আপনি তো যুদ্ধই করেন নাই: ফখরুলকে হানিফ

স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠকারী বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ দাবি করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এক বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2017, 03:42 PM
Updated : 25 March 2017, 04:25 PM

‘জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হতো কি না’- তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে দেওয়া বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন না বলেও অভিযোগ আনেন তিনি।

ফখরুলের বক্তব্যে প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, “এই তথ্য উনি কোথায় পেলেন? জিয়াউর রহমান নিজেই বলেছিলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন।

“ফখরুল সাহেব, এই তথ্য আপনি কোথায় পেলেন? স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছেন। ফখরুল সাহেব, আপনি তো যুদ্ধই করেন নাই, স্বাধীনতার পক্ষেই ছিলেন না। আপনারা কী করে জানলেন, জিয়াউর রহমানের ঘোষণায় বাঙালি জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন?”

শনিবার সকালে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে যুবদলের আয়োজনে জিয়াউর রহমানের এক আলোকচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে একাত্তর সালের ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে সারা জাতিকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্ধুদ্ধ করেছিলেন। তিনি যদি ওইদিন যুদ্ধের ঘোষণা না দিতেন, তবে কবে যুদ্ধ শুরু হত, তা বলা মুশকিল ছিল।”

এর কয়েকঘণ্টা পর ‘২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে লালবাগের আজাদ অফিস মাঠে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ফখরুলের বক্তব্যের এই সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হানিফ।

আলোচনা সভায় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে বিএনপির কোনো কর্মসূচি দেখতে না পেয়ে তার কারণ জানতে চান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর কাদের।

তিনি বলেন, “দল হিসেবে আপনাদের অবস্থান স্পষ্ট করুন।  যারা মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক বলে নিজেদের দাবি করে, আমি সেই ঘোষক দাবিদার দলকে জিজ্ঞেস করতে চাই, ২৫ মার্চের এই গণহত্যা দিবসে আপনাদের কর্মসূচি কী? আমি জানতে চাই, আপনারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দিনে নীরব কেন?

“আমি জানতে চাই, আজকের এই দিনে গণহত্যার ব্যাপারে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান কী? ২৫শে মার্চ নিয়ে আপনাদের অবস্থান স্পষ্ট করুন। আমরা জানতে চাই, কেন আজকের এ দিনে আপনাদের কোনো কর্মসূচি নেই? এই দিনে বিএনপির রাজনীতির অবস্থান কী, জনগণ জানতে চায়?”

যারা পঁচিশে মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে মানে না, তারা মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্বাস করে না বলে মন্তব্য করেন কাদের।

“এখানেই মেরুকরণ হয়ে যাবে। এখানেই মেরুকরণ হচ্ছে, কারা সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে মদদ দেয়, আলবদর শত্রুদের সঙ্গে মিত্রতা করে; তারা মুক্তিযুদ্ধকে মানে না। বিএনপি নীরব কেন?

“আজকের এই নৃশংসতম, বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের দিনে দল হিসেবে বিএনপির অবস্থান কী? তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে, না সাতচল্লিশের পাকিস্তানের ধ্যান-ধারণা লালন করে?”

সভায় জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ আনেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ।

তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া যখন শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন, তখনই পাকিস্তানিরা বই লিখে গণহত্যার চিত্রকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের যদি কেউ বিকৃত করে থাকে, সেটা জিয়াউর রহমান ও তার সহধর্মিণী খালেদা জিয়া করছে।

“অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, অনেকেই ষড়যন্ত্র করছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পারবে না।”

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, সভাপতিমণ্ডলীর আব্দুর রাজ্জাক, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র সাঈদ খোকন, আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।