জঙ্গিবাদের উত্থান রুখা না গেলে সব রাজনৈতিক দল ‘অপ্রাসঙ্গিক’ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে দলটির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য।
সোমবার বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “জঙ্গিরা সকলের শত্রু। বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করা হয়েছে, গণতান্ত্রিক যে ঘাটতি সৃষ্টি করা হয়েছে, মানবাধিকারের যে ঘাটতি সৃষ্টি করা হয়েছে, আইনের শাসনের যে ঘাটতি সৃষ্টি করা হয়েছে- এই ঘাটতিটা পূরণ করবে জঙ্গিরা। এটাই নিয়ম।
“আমরা মনে করি, জঙ্গিকে যদি দমন করতে হয়, এই ঘাটতি পূরণ করতে হবে গণতান্ত্রিক অধিকারের মাধ্যমে, মানবাধিকারের মাধ্যমে, আইনের শাসনের মাধ্যমে। আর যদি সেটা না করা হয়, যখন এই উত্থান হবে, আমরা তখন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাব। বিএনপি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে, আওয়ামী লীগ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে, ওই সাংবাদিক ভাইয়েরা যারা আছেন, উনারাও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবেন।”
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের প্রতি আহ্বান রেখে আমীর খসরু বলেন, “আমরা কেউ জঙ্গি শক্তির উত্থান চাই না। আমার অনুরোধ- বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রবর্তন করুন।
“একটি নির্বাচিত সংসদ ও সরকার থাকুক, যাদের জনগণের ওপর আস্থা থাকবে। এর বাইরে আর কোনো সমাধান নাই। এর বাইরে সমাধান করতে চাইলে বাংলাদেশকে আগুনের মুখে ঠেলে দেওয়া হবে।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জিয়াউর রহমান’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন।
এতে বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, “এখন আবার জঙ্গির কথা আসছে। কারণ তাকে (সরকার) তো টিকে থাকতে হবে, জনগণের প্রতি যার আস্থা নাই, তাকে টিকে থাকতে হবে জঙ্গির দোহাই দিয়ে; তাকে টিকে থাকতে হবে উন্নয়নের দোহাই দিয়ে, তাকে টিকে থাকতে হবে পাশ্বর্বতী দেশের সাথে সম্পর্কের মাধ্যমে।”
“ভারত আমাদের থেকে ট্রানজিট নিয়েছে, করিডোর নিয়েছে। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৭ এপ্রিল ভারত যাচ্ছেন। তাড়াহুড়ো করে প্রতিরক্ষা চুক্তি, এর কোনোটাই বাংলাদেশের আইনগতভাবে ভারতকে দেওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।”
আন্তর্জাতিক নদীর পানি বন্টন আইনের আওতায় বাংলাদেশ ‘তিস্তার পানিসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি’ ন্যায্য হিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বিএনপি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করেছে দাবি করে সাবেক এই বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সৃজনশীলতা ও সম্ভাবনাময়কে মুক্ত করে দিয়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সাহেব মুক্ত বাজার অর্থনীতি চালু করে দিয়ে সব মেজর অর্থনৈতিক সংস্কার করেছেন। পরবর্তীতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই সংস্কারগুলো অব্যাহত রেখেছেন।
“আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলব, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ অবধি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অর্থনীতির জন্য কোনো মেজর সংস্কার করতে পারে নাই। যতগুলো বড় বড় সংস্কার হয়েছে অর্থনীতির জন্য, যে কারণে বাংলাদেশ আজকে এরকম দুঃশাসনের মধ্যেও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটা একমাত্র বিএনপির অর্থনৈতিক সংস্কারের কারণেই।”
বিএনপির অর্থনৈতিক সংস্কারের উদাহরণ হিসেবে রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্প কল-কারখানা ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়া, বেসরকারি খাতের সংস্কার, ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা চালু, রাজস্ব আদায়ে ভ্যাট প্রথা চালু, গ্রামীন অর্থনীতি ও স্বনির্ভরতার জন্য পল্লী বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ প্রকল্প চালু, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংসকারের কথা বলেন আমীর খসরু।
তিনি বলেন, “আজকে যে ভ্যাট, এটা বিএনপি করেছে। এটা করার সময়ে আওয়ামী লীগের কীভাবে বিরোধিতা করেছিল! আজকে কিন্তু রাজস্ব আয়ের মূল আয় আসছে এই ভ্যাট থেকে।
“আজকে সরকার গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নয়নকে বড় করে দেখছে। প্রত্যেকটি স্বৈরাচারের চরিত্রে এটা পাবেন। আইয়ুব খানের সময় দেখেন নাই? সে আমাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, সে উন্নয়নের ধোঁকা দিয়ে দেশ পরিচালনার চেষ্টা করেছে, যার ফল হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ।”
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান জেড এ তাহমিদা বেগম, বিএমএর সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক গাজী আবদুল হক, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান সেলিম ভুঁইয়া, হারুনুর রশীদ, কাদের গনি চৌধুরী, শহীদুর রহমান ভূইয়া ও সাব্বির মোস্তফা খান উপস্থিত ছিলেন।