতি’ যাতে কেউ ধরতে না পারে সেজন্য সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলাচ্ছে বলে অভিযোগ রিজভীর।

সারা দেশে বিশেষ অভিযানের নামে দলের পুলিশ নেতাকর্মীদের ফের ‘গণগ্রেপ্তার’ করছে দাবি করে তিনি বলেন, “কোনো ইস্যু বা আন্দোলন সংগ্রাম কিংবা কোনো কারণ ছাড়াই বিশেষ অভিযানের নামে দেশব্যাপী বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের আবারো গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

“নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ ও ডিবি পুলিশ ব্যাপক তাণ্ডব চালাচ্ছে। বাড়িতে নেতাকর্মীদের না পেলে তাদের পরিবারের সদস্যদের লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। এমনকি শিশুরাও রক্ষা পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিপীড়ন থেকে।”

রিজভী বলেন, “কেন এই গ্রেপ্তার অভিযান? কেন এই মিথ্যা মামলা দায়ের? গণবিরোধী সরকার যখন গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, যখন আন্দোলন সংগ্রামকে ভয় পায় তখন বেপরোয়াভাবে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়, গ্রেপ্তার করে।”

এ ধরনের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে শিগগির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান বন্ধের আহ্বান জানান বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, চুয়াডাঙ্গা, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে ব্যাপক ধড়পাকড় ও হয়রানি-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন রিজভী।

তিনি বলেন, “বিশেষ অভিযানের নামে গতকাল (রোববার) নয়া পল্টনে ঢাকা মহানগর কার্যালয় থেকে ফেরার পথে ৯ নং ওয়ার্ড নেতা শামসুদ্দিন বকুল ও মো. হারুণকে, জামালপুরে ১৮৯ জন, সাতক্ষীরায় ৪১ জন, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুরে শতাধিক, বাগেরহাটে ৩৯ জন, পঞ্চগড়ে ৪ এর অধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। শিল্পনগরী টঙ্গী থেকে ২০ দলীয় জোটের ১৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়ে্ছে। মেহেরপুরে ২০০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও ৭ জনকে আটক করা হয়েছে।

“কেবল তাই নয়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় কুমিল্লায় নির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি সিটির নির্বাচিত কাউন্সিলর একরাম হোসেন বাবলুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

এছাড়া গত ২২ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড নেতা শওকত আলী ফরাজী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষমতাসীনরা জড়িত অভিযোগ এনে এরও নিন্দা জানান রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মোরতাজুল করীম বাদরু, মহানগর উত্তরেরর সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজুসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।