ক্ষমতাসীনরা নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে: বিএনপি

প্রশাসনকে ব্যবহার ও ভোটারদের সন্ত্রস্ত করাসহ নানাভাবে ক্ষমতাসীনরা কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2017, 08:06 AM
Updated : 30 March 2017, 08:39 AM

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ তুলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, কুমিল্লায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষণ ফুটে উঠতে দেখলাম না। সকাল থেকে নির্বাচনকে ঘিরে শাসক দলের সন্ত্রাস, ভোটদানে বাধা দান, ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্টদের ঢুকতে না দেওয়া বা ঢুকে গেলেও তাদেরকে বের করে দেওয়া- এই ধরণের নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হচ্ছে।

“ক্ষমতাসীনরা স্থানীয় প্রশাসনকে কাজে লাগাচ্ছে, ব্যবহার করছে এবং এক নারকীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভোটারদের মনে ভীতি সৃষ্টি করে তারা একতরফা ভোট করার ইচ্ছা নিয়ে কাজ করছে। আমি আবারো স্থানীয় প্রশাসন ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অনাচারমূলক কর্মকাণ্ডে নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ত ভূমিকা, নির্বাক ভূমিকার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

একজন মেয়র, ২৭ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নয় জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচনে করতে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ ভোটারের কুমিল্লা সিটিতে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।

এর মধ্যে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজ কেন্দ্রের বাইরে রাস্তার ওপর বেলা ১১ টার দিকে কয়েকটি হাতবোমায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

ওই কেন্দ্রের কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যালট নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান।

দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন পালন করছে না।

“আগেও বলেছি, এখনো বলছি, কুমিল্লা সিটি করপোরেশ নির্বাচন এই কমিশনের জন্য অগ্নি পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় পাস  না করতে পারলে ব্যর্থতার সকল দায়িত্ব নিয়ে অচিরেই বিদায় নিতে হবে।”

বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে যাবে কিনা জানতে চাইলে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “না, আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবো। যা কিছু ঘটনা গণমাধ্যমের মাধ্যমে তাদের স্বরূপ আমরা উন্মোচন করবো।”

এসময় বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট শান্তিপূর্ণ না হওয়ার দাবির পক্ষে প্রমাণ তুলে ধরেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।

এর মধ্যে ২৪ নং ওয়ার্ডের সালমানপুর শালবন বিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাঙ্গালিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয়, গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রামকৃষ্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি কেন্দ্রে ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্টদের প্রবেশের বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

এছাড়া জাঙ্গালিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কেন্দ্রে ধানের শীষের মূল এজেন্ট আকমত আলীকে তার বাড়িতে তালাবদ্ধ করে রাখা, ৭ নং ওয়ার্ডে ইছহাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রের বাইরে বহিরাগতদের জমায়েত ও সরকারি সিটি কলেজ কেন্দ্রে ছাত্রলীগের কর্মী কবির ভুঁইয়া ও চঞ্চলের নেতৃত্বে কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যালট পেপার ছিনতাই করে সিল মারাসহ বিভিন্ন অভিযোগ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন তিনি।

“এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের চালচিত্র আমরা উপস্থাপন করলাম। আজ সরকারি প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কিনা সেটি নিয়ে ভোটারদের মধ্যে সন্দেহ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।”

অনেক কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটারদের কাছে পুলিশ ভোট চাচ্ছে বলে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, “ভোটগ্রহণ চলাকালে বেশিরভাগ নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বিভিন্নভাবে হয়রানির খবর পাওয়া যাচ্ছে। অনেক কেন্দ্রে ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। বাইরে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা অবস্থান নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ভোট দিতে বাধার সৃষ্টি করছে।

“নৌকার প্রার্থীর লোকেরা এলাকায় এলাকায় মহড়া দিচ্ছে, যাতে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। স্থানীয় প্রশাসন কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ নামক যে রাজনৈতিক দল তার বর্ধিত অংশ হিসেবে কাজ করছে শুরু থেকে।”

ধীর গতিতে ভোটগ্রহণ হচ্ছে অভিযোগ তুলে রিজভী বলেন, “বাইরে লম্বা লাইন থাকলেও ভোট কাস্টিং যাতে কম হয়, সেজন্যই এই ব্যবস্থা করছে।”

গণমাধ্যমের কর্মীদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।

তিনি বলেন, প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া কোনো সাংবাদিককে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অজুহাত দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশন থেকে সাংবাদিকদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের বিশেষ পাস দেওয়া হলেও তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল হাই, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মনির হোসেন ও এসএম জাহাঙ্গীর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।