‘দুই একটি অভিযানের সাফল্যে আত্মপ্রসাদের সুযোগ নেই’

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সমস্যাকে জাতীয়ভাবে মোকাবেলা করতে সবাইকে আবারও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, কেবল দমন অভিযান চালিয়ে সমাজ থেকে জঙ্গিবাদের শেকড় পুরোপুরি উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2017, 03:43 PM
Updated : 28 March 2017, 03:43 PM

দুই একটি দমন অভিযানের সাফল্যে আত্মপ্রসাদ লাভ করার কোনো সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার রাতে এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় জঙ্গিবাদের নামে পরিচালিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিস্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, “দোষারোপের রাজনীতি না করে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সমস্যাকে জাতীয়ভাবে মোকাবিলার জন্য আমি ক্ষমতাসীনদের প্রতি আবারও আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের সকলকে আমি এই সমস্যা নিরসনে ঐক্যবদ্ধ হবার অনুরোধ করছি।”

একই সঙ্গে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় জঙ্গি আস্তানায় ‘আতিয়া মহলে’ জঙ্গি দমনে সফল অভিযান পরিচালনার জন্য সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোসহ দেশরক্ষা বাহিনীকে অভিনন্দন জানান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি পাঠানপাড়ার আতিয়া মহল ঘিরে ফেলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সোয়াট এবং সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন। শনিবার সকালে শুরু হয় চূড়ান্ত অভিযান।

শিববাড়ি এলাকা ঘিরে সেনা অভিযান শুরুর পর ব্যাপক গোলাগুলির মধ্যে শনিবারই ওই ভবন থেকে ৭৮ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

ওই অভিযানের মধ্যেই শনিবার সন্ধ্যায় আতিয়া মহল থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে এক জায়গায় দুই দফা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ সদস্যসহ ছয়জন নিহত হন।

সোমবার রাতে সংবাদ ব্রিফিংয়ে জঙ্গি আস্তানার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার এবং ভেতরে চারটি লাশ পাওয়ার কথা জানায় সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার আতিয়া মহলের নিয়ন্ত্রণ পুলিশের হাতে দিয়ে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, “সিলেটের একটি আবাসিক ভবনে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ গোপনে অবস্থানকৃত সন্ত্রাসীদের দমনের লক্ষ্যে সফল অভিযান পরিচালনার জন্য আমি আমাদের সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোবৃন্দসহ দেশরক্ষা বাহিনীর প্রতি অভিনন্দন জানাচ্ছি। অভিযানে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য এবং যেসব সাধারণ মানুষ হতাহত হয়েছেন, তাদের প্রতি জ্ঞাপন করছি শোক ও সহানুভুতি।”

গত বছর গুলশান-শোলাকিয়ায় হামলার পর জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য গঠনে খালেদা জিয়া যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তা ক্ষমতাসীন আওয়ামী আওয়ামী লীগ নাকচ করার প্রসঙ্গও উঠে আসে খালেদার বিবৃতিতে।

চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, “সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সংকটে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশও এ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। এই সংকট মোকাবেলায় আমাদেরকে প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে অগ্রসর হতে হবে। সেই আহ্বান আমি বরাবর জানিয়ে আসছি। দুঃখের বিষয় আমাদের আহ্বান এখন পর্যন্ত চরমভাবে উপেক্ষিত হয়ে আসছে।”

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “মুসলিম প্রধান এদেশটিতে গণতন্ত্রহীনতা, জবাবদিহিতাহীন শাসন, দুর্নীতি, সুবিচারের অভাব এবং যুব সমাজের বেকারত্বই জঙ্গিবাদ বিস্তারের প্রধান কারণ। এই কারণগুলো দূর করতে হবে। জনগণকে আস্থায় নিয়ে তাদের কাছ থেকে সক্রিয় সহযোগিতা নিতে হবে।

“বর্তমান স্পর্শকাতর একটি সময়ে জঙ্গিবাদের আকস্মিক বিস্তার ও দমন অভিযানে স্বচ্ছতার অভাবে জনমনে নানা প্রশ্ন ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এই সব সন্দেহ দূর করতে হবে। আমি এই বিষয়গুলো অবিলম্বে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।”

নিজের শাসনামলে জঙ্গিবাদ দমনে কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, “সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর ও খুবই স্পষ্ট। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হবার পর দেশব্যাপী এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটে। ২০০১ সালে নির্বাচিত হয়ে আমরা দায়িত্ব নেবার পর আমাদের সরকারও জঙ্গিবাদের এই সংকটের ‍মুখোমুখি হয়। আমরা কঠোর হাতে তা দমন করি।

“জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ভেঙে দেয়া হয় এবং শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের জীবিত অবস্থায় গ্রেপ্তার করে তাদের বিচার সম্পন্ন করা হয়। পরে তাদের শাস্তি কার্য্কর হয়।”

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসে বিএনপি-জামায়াতের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন নেতাদের দাবির বিষয়টিও বিবৃতিতে তুলে আনেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই কেন জঙ্গিবাদ এভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও আমরা এই প্রশ্ন কখনো তুলিনি এবং এ নিয়ে দোষারোপের রাজনীতিতেও লিপ্ত হইনি। বিশেষ কোনো সরকার বা দলের নয়, এটি একটি জাতীয় সমস্যা। তাই দোষারোপের রাজনীতি না করে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সমস্যাকে জাতীয়ভাবে মোকাবিলার জন্য আমি ক্ষমতাসীনদের প্রতি আবারো আহবান জানাচ্ছি।”