হাসিনা ভারতকে সব দিয়ে ফিরেছেন খালি হাতে: খালেদা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের কাছ থেকে আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই আনতে পারেননি বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 April 2017, 10:43 AM
Updated : 12 April 2017, 10:43 AM

তিনি বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রীকে কতগুলো আশ্বাস নিয়ে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, অতীতের ধারাবাহিকতায় ভারতের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ও প্রস্তাবিত বিষয়গুলোতেই কেবল অনেকগুলো চুক্তি ও সমঝোতা সই করা হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে দেশের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে বুধবার গুলশানে নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা।

নিজের ভারত সফর নিয়ে এক দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “এই সফরে আমি সম্পূর্ণ তৃপ্ত, ফলপ্রসূ হয়েছে। সম্মানের দিক থেকে আমরা সমান-সমান, এটা তৃপ্তির। এখানে হতাশার কিছু নেই। এই সফর সম্পূর্ণ সফল হয়েছে।”

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর সফর চরম ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, “এই সফরকে দেশবাসী কেবল দেওয়ার এবং কিছু না পাওয়ার এক চরম ব্যর্থ সফর বলেই মনে করে।”

নরেন্দ্র মোদীর জমানায় ভারতে শেখ হাসিনার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চুক্তি, সমঝোতা স্মারক মিলিয়ে ৩৫টি দলিল সই হয়।

“শেখ হাসিনা বলেছেন, এই সফরে তিনি তৃপ্ত। কিন্তু দেশের জনগণ এই সফরের ফলাফলে তৃপ্ত তো নয়ই, বরং আতঙ্কিত। তারা জাতীয় স্বার্থবিরোধী একগাদা চুক্তি ও সমঝোতা চায়নি। হিসাবের পাওনা চেয়েছে,” বলেন খালেদা।

ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক নিয়ে নিজের শঙ্কাও প্রকাশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

এই ধরনের সমঝোতা বা চুক্তি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আপত্তির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “তা সত্ত্বেও জনসাধারণের মতামতকে উপেক্ষা করে এই ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। এর সুদূরপ্রসারী বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে দেশের জনসাধারণের সাথে আমরাও শঙ্কিত।”

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার দল ক্ষমতায় গেলে দেশের স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি ও সমঝোতা পুনর্বিবেচনা করবে।

দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস করতে শুল্প ও অশুল্ক বাধাগুলো দূর করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সফরে কোনো পদক্ষেপ পাননি বলে জানান খালেদা জিয়া।

পাট রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতের ‘এন্টি ডাম্পিং ক্লল’ তুলে না নেওয়া, সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সফরে কোনো পদক্ষেপ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

‘বৈঠকে মমতা থাকায় মর্যাদা ক্ষুণ্ন’

শীর্ষ বৈঠকের অনুষ্ঠানে ভারতের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে বলে দাবি করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

তিনি বলেছেন, “তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ভারতের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে দুই দেশের মধ্যকার আলোচনায় সংশ্লিষ্ট করায় বাংলাদেশের সার্বভৌম মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে আমরা মনে করি।”

বাংলাদেশে-ভারত তিস্তা চুক্তি মমতার আপত্তির কারণে আটকে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে পানির সঙ্কট তৈরি করবে দাবি করে অভিন্ন এই নদীর পানি বণ্টন চুক্তিতে তার আপত্তি।

খালেদা বলেন, “ভাটির দেশ হিসেবে সকল আন্তর্জাতিক নদীর পানি ন্যায্য হিস্যা আমাদের অধিকার। এটা কারও দয়া-দাক্ষিণ্য বা করুণার বিষয় নয়। তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি দুই দেশের সার্বভৌম দেশের মধ্যকার বিষয়। এজন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকেই বিষয়টি ফয়সালা করতে হবে।”

তিস্তা চুক্তিতে কোথায় সঙ্কট- তা তুলে ধরতে সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার অনুরোধ করেন খালেদা জিয়া।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ তার সময়ে যৌথ নদী কমিশনের বিভিন্ন বৈঠকের কার্যবিবরণি তুলে ধরে ভারতে অনাগ্রহের বিষয়টি জানান।

প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প প্রসঙ্গে খালেদা বলেন, “এই প্রকল্পের ব্যাপারে ভারতের সম্মতি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে শেখ হাসিনা এখন এই প্রকল্পের উপযোগিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। এখন আরও পিছিয়ে গিয়ে প্রকল্পটির স্থান পরিবর্তন ও নতুন করে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ভারতীয় প্রস্তাব তিনি (শেখ হাসিনা ) মেনে নিয়েছেন।”

বিচার বিভাগে সহযোগিতা নিয়ে তিনি বলেন, “বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জিত মান ও স্বাতন্ত্র সমঝোতার নামে ব্যাহত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, মীর নাসির, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শাহজাহান ওমর, রুহুল আলম চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, আমানউল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুল কাউয়ুম, শামা ওবায়েদ, খালেদার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান উপস্থিত ছিলেন।

২০ দলীয় জোটের দলগুলোর নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আন্দালিব রহমান পার্থ, সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, টিআইএম ফজলে রাব্বী, আবদুল হালিম, এম এ রকীব, আবদুল করীম, শফিউল আলম প্রধান, আবদুল করীম আব্বাসী, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জেবেল রহমান গনি, আজহারুল ইসলাম, আবু তাহের চৌধুরী, গরীবে নেওয়াজ, সাঈদ আহমেদ, মহিউদ্দিন ইকরাম, মাওলানা শফিকউদ্দিন, সাইফুদ্দিন মনি।

সংবাদ সম্মেলনের পর ২০ দলীয় জোটের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বৈঠক বসেন খালেদা জিয়া। ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে করণীয় ঠিক করতে আলোচনার জন্য এই বৈঠক বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।