ভোটে জিততে ‘হয়রান’ সাক্কু বললেন, এই জয়ের মানে হয় না

ভোটে জিতলেও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সার্বিক অবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু।

কাজী এনামুল হক কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2017, 04:51 PM
Updated : 30 March 2017, 04:51 PM

তার দাবি,বৃহস্পতিবার ভোটের দিন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে নির্বাচন কমিশনের কোনো পদক্ষেপ ছিল না।

নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে এটাই ছিল প্রথম বড় কোনো নির্বাচন, যেখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে লড়াইয়ে নামেন বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী।

রাতে যখন ফল ঘোষণায় জয় প্রায় স্পষ্ট, তখন টাউন হলে স্থাপিত রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ছিলেন সাক্কু।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচন কমিশন আমারে যে কথাগুলো বলছিল, এগুলো তারা রাখে নাই, কিছুই করে নাই।”

আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে তার দলের নেতা-কর্মীরা প্রশাসনের সহায়তায় ভোট কেন্দ্র দখল করতে চেয়েছিল বলে সাক্কুর অভিযোগ।

“প্রতিটি কেন্দ্রে তারা লোক দিয়া, পুলিশের সামনে অতর্কিত হামলা করে ঢুইকা যায়। খাবলা দিয়া সিল মাইরা দেয়। আমরা হয়রান হয়ে গেছি দৌড়াতে দৌড়াতে। যেখানে শুনছি দৌড়াই গেছি। তো এটা কি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। আমি জয়লাভ করছি আল্লায় দিলে, কিন্তু এই জয়লাভের কোনো মানে হয় না।”

ভোটের মধ্যে বিএনপি নানা অভিযোগ করে এলেও ফল প্রত্যাখ্যানের আগাম কোনো ঘোষণা দেয়নি।

তবে কেন্দ্র থেকে সংবাদ সম্মেলনে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন,এই নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরেছে।  

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই ২০১২ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে জয়ী হন এই পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করে আসা সাক্কু। 

সেবার নির্দলীয় নির্বাচনে বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আফজল  খানকে হারিয়েছিলেন তিনি। এবার দলীয় প্রতীকের ভোটে হারান আফজল  খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে।

আফজল খানকে ২৯ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন সাক্কু, সীমাকে হারিয়েছেন এবার ১১ হাজার ভোটে। সেবার ভোটের হার ৭৫ শতাংশ হলেও এবার তা ৬৩ শতাংশে নেমে আসে।

ভোটে জয় স্পষ্ট হলেও শুরুতে ক্ষোভে মুখ এমন ম্লান ছিল মনিরুল হক সাক্কুর

ভোটের হার কম হওয়ায় অসন্তোষ জানিয়ে সাক্কু বলেন, “দুই লাখ ৭ হাজার ৩৮৫ ভোটের মধ্যে এক লাখ ২০ হাজার ভোট কাস্ট হয় নাই। কেন কাস্ট হয় নাই? এইডার দায়িত্ব কে নিব? আকাশ ভালো (আবহাওয়া ভালো), সবই ভালো, মানুষ কেন আসল না?”

বিএনপি সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে না আসতে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয় বলে তার অভিযোগ।

“আমাদের ওয়ার্কারদের বাড়িঘর কিচ্ছু রাখছে না। মামলা মকদ্দমা দিয়া..  আপনি শুনছেন? ইলেকশানের দুইদিন আগে ২৫ জনের নামে মামলা হয়, বিস্ফোরণের।”

সুষ্ঠু ভোট হলে বিশাল ব্যবধানে জিততেন বলে দাবি করেন ধানের শীষের এই প্রার্থী।

“দুই লাখ ভোট। যদি এক লাখ ৭০ হাজার ভোট কাস্ট হইতো, আমি একলাখ ২০ হাজার ভোট পাইতাম। মার্কাটা ধানের শীষ। কিছু নিজের ইমেজও আছে, মানুষের বিপদে-আপদে খাড়াইছিলাম, মানুষের কথা কইছি।”

“দুঃখ হয়, কী করছে, সাধারণ জনগণ দেখছে। খুব কষ্ট হইছে আজকে। আইন শৃঙ্খলা পুরা ব্যর্থ। সম্পূর্ণ ব্যর্থ,” নির্বাচন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন বিজয়ী প্রার্থী।

তবে ভোট দেওয়ার জন্য কুমিল্লা নগরবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, “অতীতের মতো আমি নগরবাসীর পাশে থাকব।”

এদিকে কুমিল্লার ভোট নিয়ে সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, “সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে সবার আস্থা অর্জনে শতভাগ সফল হয়েছি। আমরা দাবি করি, এ নির্বাচনে আমরা সফল ও সার্থক হয়েছি।”