আজ না হলেও তিস্তা চুক্তি হবে: কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এখনই না হলেও ‘সময়মত’ ঠিকই হবে। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2017, 08:33 AM
Updated : 24 March 2017, 08:33 AM

শুক্রবার ঢাকায় এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে যেসব চুক্তি হবে, তা হবে বাংলাদেশের স্বার্থেই।

“আজকে না হয় কিছুদিন পড়ে হলেও তিস্তা চুক্তি হবে। গঙ্গা চুক্তি যার হাত দিয়ে হয়েছে তিস্তা চুক্তিও তার (শেখ হাসিনা) হাত দিয়ে হবে।”

২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তা নিয়ে চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে তা আটকে যায়। এরপর নরেন্দ্র মোদীর সরকার ক্ষমতায় এসে উদ্যোগী হলেও তিস্তার জট খোলেনি।

পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সম্প্রতি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরে তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা অনিশ্চিত।

তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার কলকাতায় এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বলেন, তিস্তা নিয়ে ২৫ মে চুক্তি হবে বলে তিনি শুনেছেন, যদিও ভারতের কেন্দ্রে সরকার তাকে কিছুই জানায়নি।   

চার দশক ঝুলে থাকার পর শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর সরকারের সময়ে এসে দুই দেশের সীমান্তে সিটমহল বিনিময় হওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, “সীমান্ত চুক্তি যেহেতু হয়েছে তিস্তা চুক্তিও হবে। এটা এখন সময়ের ব্যাপার। সময় হলে সবই হবে।”

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন, বাংলাদেশ ও ভারত যেরকম শান্তিপূর্ণভাবে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করেছে, তার নজির পৃথিবীতে আর নেই।

“আর এই চুক্তিতে আমরা লাভবান হয়েছি। এমন কি সমুদ্র চুক্তিতেও আমাদের পাওনা আমরা বুঝে পেয়েছি। ভারতীয় সরকার সেখানে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি।”

শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী গত ২১ বছর ধরে গড়ে ওঠা ‘অবিশ্বাস আর সন্দেহের দেয়াল’ ভেঙে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “এটাই আজকে অনেকের সহ্য হচ্ছে না। আমরা ভরতের সাথে সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে বন্ধুত্ব চাই না, আমরা সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব চাই।”

আগামী ৭ থেকে ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সম্ভাব্য চুক্তিগুলো নিয়ে বিএনপির সমালোচনারও জবাব দেন কাদের।  

তিনি বলেন, “সামরিক বা অসামরিক, সব চুক্তিই হবে বাংলাদেশের স্বার্থে। চুক্তি হবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থে। এর বাইরে কোনো চুক্তি হবে না।”

প্রধানমন্ত্রীর সফরে কী কী চুক্তি হবে তা আগেই প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে বিএনপি নেতারা বলে আসছেন, ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির যে খবর সংবাদমাধ্যমে আসছে তা সঠিক হলে বাংলাদেশের ‘ভৌগোলিক স্বাধীনতা’ হুমকির মুখে পড়বে।

বিএনপির এই অবস্থানের সমালোচনায় কাদের বলেন, ভারত থেকে ‘মুখ ফিরিয়ে নিয়ে’ বিগত বিএনপি সরকার দেশের ‘অনেক ক্ষতি’ করেছে।

“জাতীয় স্বার্থে যত বেশি চুক্তি করব, তত লাভবান হব। ২১ বছর ভারত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে জাতির অনেক ক্ষতি আপনারা করেছেন। আমরা আজ ভারতের সাথে সম্পর্ক করতে চাই, তা সমতার ভিত্তিতে।”

‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ না হলে নির্বাচন হবে না- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কাদের বলেন, “নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন হলে চলবে? আসলে বিএনপির লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড মানে তাদেরকে নির্বাচনে জেতার নিশ্চয়তা দেওয়া। এই নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারব না। এটা দিতে পারে এ দেশের জনগণ।”

ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ‘জঙ্গিবাদ ইস্যুকে অতিরঞ্জিত করছে’- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদের এমন মন্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আসলে যারা জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে, যাদের মদদে জঙ্গিবাদ হচ্ছে, তাদের এখন গা জ্বালা শুরু হয়েছে।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবর্ষিকী উপলক্ষে কৃষক লীগ রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।