‘আ. লীগের উপলব্ধি এতোদিনে?’

গণহত্যা দিবসে বিএনপির ‘তেমন কোনো কর্মসূচি না থাকায়’ আওয়ামী লীগের সমালোচনার জবাবে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2017, 08:49 AM
Updated : 26 March 2017, 10:37 AM

বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, “গণহত্যা দিবস, এটা স্বীকৃত গণহত্যা, ২৫ মার্চে হয়েছে, দীর্ঘকাল ধরে স্বীকৃত হয়ে এসছে। আমাদের একটা পাল্টা প্রশ্ন আছে। সেই প্রশ্ন হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কী এতোদিন পর উপলব্ধি করল যে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস?”

রোববার স্বাধীনতা দিবসের সকালে শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন ফখরুল।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালির মুক্তির আন্দোলন দমাতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।  ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের ওই অভিযানে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা।

এরপর নয় মাসের যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে আসে চূড়ান্ত বিজয়।

জাতীয় সংসদে প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর এবরাই প্রথম জাতীয়ভাবে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে বাংলাদেশ।  

এ উপলক্ষে শনিবার লালবাগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর কাদের গণহত্যা দিবসে ‘বিএনপির কোনো কর্মসূচি দেখতে না পেয়ে’ তার কারণ জানতে চান।

তিনি বলেন, “দল হিসেবে আপনাদের অবস্থান স্পষ্ট করুন। যারা মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক বলে নিজেদের দাবি করে, আমি সেই ঘোষক দাবিদার দলকে জিজ্ঞেস করতে চাই, ২৫ মার্চের এই গণহত্যা দিবসে আপনাদের কর্মসূচি কী? আমি জানতে চাই, আপনারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দিনে নীরব কেন?

এ বিষয়ে রোববার সাংবাদিকরা মির্জা ফখরুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “আমরা ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস সবসময় স্মরণ করি এবং পালন করি। এটা এভাবে ঘোষণা দিয়ে তারা (আওয়ামী লীগ) শুরু করেছে, আমরা দেখব পরবর্তীকালে কী করা যা।”

আওয়ামী লীগের পাল্টা সমালোচনায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, “১৯৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় ছিল, তখন তারা কিন্তু এটা এভাবে গণহত্যা দিবস বলে পালন করেনি। আবার ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত ছিল, তখনও তারা পালন করে নাই। আবার এইবার ২০০৮ সাল থেকে তারা এখন পর্যন্ত আছে, এই প্রথম সম্ভবত তারা উপলব্ধি করলেন যে, গণহত্যা দিবস বলে একটি দিবস আছে।”

‘সরকারই জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতায়’

বিএনপির ‘মদদে’ জঙ্গিরা আশকারা পাচ্ছে- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “মিলিট্যান্সিকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে সরকার নিজে। তারা সঠিকভাবে জঙ্গিবাদের উৎস খুঁজে বের করছে না, অনুসন্ধান করছে না, তদন্ত প্রোপারলি করছে না। উপরন্তু গণতান্ত্রিক উদারপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরে যখন দোষারোপ করা হয়, তার অর্থ হচ্ছে, এটা তারা করছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।”

সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর ওবায়দুল কাদের দেশে জঙ্গিদের নতুন তৎপরতার সঙ্গে বিএনপিকে জড়িয়ে বক্তব্য দেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, সরকার ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ জঙ্গিবাদকে ‘ব্যবহার করতে চায়’।

“আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, সকল রাজনৈতিক দলকে এক করে এবং সমস্ত সিভিল সোসাইটিকে এক করে আজকে একটা জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা দরকার। এটাই একমাত্র পথ।”

বিভিন্ন সময় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আসা ফখরুল এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি কোনো অভিযানকেই কখনো ‘নাটক’ বলেননি।

“সিলেটের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এর আগেও যেসব ঘটনা ঘটেছে, প্রত্যেকটি ঘটনা উদ্বেগজনক। আমরা বলেছি, এই ঘটনাগুলো উদ্বেগজনক। এর সঠিক তদন্ত হওয়া দরকার। এই তদন্ত না হলে জনগণের মধ্যে প্রশ্ন থেকে যায়।”

“আজকে যে অবস্থায় গিয়ে পৌঁছাচ্ছে, এরপর দেখা যাবে, পয়েন্ট অব নো রিটার্নে চলে যাচ্ছে। এখনো সময় আছে, আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাব, সকলকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ভয়াবহ জঙ্গিবাদকে মোকাবিলা করার, এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার।”