খালেদার মতো চুপি চুপি কিছু করিনি: হাসিনা

ভারতের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে খালেদা জিয়ার সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি কিছু না লুকিয়ে সব প্রকাশ্যেই করেছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 April 2017, 06:48 PM
Updated : 12 April 2017, 06:48 PM

ভারত সফর নিয়ে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর বুধবার তার প্রতিক্রিয়া নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

সংবাদ সম্মেলনে তার বক্তব্য নিয়ে গণভবনে আওয়ামী লীগের কাযনির্বাহী সংসদের সভায় প্রতিক্রিয়া জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “বিএনপি নেত্রী আজকে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জনগণকে নাকি সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখেই আমরা সমঝোতা স্মারক করেছি। আমি শুধু তাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি, ডিফেন্স চুক্তি যখন চীনের সঙ্গে করেছিল, তখন কার সাথে আলোচনা করে উনি করেছিলেন। কেউ তো দেখেনি।

“অন্তত উনার মতো তো আমরা চুপকে চুপকে করি নাই, চুপি চুপি করি নাই।”

ভারতের সঙ্গে চুক্তি করার আগে তা মন্ত্রিসভায় তোলা হয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে করেছেন এবং চুক্তির পর যৌথ বিবৃতিতে তা প্রকাশ করা হয়েছে।

“এখন কেউ যদি চোখ থাকিতে অন্ধ হয়, তাহলে আমার কিছু করার নেই। উনার অবস্থা হয়েছে উনি চক্ষু থাকিতে অন্ধ, আর যার চক্ষু থাকিতে অন্ধ তার কপাল মন্দ।”

শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি-সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশই লাভবান হয়েছে।

“কারণ আমরা সেখান থেকে বিদ্যুতও আনতে পারব, পাইপলাইনে ডিজেল নিয়ে আসব, এলএনজি নিয়ে আসার মাধ্যমে গ্যাসের সমস্যার সমাধান হবে।”

এক শতাংশ সুদে ৫০০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার কথাও বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া

তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ায় খালেদা জিয়ার সমালোচনারও জবাব দেন শেখ হাসিনা।

“উনি বলছেন,আমি তিস্তার পানি আনতে পারিনি। খালেদা জিয়াও তো ক্ষমতায় ছিল। সে ক্ষমতায় থাকতে তিস্তার পানি আনতে পারে নাই কেন? সে জবাবটা আগে দিক।”

শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকার সময় তিস্তা নদীতে গজলডোবায় যখন ভারত ব্যারেজ করলেও তখন কোনো প্রতিবাদ জানানো হয়নি বলে এখন তার খেসারত বাংলাদেশকে দিতে হচ্ছে।

১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া ভারত সফরে গিয়ে গঙ্গার পানির কথা বলতে ভুলে যাওয়ার কথাও মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।

“এতই খোসামোদি, তোসামোদি আর তাঁবেদারিতে ব্যস্ত ছিল যে গঙ্গার পানির কথা উল্লেখই করেন নাই।”

স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়েও তিনি বলেন, বিএনপি তা পারেনি কেন?

“এই ব্যর্থতার কি জবাব সে জাতির সামনে দেবে? তার ব্যর্থতা তার স্বামীর ব্যর্থতা।”

“সমুদ্রসীমা নিয়ে তারা কি কখনও ভারতের কাছে কোনো দাবি তুলেছে? জলসীমার অধিকারের কথা কি তারা তুলে ধরেছে? ভারতের পদলেহনে তারা এতই ব্যস্ত ছিল যে, তারা তুলতেই সাহস পায়নি?”

৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রশ্ন তোলার প্রতিক্রিয়ায় তাকে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

গণভবনে আওয়ামী লীগের কাযনির্বাহী সংসদের সভায় শেখ হাসিনাসহ নেতারা

তখন সরকার থেকে বিএনপির পদত্যাগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “সত্যিই যদি সেই (৫ জানুয়ারির) নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হত, আর জনগণ যদি ভোট না দিত তাহলে উনি যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন সেই আন্দোলনে তো নির্বাচন বন্ধ হয়ে যেত। আর আমাদেরকেও পদত্যাগ করতে হত।”

দশম সংসদ নির্বাচনের পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের চেয়ারপারসন এবং সাবের হোসেন চৌধুরীর আইপিইউর সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার কথা তুলে ধরে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, “কই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কেউ তো এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নাই।”

প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে খালেদা জিয়া যে প্রশ্ন তুলেছেন, তার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রতিরক্ষা চুক্তির ফলে আমাদের ইনস্টিটিউটগুলোর কারিকুলাম, সিলেবাস সবই নাকি নষ্ট হয়ে যাবে। আমি জিজ্ঞেস করতে চাই কারিকুলাম, সিলেবাস কী- এসব উনি জানেন? তিনি জানেন কি না, আমার প্রশ্ন।”

ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশের অশুল্ক বাধার বিষয়ে খালেদা জিয়ার কথার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ভারতের যেসব পণ্যে ৩০০, ৪০০ শতাংশ শুল্ক ছিল, এক কথাই সে শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়ে বাংলাদেশকে ভারতীয় পণ্যের বাজারে পরিণত করেছিল।

“আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ভারতে বাংলাদেশের পণ্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার আমরাই অর্জন করেছি। যারা বাজার নষ্ট করে তারাই আবার প্রশ্ন তোলে!”

গণভবনে বৈঠকে আওয়ামী লীগের কাযনির্বাহী সংসদের সদস্যরা

ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বকে ‘বায়বীয়’ বলার ব্যাখ্যা খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চেয়েছেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে বলে বিএনপি চেয়ারপারসন যে মন্তব্য করেছেন তার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ধর্ম আমি পালন করি, ধর্ম আমি মেনে চলি। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করি না। রাজনীতি বিএনপিই করে, খালেদা জিয়াই করে। মুখে বিসমিল্লাহ বলে দুনিয়ার মিথ্যা কথা বলে। আজকে কওমি মাদ্রাসার সনদের ব্যাপারে ঘোষণা দিয়েছি বলে উনার গায়ে জ্বালা ধরেছে।

“উনারা নাকি ধর্ম পালন করে, আমি নাকি ধর্ম পালন করি না। এরকমই ধর্ম পালন করে যে, এক হাতে গ্লাস, আরেক হাতে ধর্ম। বিসমিল্লাহ বলে একঢোক খেয়ে… আর কোরআন শরিফ পুড়িয়ে, মানুষ হত্যা করে।”

সশস্ত্র বাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার আওয়ামী লীগ করেছিল বলে খালেদা জিয়ার বাকশালের উদাহরণ দেওয়ার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “তার স্বামী দরখাস্ত করে বাকশালের সদস্যপদ নিয়েছিলেন।”