প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে সোমবার সচিবালয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইনু বলন, “এটা আমরা এখনও আমলে নেইনি, আমলে নেওয়ার দরকার নাই। তিস্তা তিস্তাই, তিস্তার পানি বণ্টন করার জন্য আরেকটি নদীর কোথায় কি হবে সেটা এখানে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না।”
শনিবার সন্ধ্যায় নয়া দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর বেরিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি তিনি শেখ হাসিনাকে ‘বুঝিয়ে বলেছেন’।
তবে শেখ হাসিনার এই সফরে তিস্তার কোনো সুরাহা না হলেও নয়া দিল্লিতে শীর্ষ বৈঠকের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুই এদেশের বিদ্যমান সরকারই এই জট খুলতে পারবে বলে তিনি আশাবাদী।
আওয়ামী লীগ সরকারের শরিক দল জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, “ভারতের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ কখনোই বলেনি যে, তার রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য চুক্তি ঝুলে আছে। এটা তারা তাদের মতো আলোচনা করে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে চুক্তি করা এবং সেই ব্যাপারে মোদী সাহেব এই তিস্তা চুক্তি করবেন সেটাই জয়েন্ট কমিউনিকায় এসেছে।
“সুতরাং তিস্তা চুক্তি করব না- যদি এ ধরণের শব্দ থাকত তাহলে আমরা ধরতাম পিছিয়ে গেলাম। সুতরাং এইবার তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি তবে এই চুক্তি করার পক্ষে দুই পক্ষই একমত। যেহেতু ঐকমত্য আছে সেটা সময়ের ব্যাপার, এই সময়টা নিয়ে আমাদের তর্ক-বিতর্ক আছে। তবে এবার হলে আমরা খুশি হতাম।”
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তিস্তা চুক্তি না হলেও শেখ হাসিনা এই চুক্তির দাবি থেকে সরে আসেননি বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।
“বরং তিনি তিস্তার পানির দাবি আরও জোরালোভাবে তুলে ধরেন এবং একই সাথে তিনি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানির প্রবাহ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানও জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন।”
শেখ হাসিনার ভারত সফরে সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের মধ্যে ২২টির তথ্য সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরে ইনু বলেন, অন্যগুলোর বিষয়েও জানানো হবে, লুকোছাপার কিছু নাই।
সরকার নির্বাহী ক্ষমতার বলে যে কোনো দেশের সঙ্গেই চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক করতে পারে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, চুক্তি সম্পাদনের পরে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন, রাষ্ট্রপতি এটি সংসদে উত্থাপনের ব্যবস্থা করে দেন।
“সুতরাং চুক্তির আগে সরকারকে সংসদে বা জনগণের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে সেই প্র্যাকটিস নাই। খালেদা জিয়ার সরকারও কোনো দিন করেনি, পৃথিবীর কোনো সরকার করে না।”
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে খালেদা জিয়া ঢালাও বক্তব্য দিয়েছেন মন্তব্য করে ইনু বলেন, তার বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে তিনি চুক্তির বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবগত নন এমনকি চুক্তির শিরোনামগুলোও পড়ে দেখেননি। কোন চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ বিঘ্নিত হল বা কোন চুক্তিতে দেশ বিক্রি হল তাও স্পষ্ট করতে পারেননি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ইনু বলেন, “কোন চুক্তিটি দেশের স্বার্থবিরোধী? কোনটিতে দেশ বিক্রি হয়েছে? কোনটিতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হয়েছে? কোনটিতে বাংলাদেশ তার ভূমির উপর এক সেন্টিমিটার সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে?
“আমি আশা করি, বিএনপি এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে কোনটিতে দেশের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়েছে তা উল্লেখ করবে। এটা না করতে পারলে খালেদা জিয়াকে জাতির কাছে ক্ষতা চাইতে হবে।”
২০১৫ সালের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফর পর্যন্ত ভারতে সঙ্গে ৮৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক ছিল বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী।
ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা খাতে তিনটি চুক্তির প্রসঙ্গ তুলে ইনু বলেন, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালিসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে ১০টি চুক্তি রয়েছে।
“বাংলাদেশ ৭০ থেকে ৮০ ভাগ সামরিক সরঞ্জাম চীন থেকে কেনে। ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় আমাদের ক্রয়কে আরও বহুমূখী ও প্রতিযোগিতামূলক করা এবং নির্দিষ্ট নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসার একটি পদক্ষেপ।
“এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর মান বৃদ্ধি পাবে, যুগোপযোগী চাহিদা পূরণ সহজ হবে ও জাতিসংঘ শাস্তিরক্ষা মিশনে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হবে।”
ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলো বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে কোনো হুমকি ও বিপদে ফেলবে না দাবি করে ইনু বলেন, “বরং এর মাধ্যমে আমাদের সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উন্নততর প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হবে।”
সমস্যা জিইয়ে না রেখে তার সমাধানই শেখ হাসিনার লক্ষ্য জানিয়ে ইনু বলেন, গত আট বছরে শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে ৪৬টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিগন্ত উন্মোচন করা হয়।
“শেখ হাসিনার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে সাইবার নিরাপত্তা, পারমাণবিক বিদ্যুৎ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, স্যাটেলাইট ও মহাকাশ গবেষণার মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র ও ঋণ সহায়তার বিষয়ে চুক্তির মাধ্যমে দুদেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরও একধাপ অগ্রগতি হল, উন্নয়নের নতুন দিগন্ত সূচিত হল।”
প্রধান তথ্য কর্মকর্তা কামরুন নাহান এবং সিনিয়র উপপ্রধান তথ্য অফিসার (প্রেস) আকতার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।