আওয়ামী লীগকে ‘পরাজিত করেছেন’ শেখ হাসিনা

হেফাজতে ইসলামের দাবি মানার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগকেই আদর্শিকভাবে ‘পরাজিত করেছেন’ বলে মন্তব্য এসেছে উদীচীর সমাবেশ থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 April 2017, 04:45 PM
Updated : 7 May 2017, 03:35 PM

সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভাস্কর্য সরানো এবং কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগে উদীচীর প্রতিবাদ সমাবেশে এই মন্তব্য করেন প্রকাশক রবীন আহসান।

সমাবেশ থেকে ভাস্কর্য অপসারণ এবং পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান ‘সঙ্কুচিত’ করা প্রতিরোধের আহ্বানও জানানো হয়।

মঙ্গলবার ওলামাদের সঙ্গে বৈঠকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরানো এবং কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে স্নাতকোত্তর মর্যাদা দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

একে বিভিন্ন বাম দল ডানপন্থিদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেত্রীর আপস হিসেবে দেখলেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশের মানুষের অনুভূতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা।

উদীচীর সমাবেশে রবীন আহসান বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাহক দাবিকারী প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় ভাস্কর্য সরানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এটা আমাদের মাথা নত করার ইতিহাস হল।

“হেফাজতিরা সারাদেশের ভাস্কর্য সরানোর যে পরিকল্পনা এঁটেছে, সেটার প্রথম বিজয় এটা। অপরাজেয় বাংলাসহ সব ভাস্কর্য সরানোর মাধ্যমে সেই পরিকল্পনা তারা বাস্তবায়ন করে ছাড়বে।”

বঙ্গবন্ধুকন্যাকে সতর্ক করে তিনি বলেন, “আপনি ভাবছেন এসব করে মৌলবাদীদের ভোট পাবেন। আমরা বলতে পারি, আপনি একটি ভোটও পাবেন না তাদের। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগকে তাদের কাছে পরাজিত করেছেন। বিসর্জন দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জনকে।”

উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক সফিউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, “আপনি এতদিনে কেন ভাস্কর্যের বিষয়ে বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করছেন? হেফাজত তো আগে বলেছে, হেফাজতের আগে আপনি বলেন নাই কেন?”

চট্টগ্রামে পহেলা বৈশাখের চিত্র নষ্ট করার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা দুর্জয় প্রত্যয় নিয়ে বলছি, আমরা মঙ্গলযাত্রা বের করবই। আমরা কখনও কোনো বাধা বিপত্তিকে মানব না।”

সমাবেশে যুব ইউনিয়নের সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল বলেন, ইসলামী দলগুলোর ভোট পাওয়ার আশায় আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্ত নিলেও তা বুমেরাং হবে।

“প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলব, আপনি হেফাজতের কথায় যত মায়াকান্না কাঁদেন না কেন, তারা আপনাকে একটি ভোটও দিবে না। বরং হেফাজত তোষণের কারণে ৩৮ শতাংশ থেকে ভোট ২০ শতাংশে নেবে আসতে পারে।”

গণভবনের অনুষ্ঠানে শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে কুশল বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

আওয়ামী লীগের জোট শরিক হিসাবে সরকারে থাকা বাম দলগুলোকে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান খেলাঘর আসরের কেন্দ্রীয় নেতা আতিকুল হক।

আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যক্রম স্বৈরশাসক আইয়ুব, এরশাদের শাসনামল মনে করিয়ে দিচ্ছে মন্তব্য করে জি এম জিলানী শুভ বলেন, “তারা ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য ধর্মকে হাতিয়ার করেছিল। বর্তমানে শেখ হাসিনাও সেটা করছেন।”

গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক জীবনানন্দ জয়ন্ত সমাবেশে বলেন, “হেফাজতকে তোষণ করে কিছুদিন ক্ষমতায় হয়ত টিকে থাকা যাবে, দীর্ঘ মেয়াদে কোনো লাভ হবে না। তারা সেই চেতনাকেই লালন করে।

“হেফাজতিরা তাদের জঙ্গিবাদের আগ্রাসী মনোভাব ইতোমধ্যেই দেখিয়েছে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে। প্রধানমন্ত্রী, আপনি তাদের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দিয়েছেন, তারা আপনার গলায় সাপের মালা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।”

উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপনের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি বদিউর রহমান, হাবিবুল আলম, সহ-সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, ইকবালুল হক খান, ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন মামুন বক্তব্য দেন।