প্রধানমন্ত্রীর সফরে আশা পূরণ হয়নি: ফখরুল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে সফরে তিস্তা চুক্তির জট না খোলায় বাংলাদেশের মানুষের ‘আশা পূরণ হয়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 April 2017, 12:21 PM
Updated : 11 April 2017, 01:57 PM

তিস্তাপারের মানুষ ফখরুল মঙ্গলবার এক আলোচনা সভায় বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ যা চেয়েছিল, যে নদীর ওপর নির্ভর করে কোটির উপরের বেশি মানুষের জীবন চলে, সেই নদীর পানির একটা চুক্তি হবে।

“দুঃখজনক হল সেটা হয়নি। হয়নি শুধু নয়, প্রধানমন্ত্রী নিজেই তার সফরের ফলাফল সম্পর্কে বলেছেন, ম্যায় পানি মাঙ্গা, মুচকো বিদ্যুৎ মিলা। কুচ তো মিলা। অর্থাৎ উনি নিজেই বলেছেন, মেলেনি।”

“শুধু কুচ মিলেছে, সেটা বিদ্যুতের কথা বলেছেন, তাও আবার পয়সা দিয়ে কিনতে হবে। উনি নিজেই বলে দিয়েছেন। আমাদের আর কিছু বলার আছে বলে আমি মনে করি না।”

ভারত থেকে ফিরে শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের আগে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভায় একথা বলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “উনারা (সরকার) চিৎকার করে বলছেন, দুই দেশের সম্পর্ক উচ্চতর পর্যায়ে। একবারে স্পিরিচ্যুয়াল লেভেলে চলে গেছে! তো ভালো কথা। আমরা তো মাটির মানুষ আমাদের মাটিতে ফসল ফলাতে হয়, আমাদের নদীতে মাছ তুলতে হয়, জীবন-জীবিকা চালাতে হয়।”

দৈনিক ‘আমার দেশ’ বন্ধের চার বছরপূর্তি উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তারের পর ছাপাখানা পুলিশ আটকে দেওয়ার পর আমার দেশের প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়।

সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “১৯৭৫ সালে যে কাজটি করেছিল, সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে চারটি পত্রিকা রেখেছিল, সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসনের মতো ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেই জায়গা থেকে তারা (আওয়ামী লীগ) তো সরেনি, শুধু তার কৌশলটা পাল্টিয়েছে।

“তখন ছিল সংসদে পাস করিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল। এখন দেখেছেন, পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। একটা একটা করে পত্রিকা-চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যেগুলোই তাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট সত্য কথা বলতে পেরেছে।”

মাহমুদুর রহমানের প্রশংসা করে ফখরুল বলেন, “বর্তমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অন্যতম একজন প্রধান ব্যক্তি যিনি সরকারের ষড়যন্ত্রের কাছে আপস করেননি। যিনি প্রতিবাদ করেছেন, রুখে দাঁড়িয়েছেন এবং তিনি সেই ব্যক্তি যিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েও নতি স্বীকার করেননি, মাফ চাননি আদালতের কাছে। এখানেই তিনি অনন্য।”

বিরোধী দলের উপর সরকারের দমন-পীড়নের সমালোচনাও করে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

গণমাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “শুনেছি, দেশের সংবাদ-মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে ১৮টি কমিটি আছে। প্রতিদিন মিডিয়ার কর্মীদের সাথে আমাদের কথা হয়; তারা বলেন- ‘বিশ্বাস করেন খসরু ভাই, আমরা আর সংবাদকর্মী নাই, আমরা ম্যানেজার হয়ে গেছি, এখন আমাদের নিউজ ম্যানেজ করতে হয়’।”

মাহমুদুর রহমান বলেন, “৪৫ বছরে আমরা স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছি, বাংলাদেশ আর স্বাধীন দেশ নয়- এই বিষয়টি আজকে এখানে যারা উপস্থিত আছেন, সবাইকে বুঝবার জন্য আমি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

“আমি শুধু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বপ্নই নয়, স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের স্বপ্নও দেখি। আমাদের যে লড়াই সেটি ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, বর্তমান ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই-এই দুই লড়াইকে আমাদের এক করতে হবে, রাস্তায় নামতে হবে।”

“বুঝতে হবে বাংলাদেশে হিন্দুবাদ ও শিবসেনার ভারত শাসন করছে, সেই সরকারের প্রতিনিধিরা আজকে বাংলাদেশ শাসন করছে। এদের সরিয়ে দেশে একটি দেশপ্রেমিক সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সকলকে অংশ নেয়ার আমি আহ্বান জানাচ্ছি।”

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি আবদুল হাই শিকদারের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ফরহাদ মজহার, দিলারা চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, রুহুল আমিন গাজী, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, আবদুস শহীদ, ইলিয়াস খান, কাদের গনি চৌধুরী।

বিএনপি নেতা সেলিমা রহমান, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শামীমুর রহমান শামীম, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলও বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক জিন্নাতুন নেসা তাহমিদা বেগম, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, প্রকৌশলী আ ন হ আখতার হোসেন, অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন ডোনার, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, মীর সরফত আলী সপু, তকদির হোসেন জসিম, আবদুল লতিফ জনি, মোরতাজুল করীম বাদরু, সাংবাদিক নেতা এম আবদুল্লাহ, বাকের হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।