কুমিল্লা সিটি ভোটে অন্তত ৪৩ কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা চায় বিএনপি

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অন্তত ৪৩টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের সময় ক্ষমতাসীনরা ‘অনৈতিক হস্তক্ষেপ’ করতে পারে আশঙ্কায় সেগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2017, 02:07 PM
Updated : 28 March 2017, 02:42 PM

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সোমবারের সাক্ষাতেও কুমিল্লা সিটির দক্ষিণ প্রান্তের নয়টি ওয়ার্ডের ওই ৪৩টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে’ সিসি ক্যামেরা বসানোর এ দাবি জানানো হয়েছে বলে জানান দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাদের (ক্ষমতাসীনদের) অশুভ ইচ্ছার আভাষগুলো ফুটে উঠতে শুরু করেছে। সরকারি দলের প্রার্থীর সমর্থকদের তাণ্ডব ও সন্ত্রাস ফুটতে শুরু করেছে এবং ব্যাপকভাবে আচরণ বিধি লঙ্ঘন শুরু হয়েছে।”

“গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দেখা করে আমরা বলেছি- যেহেতু একটা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হচ্ছে, সেজন্য প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা দিতে হবে। সেটা সম্ভব না হলে কুমিল্লার দক্ষিণ প্রান্তে নয়টি ওয়ার্ডে ঝুঁকিপূর্ণ যে ৪৩টি কেন্দ্র আছে, সেখানে সিসি ক্যামেরা দেওয়ার জন্য দাবি করেছি। আজকে আপনাদের মাধ্যমে আবারও সেই দাবিটি আমরা করছি।”

সিইসি নূরুল হুদার সঙ্গে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সোমবার আলোচনা করতে যায় বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল, তার নেতৃত্বে ছিলেন রিজভী।

প্রথম বৈঠকে প্রায় আধা ঘণ্টা বিএনপি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে একান্তে আলোচনা করেন নূরুল হুদা; এসময় অন্য কোনো কমিশনার কিংবা ইসি সচিবও ছিলেন না।

সাক্ষাতে বেশকিছু দাবি জানানোর পর সেগুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে সিইসি তাদের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান রিজভী।

“সিইসি কথা দিয়েছেন, আশ্বাস দিয়েছেন, কোনো ধরনের অনাচার-সন্ত্রাস হবে না। নির্বাচনী আচরণবিধি যারা লঙ্ঘন করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কী পদক্ষেপ নেয়, তা দেখে পরবর্তীতে আমাদের অবস্থান তুলে ধরব।”

আগামী ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটিতে ভোট হবে। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা, বিএনপির সদ্য বিদায়ী মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, জাসদের (রব) শিরিন আক্তার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মামুনূর রশীদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

তার একদিন আগে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এ সংবাদ সম্মেলন থেকে দলটির মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ আনেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, “পরশু দিন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের কর্তৃক বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর সমর্থক ও নেতা-কর্মীদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত আছে। বিএনপি প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার, লিফলেট ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে।

“বিশেষ করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার বর্ধিত নয়টি ওয়ার্ডে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসীরা এতটা বেপরোয়া যে, সেখানকার সাধারণ ভোটারসহ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।”

রিজভীর অভিযোগ, “পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে পুলিশ নির্বাচনী এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের হুমকি, গ্রেপ্তার ও তল্লাশির নামে তাণ্ডব ও হয়রানি অব্যাহত রেখেছে। বেশ কয়েকদিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপক অনিয়ম ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন ও রিটার্নিং অফিসার কোনো কার্য্কর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।”

কুমিল্লায় ধানের শীষের প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্টের দেওয়া বিভিন্ন অভিযোগ সোমবারের সাক্ষাতে সিইসিকে জানানোর কথা তুলে ধরেন এই বিএনপি নেতা।

তিনি বলেন, “আমরা বলেছি, ‌‘নতুন কমিশন গঠন হয়েছে। কুমিল্লার নির্বাচন আপনার জন্য অগ্নি পরীক্ষা। আপনি নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছেন- কি পারবেন না, সেটির মহাপরীক্ষা হবে আগামী ৩০ মার্চের নির্বাচনে। আমরা আশা করব, কুমিল্লার নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট প্রদানের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সিইসি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন’।”

‘বাংলাদেশকে কাশ্মির বানাবেন না’

ভারতের সঙ্গে সরকার প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে যাচ্ছে বলে গত কয়েকদিন ধরে অভিযোগ করে আসা বিএনপি নেতা রিজভী এবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করতে ‘সুপার হিউম্যান স্পিডে’… এত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন যে, কেউ তার নাগাল পাচ্ছে না।

“বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা, রাজনৈতিক দলের মনোভাব সব কিছুকে পেছনে ফেলে, পদদলিত করে তিনি দৌড়াচ্ছেন।”

প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি হলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিলিন হয়ে যাবে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা।

“আমরা বলতে চাই, প্রতিরক্ষা চুক্তি হলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিলিন হয়ে যাবে, বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা হারাবে, এর পরিণতি হবে ভয়ানক। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই, দয়া করে আপনি বাংলাদেশকে কাশ্মির বানাবেন না।

“নিজের ক্ষমতায় থাকার স্বপ্নসাধকে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে, প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যকে ভারতের জিম্মায় তুলে দেবেন না।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, মনির হোসেন, আবদুল আউয়াল খান, শহিদুল ইসলাম বাবুল এবং জাহানারা বেগম উপস্থিত ছিলেন।