জঙ্গিবাদ ইস্যু অতিরঞ্জিত করছে সরকার: মওদুদ

ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ‘জঙ্গিবাদ ইস্যু’কে অতিরঞ্জিত করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2017, 01:33 PM
Updated : 22 March 2017, 01:33 PM

মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি যে, জঙ্গিবাদের ইস্যুটাকে নিয়ে অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে। আরও দেখেছি, অনেক নিরীহ মানুষের ওপর অভিযানের নামে অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে। আমি বলতে চাই, এটা নিশ্চয়ই সরকারের কোনো কৌশল।

“আমি বলব, তারা দুরভিসন্ধিমূলক একটা স্ট্র্যাটেজি বা কৌশল গ্রহণ করেছে। জঙ্গিবাদের উত্থানের মাধ্যমে বা জঙ্গিবাদের কর্মকাণ্ডগুলো ফলাও করে ছাপিয়ে দিয়ে, গ্লোবাল পলিটিক্সে, আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে সরকার জঙ্গিবাদের ইস্যুটাকে সামনে এনে নিজেদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্যই চেষ্টা করছে। তাতে কোনো লাভ হবে না।”

মওদুদের অভিযোগ, ‍“তারা (সরকার) যাতে ক্ষমতায় থাকতে পারেন, এই উদ্দেশ্য নিয়ে জঙ্গিবাদের ইস্যুটিকে নিয়ে এসব কাজ করছে।”

২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে জঙ্গি নেতা শাইখ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের বিচার বিএনপি করেছে দাবি করে সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, “ওদের ফাঁসির আদেশ আমাদের সময়ে হয়েছে। আমরা এদেশ থেকে জঙ্গি নির্মূল করে দিয়েছিলাম।

“কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবার জঙ্গিবাদের উত্থানের কথা তারা বলছেন। উপজেলা পর্যন্ত নাকী তারা অভিযান চালাবে। আমরা বলতে চাই, এটা ভুল হবে। এই অভিযানের নামে পুলিশ-র‌্যাব সাধারণ মানুষকে হয়রানি করবে।”

র‌্যাব-পুলিশ বা সরকারের একার পক্ষে জঙ্গিবাদ দমন সম্ভব নয় মন্তব্য করে এর জন্য সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান এই বিএনপি নেতা।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে ‘মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জিয়াউর রহমানের অবদান’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা হয়।

সভায় বিএনপির নিবন্ধন বাতিল সম্পর্কে সরকারের নেতাদের বক্তব্যের জবাবে মওদুদ বলেন, “এখন বলা হচ্ছে, জাতীয়তাবাদী দলের নিবন্ধন চলে যাবে, যদি আমরা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করি। এব্যাপারে আমি সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, নিবন্ধন থাকুক আর না থাকুক, সেটা আমাদের জন্য কোনো ইস্যু নয়।

“আমাদের জন্য ইস্যু হলো জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা, গণতন্ত্র আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। এখানে আমাদের নাগরিকদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনাই হচ্ছে আমাদের কাছে বড় ইস্যু।”

নির্বাচন কমিশন তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সারা দেশে সরকারি দলের লোকেরা ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছে। কালকে প্রধানমন্ত্রী মাগুরায় ভোট চেয়েছেন। এতে আমাদের আপত্তি নেই, আপনি জনসভা করুন।

“কিন্তু নির্বাচনী প্রচারাভিযান আমাদেরকেও দিতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলতে যেটা বুঝায়, সকল রাজনৈতিক দল জনগণের কাছে যাবার সমান অধিকার পাবে। আমাদের বিরুদ্ধে অগণিত মিথ্যা মামলা, নির্যাতন, গুম, হত্যা- এগুলো চলছে।”

জনসভা করতে চাইলে বিএনপিকে অনুমতি দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ করেন দলটির নেতা মওদুদ।

তিনি বলেন, “অথচ জাতীয় পার্টিও জনসভা করার সুযোগ পাচ্ছে। এ থেকে আমরা এখনই বুঝতে পারছি, আপনারা আগামীতে কেমন নির্বাচন করবেন? তার কিছুটা ইঙ্গিত আমরা পাচ্ছি।

“যদি মনে করে এককভাবে নির্বাচন করবেন, আমাদেরকে দূরে রেখে, আমাদেরকে বন্দি রেখে, নানাভাবে মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে নির্বাচন করবেন, সে নির্বাচন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষ এই নির্বাচন হতে দেবে না। ওই ধরনের ষড়যন্ত্র জনগণ সফল হতে দেবে না।”

আগামীতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হবে বলেও মন্তব্য করেন সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ।

সংগঠনের সভাপতি শফিকুল ইসলাম রাহীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, তৈমুর আলম খন্দকার, কেন্দ্রীয় নেতা এ বি এম মোশাররফ হোসেনে, আবুল খায়ের বাবলু বক্তব্য রাখেন।