চুক্তি বা সমঝোতার নামে ছলচাতুরি নয়: সিপিবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর সামনে রেখে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চুক্তি বা সমঝোতা নিয়ে কোনো ছলচাতুরির আশ্রয় না নিতে সতর্ক করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 April 2017, 04:01 PM
Updated : 7 April 2017, 04:13 PM

শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান।

সিপিবি সভাপতি বলেন, “জনগণের পক্ষ থেকে বলতে চাই, চুক্তি বা সমঝোতার নামে ছলচাতুরির আশ্রয় নেবেন না। তিস্তা চুক্তির নাম করে যেন তেন একটা চুক্তি বাংলাদেশের উপর চাপিয়ে দেওয়া চলবে না।”

প্রতিরক্ষা চুক্তির বিরুদ্ধে এবং তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে বিকালে সিপিবি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) যৌথ এ সমাবেশের কয়েক ঘণ্টা আগে প্রধানমন্ত্রী তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে নয়া দিল্লিতে পৌঁছান।

সফরে ভারতের সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, পরমাণু বিদ্যুৎ, বিজ্ঞান ও প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিন ডজন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।

তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাগড়ায় আটকে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে এখনও কোনো অগ্রগতি নেই। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে এর সুরাহা হওয়ার আশা নেই বললেই চলে।

তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গে সিপিবি সভাপতি বলেন, “চুক্তির ভিত্তি হতে হবে একটি নদীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যেটুকু পানি নদীর প্রাপ্য, সেই প্রাপ্যটা প্রথমে দিয়ে দিতে হবে। এরপর যেটুকু পানি অবশিষ্ট থাকবে সেটা ন্যায়-নীতির ভিত্তিতে উজান ও ভাটির দেশের মধ্যে বণ্টন করতে হবে।”

তিস্তা চুক্তিতে মমতাকে রাজি করাতে শুষ্ক মৌসুমে সেচের জন্য বর্ষাকালে তিস্তা পানি ধরে রাখতে পশ্চিমবঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে কয়েকটি জলাধার তৈরির কথা কথা আলোচনায় এসেছে।

সেলিম বলেন,, “উজানের দেশ ভাটির দেশকে ক্ষতি করতে পারবে ভারতে এমন কোন স্থাপনা করা যাবে না। এই ধরনের নীতিমালার ভিত্তিতে কেবল একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য চুক্তি হতে পারে।

“শুধু তিস্তা নয়, অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানি বণ্টনে একই ধরনের নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”

ওইসব বিষয় বাদ দিয়ে ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে সরকার উঠেপড়ে লেগেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শোনা যায় ভারতের কাছ থেকে নাকি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনতে হবে। ভারত যদি বিদেশ থেকে অস্ত্র আমদানি করে তাহলে তার অস্ত্র আমাদের কাছে রপ্তানি করার ক্ষমতা ভারতের আছে কি নেই সেটা দেখার বিষয়।যার বাইরের দেশ থেকে অস্ত্র আমদানি করতে হয়, সে কীভাবে অস্ত্র রপ্তানি করবে?

“এর একটা মাত্র উদ্দেশ্যে থাকতে পারে, তা হল যেসব অস্ত্র পুরনো হয়ে গেছে, অচল অস্ত্র, তারা (ভারত) নতুন অস্ত্র ব্যবহার করবে, আর পুরনোগুলো মাটি চাপা না দিয়ে তা বাংলাদেশকে টাকার বিনিময়ে হস্তান্তর করবে। তারা তাদের মিলিটারিকে শক্তিশালী করার জন্য ওই ফন্দি করেছে।”

তিস্তাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানি বণ্টন, কাঁটাতারের বেড়া, সীমান্তে হত্যা, বাণিজ্য ঘাটতি, টিপাইমুখ বাঁধ, সুন্দর বন ধ্বংসের মতো সমস্যার কোন শেষ নাই, কিন্তু সেসব সমস্যা নিয়ে সরকারের মুখে কোনো কথা নেই বলেও অভিযোগ করেন সিপিব সভাপতি।

সমাবেশ বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী কি উদ্দেশ্যে ভারতে গেলেন তা দেশের মানুষ জানে না। সংসদেও এই বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে শুনছি প্রতিরক্ষা চুক্তি হতে যাচ্ছে নাকি।”

‘বাংলাদেশ ভারতের কোনো অঙ্গরাজ্য নয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “প্রতিরক্ষা চুক্তি আমাদের দরকার নেই। আমাদেরকে কেউ আক্রমণ করতে আসেনি। এই চুক্তি ভারতের দরকার আছে।

“ইসরাইল, আমেরিকা ও ভারত একটা জোট গঠন করেছে, এর সঙ্গে বাংলাদেশকে ভারত যুক্ত করতে চায়। আমরা কেন এই জোটে যুক্ত হব? আমরা চীনা বা ভারতের জোটে যেতে চাই না। এই জোটে যুক্ত হওয়াটা হবে আত্মঘাতী।”

ভারত অভিন্ন নদীগুলো পানি প্রবাহে বাধা তৈরি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পাকিস্তান ভারতের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পর মোদীর সরকার পানি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু আমরা তো ভারতে কোনো সন্ত্রাসী হামলা করিনি, কোন যুদ্ধ হয়নি। তাহলে কেন ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাইনি। আমরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।”

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, বাসদ নেতা বজলুর রশিদ ফিরোজ, সিপিবি ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেল বক্তব্য রাখেন।

পরে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে সিপিবি-বাসদ।মিছিলটি পল্টন হয়ে সিপিবি অফিসের সামনে শেষ হয়। 

একই সময়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনেই ‘প্রতিরক্ষা চুক্তির নামে জাতীয় স্বার্থ বিপন্ন করা চলবে না’ শিরোনামে আরেকটি সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা।

এতে গণসংহতি আন্দোলনের নেতা ও বাম মোর্চার সমন্বয়ক ফিরোজ আহমেদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদের (মার্কসবাদী) নেতা মানস নন্দী ও ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের নেতা আবদুস সাত্তার বক্তব্য দেন।