তিনি বলেছেন, “প্রত্যেকদিন যে ঘটনাগুলো ঘটছে, তাতে আমরা প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছি। গত সপ্তাহে ৩/৪টি ঘটনা ঘটল, আত্মঘাতী বোমা হামলারও। সরকারের এক একটি প্রতিষ্ঠান-এজেন্সি একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছে।
“আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, সরকার এটাকে (জঙ্গিবাদ) আসলে সমাধান করতে চায় না। তারা এটাকে জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়। জঙ্গিবাদ যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না হয়, সেই আহ্বান আমরা জানাচ্ছি।”
ঢাকায় বিমানবন্দরের সামনে পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণে এক ব্যক্তির প্রাণ হারানোর পরদিন শনিবার বিএনপি মহাসচিব যখন নয়া পল্টনে এক অনুষ্ঠানে একথা বলছিলেন, তখন সিলেটে একটি জঙ্গি আস্তানায় চলছিল সেনাবাহিনীর অভিযান।
বিভিন্ন ঘটনায় বিএনপিকে দোষারোপের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, “সঠিক সত্য অনুসন্ধান না করে, তদন্ত না করে যদি প্রথমেই এই ধরনের উক্তি করা হয়, যাদের জড়ানো হচ্ছে, তাদেরকে যদি হত্যা করা হয়, তাহলে কোনো দিনই সত্য উদ্ঘাটন হবে না।
“সেজন্য আমরা বার বার বলে আসছি, সকল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য তৈরি করে, সামাজিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এটাকে প্রতিরোধ করতে হবে। আর সঠিক সত্য উদ্ঘাটন করতে হবে- কারা এই কাজের সাথে জড়িত, কারা মদদ দিচ্ছে। নইলে আসল যারা ক্রিমিনাল, তারা বাইরেই থেকে যাবে।”
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে এক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একথা বলেন ফখরুল। বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদল এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ফিতা কেটে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
প্রদর্শনীতে একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাবেশে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে খাল কাটাসহ নানা কর্মসূচিতে জিয়াউর রহমানের ছবি স্থান পায়।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনের পর প্রদর্শনীস্থল ঘুরে দেখেন বিএনপি মহাসচিব। তখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
একাত্তরের সমরনায়ক জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফখরুল বলেন, “রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে একাত্তর সালের ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে সারা জাতিকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্ধুদ্ধ করেছিলেন। তিনি যদি ওইদিন যুদ্ধের ঘোষণা না দিতেন, তবে কবে যুদ্ধ শুরু হত, তা বলা মুশকিল ছিল।
“রাষ্ট্র পরিচালনায় জিয়াউর রহমান সফল ছিলেন বলে আন্তর্জাতিকভাবে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। আজকে ক্ষমতাসীনরা তাকে নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার, কুৎসা রটনা ও অবমাননাকর মন্তব্য করছে।”
বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “দেশে আজ গণতন্ত্র নাই, মানবাধিকার নাই, আইনের শাসন নাই। মানুষের আজ কোনো নিরাপত্তা নাই। মানুষের কোনো অধিকার নাই।
“কথা বলতে গেলে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আইন সম্মতভাবে মিছিল-মিটিং করতে দেওয়া হয় না। উল্টো হত্যা করা হয়। আমাদের সমাবেশ করতে দেওয়া না।”
আওয়ামী লীগের আট বছরের শাসনে এই পর্যন্ত বিএনপির ২ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী খুন, পাঁচশর বেশি গুম হয়েছে বলে দাবি করেন দলটির মহাসচিব।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “স্বাধীনতার যে দাবি উঠেছিল, মুক্তির যে দাবি উঠেছিল, তাকে দাবিয়ে দিতে ওই গণহত্যা হয়েছিল। তবে বাংলাদেশের মানুষের অদম্য যে আকাঙ্ক্ষা তাকে তারা দমন করতে পারেনি।”
সেই প্রসঙ্গ তুলে বর্তমানে এসে ফখরুল বলেন, “আজকে সেই বাংলাদেশে আইনের শাসন নেই, গণতন্ত্র নেই, মানুষের অধিকার নেই।”
অনুষ্ঠানে যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর, দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম জুয়েল, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল খালেক, ফারুক আহমেদ, কামরুজ্জামান দুলাল উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে সন্দেহ
বাংলাদেশ ব্যাংকে অগ্নিকাণ্ডের পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে বলে সন্দেহ করছেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই তলাতে আগুন লাগল, যে তলাতে বৈদেশিক রিজার্ভের ডকুমেন্টস রাখা আছে। আপনাদের মনে আছে, কিছুদিন আগে বৈদেশিক রিজার্ভের প্রায় ৮ কোটি ডলার হ্যাক করে নিয়ে চলে গেল। সেটা নিয়ে এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি।
“পত্র-পত্রিকায় দেখেছি যে, এর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোকেরা জড়িত রয়েছে, অনেক সময় শোনা যায় বাইরের আরো কেউ জড়িত থাকতে পারে। এজন্য এখানে সন্দেহ হওয়ার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩ তলায় আগুন লেগেছে, সেই ডকুমেন্টস পুড়েছে।”
ভারত সফর তাহলে কেন?
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হলে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর অর্থহীন বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমরা অত্যন্ত আশাবাদী ছিলাম যে অন্তত আমাদের পানি সমস্যা সমাধানের এজেন্ডায় থাকবে। এখন পর্যন্ত আমরা জানি না, কী বিষয়ে আলোচনা হবে, কী চুক্তি হবে।
“পত্র-পত্রিকায় দেখছি, পানিসম্পদমন্ত্রী বলছেন, তিস্তা চুক্তির নিষ্পত্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাহলে কী জন্য যাচ্ছি আমরা? তিস্তা চুক্তি না হলে আমরা কি শুধু তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য যাচ্ছি?”
সম্ভাব্য সামরিক চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, “এই চুক্তি কীভাবে হবে- এটা আমাদের জানা প্রয়োজন। এজন্যই জানা প্রয়োজন যে অতীতে আমরা দেখেছি সামরিক চুক্তির মাধ্যমে ক্ষুদ্র দেশগুলো কিন্তু বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, এই ধরনের চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মধ্যে পড়বে।”
আমরা বার বার বলে এসেছি, এখনো দৃঢ়ভাবে বলছি, দেশের স্বার্থ ও রাষ্ট্রবিরোধী কোনো চুক্তি মানুষ মেনে নেবে না,” বলেন তিনি।