ভারতের চাবিতে পুতুলের মতো নাচে সরকার: রিজভী

বর্তমান সরকার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য না দিয়ে ভারতের স্বার্থে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2017, 04:54 PM
Updated : 24 March 2017, 04:54 PM

শুক্রবার বিকালে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা জনগণকে তালাক দিয়েছেন, তিনি মানুষের ইচ্ছাকে তালাক দিয়েছেন। কিন্তু তিনি তার বন্ধু হিন্দুস্থানকে তালাক দেননি, তালাক দিতে পারবেন না।

“কারণ তার ক্ষমতার সব চাবিকাঠি দিল্লীর সাউথ ব্লকে। ওই চাবি তারা (ভারত) যখন যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ঘুরাবেন, তখন পুতুলের মতো আওয়ামী সরকার নাচবেন। এর বাইরে আর কিছুই নাই।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে যাচ্ছেন অভিযোগ এনে তা আড়াল করতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি দমনের নামে নাটক করা হচ্ছে গত কয়েকদিনের মতো এদিন দাবি করেন বিএনপি নেতা রিজভী।

“প্রতিরক্ষা চুক্তির সময়, হঠাৎ করে কয়েক মাসের বিরাম। প্রধানমন্ত্রী গর্ব করে বলেন, উন্নয়ন করেছে, এই করেছি, সেই করেছি, জঙ্গিবাদ দমন করেছি। আবার এখন জঙ্গিবাদ কোন গর্তের ভেতর থেকে বিষাক্ত সাপের মতো ফণা দিয়ে উঠল। আপনারা চট্টগ্রাম শেষ না হতে আশকোনার নাটক, এটা শেষ না হতে খিলগাঁও নাটক। এর দুইদিন যেতে না যেতে আজকে সিলেটে মহিলা জঙ্গির কথা বলা হচ্ছে।

“কারণ দৃষ্টি ওদিকে দাও, দৃষ্টি দিল্লির দিকে দিও না, দৃষ্টি হিন্দুস্থানের দিকে দিও না। দৃষ্টি জঙ্গি নিয়ে থাক, আমরা এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভারতের অঙ্গীভূত করব। বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভারতের অধীনস্থ করব।”

পুরানা পল্টনের বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে ‘১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সরিয়ে এইচএম এরশাদের ক্ষমতা দখলের কালো দিবস’ শিরোনামে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে স্বাধীনতা ফোরাম।

এতে বাংলাদেশ ব্যাংকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ বলে মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলছেন, এ ঘটনায় সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের লোকজন জড়িত বলেও মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, “আজ বাংলাদেশ ব্যাংকে আগুন ধরে গেল। বাহ! যেখানে ফরেন রেমিটেন্স, যেখানে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের ব্যাপার, ঠিক ওই জায়গায় আগুন ধরে গেল।

“এটা কী খামোখা আগুন ধরেছে? আকস্মিকভাবে আগুন ধরেছে, আপনারা তো অনেকে কথা বলেন, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট। এগুলো কিছুই না। সরকারই জড়িত, শাসকদলই জড়িত।”

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের ১৪ তলার একটি কক্ষে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিটের চেষ্টায় এক ঘণ্টার মধ্যে তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভবনের ১৪ তলার ওই অংশে বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের কার্যক্রম চলে। আগুনে ওই বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের ঘর ও আসবাবপত্র পুড়ে যাওয়ার কথা জানা গেলেও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়েনি বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান।

এক বছর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরির প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, “ফিলিপাইন আর টাকা দিতে চাইছে না। খবরের কাগজে দেখুন, তারা এখন অনীহা প্রকাশ করছে। ওই কাগজপত্র এবং এই ধরনের বিভিন্ন ডকুমেন্টসগুলো পুড়িয়ে দিয়ে ছাই করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ১৩/১৪ তলায় আগুন লাগানো হয়েছে।

“না হলে গুরুত্বপূর্ণ পলিসি ও নীতিতে আগুন ধরবে কেন, পুড়ে যাবে কেন। এটা শুধু রহস্যজনক নয়, এটা পরিকল্পিত ও ক্ষমতাসীনদের একটি ষড়যন্ত্র।”

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি যায় সুইফট মেসেজ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে। ওই অর্থ ফিলিপিন্সের রিজল ব্যাংকে যাওয়ার পর দেড় কোটি ডলার ফেরত পাওয়া গেলেও বাকি টাকা উদ্ধারের কোনো আশা এখনও পাওয়া যায়নি।

স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম বক্তব্য রাখেন।