মমতার প্রস্তাব ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’: বিএনপি

তিস্তার পরিবর্তে ছোট ছোট চারটি নদীর পানি ভাগাভাগির যে প্রস্তাব পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন তাকে ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ উল্লেখ করে তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 April 2017, 09:54 AM
Updated : 10 April 2017, 09:54 AM

সোমবার দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উনি উনার কথা বলেছেন। এটা কখনও যুক্তিসঙ্গত নয়, এটা শুভঙ্করের ফাঁকি। উনি নানা ধরনের হাওয়াই মিঠাই দেখাবেন, আমরা তো একেবারে ইয়ে করে থাকি না, আমরা তো বুঝি। এটা চলবে না।

“আমরা বলতে চাই, আমাদের সীমান্ত থেকে তিস্তা নদীর যে সমগ্র বেসিন বা সমগ্র অববাহিকায় যে পানির প্রবাহ তার ন্যায্য হিস্যা আমাদের দিতে হবে। পাহাড় থেকে নামে যে পানিটা সেই পানির আমরা পাওনা চাই, এখান থেকে এক বালতি পানি, এক ছটাক পানি প্রত্যাহার করা যাবে না। টোটালটা হিসাব করে আমাদের হিস্যা দিতে হবে।”    

ছয় বছর ধরে ঝুলে থাকা তিস্তা সমস্যার সমাধান হয়নি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরেও। শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যায় বলে তিস্তার পানি বন্টন সম্ভব নয়- এমন যুক্তিতে এখনও অনড় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর পরিবর্তে ছোট ছোট চারটি নদীর পানি ভাগাভাগির বিকল্প একটি প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে।

শনিবার সন্ধ্যায় নয়া দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর বেরিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি তিনি শেখ হাসিনাকে ‘বুঝিয়ে বলেছেন’।

তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মমতার এই প্রস্তাবে রাজী নয় বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।

অন্যদিকে প্রস্তাবটি বাংলাদেশও আমলে নেয়নি বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

বিএনপি তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে যাবে জানিয়ে রিজভী বলেন, “তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য আন্দোলন যেভাবেই করা দরকার আমরা সেটি করবে। আন্তর্জাতিক ফোরাম থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জায়গা আমরা সোচ্চার হব। আমরা সংগ্রাম করব, আন্তর্জাতিক দরবারে আমরা এটা তুলে নিয়ে যাব। আমাদের কূটনৈতিক সংগ্রাম সেটাও চলবে, আমরা সামগ্রিকভাবে আমাদের এই দাবি সোচ্চার রাখব।

শনিবার নয়া দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হায়দ্রাবাদ হাউজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরমধ্যে প্রতিরক্ষা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে।

প্রতিরক্ষা বিষয়ক সমঝোতার বিষয়ে রিজভী বলেন, “সরকার কোনো কিছু না জানিয়ে, জনগণকে অন্ধকারে রেখে এই সমঝোতা স্মারক করেছে। নিশ্চয়ই এটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা করেই তিনি করেছেন। প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারকে শুভঙ্করের ফাঁক রেখেছেন। পাঁচ বছর মেয়াদী সমঝোতা স্মারক করেছেন, কিন্তু এটা নবায়ন করা যাবে। উনারা এরকম একটা মনোভাব পোষণ করেন যেহেতু তাদের (ভারত) সমর্থিত সরকার, তারাই টিকিয়ে রাখবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা নিশ্চয়ই- বন্ধুত্বের জন্য যে উপটোকন দেওয়া দরকার, আপনি ইলিশ মাছ নিয়ে গেছেন, ধুতি নিয়ে গেছেন- আমরা তার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু আমার স্বাধীনতা দিয়ে দেব, আমার সীমান্ত দিয়ে দেব, আমরা পানি দিয়ে দেব, এটা আমরা ছাড়ব না। এর ব্যাপারে আমরা সোচ্চার থাকব।”

আগামী ১৬ এপ্রিল ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার চারটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন উপলক্ষে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতা তৈমুর আলম খন্দকার, আতাউর রহমান ঢালী, সাবেক সাংসদ শাহ মো. আবু জাফর, শামা ওবায়েদ, শাহিন শওকত, মুনির হোসেন, আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।