ভারতের সঙ্গে চুক্তি থেকে দৃষ্টি সরাতে জঙ্গিবাদ: রিজভী

প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনা ভিন্ন খাতে নিতে দেশে আবারও জঙ্গিবাদকে সামনে আনা হয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2017, 03:39 PM
Updated : 21 March 2017, 04:03 PM

মঙ্গলবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী বলেন, “সরকার একটা প্রতারণার জাল ফেলে জঙ্গিবাদকে সামনে এনে অশুভ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

“প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের প্রাক্কালে প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রতিবাদে সারা দেশ যখন ফুঁসে উঠেছে, তখনই আবারও দেশব্যাপী রক্তাক্ত জঙ্গি তৎপরতা প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার কৌশল হিসেবে দেখছে জনগণ।”

আগামী ৭ এপ্রিল তিন দিনের সফরে নয়া দিল্লি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই সফরে দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি চুক্তি হওয়ার কথা, যার মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে একটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলে গণমাধ্যমের খবর।

প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা গণমাধ্যমে নানা কথা বলছেন দাবি করে রিজভী বলেন, “অথচ সরকারের স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেছেন, আমরা তো কিছুই জানি না। তিনি বেমালুম এটা চেপে যাচ্ছেন। এখানেই তো আসল রহস্য লুকিয়ে আছে।

“সরকার দেশের মানুষকে অন্ধকারে রেখে গোপনে দেশবিরোধী চুক্তি করে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করছে না। অতীতে এই সরকার ডজন ডজন গোপন চুক্তি করেছে, যা দেশের মানুষকে জানানো হয়নি।”

ইংরেজি দৈনিক ইনডিপেনডেন্টে সম্ভাব্য ‘প্রতিরক্ষা চুক্তি’ বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “পত্রিকাটির মালিক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। সুতরাং এটি স্পষ্ট যে সরকারের ইশারাতেই ওই প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে প্রতিবেদনটি ছাপা হয়েছে। এটা কি সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের পালস বোঝার চেষ্টা?।”

সরকার আগ বাড়িয়ে ‘দেশের সবকিছু এমনকি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পর্যন্ত দিল্লির দরবারে সঁপে দিচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা রিজভী।

তিনি বলেন, “প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে এমনও শোনা যাচ্ছে যে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধ্বংসী কোনো গুরুতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দুই দেশ সম্মিলিতভাবে তা একসঙ্গে মোকাবেলা করবে। এর অর্থ হচ্ছে, বিভিন্ন অজুহাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ দেওয়া।

“এর ফলে যা হবে সেটি হচ্ছে- ভারতের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দেশের সোচ্চার জনগোষ্ঠীকে যাতে সহজে দমন করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের মাটিতে কোনো বিদেশি সৈন্য বরদাশত করা হবে না।”

‘জঙ্গিবাদ জাতীয় নির্বাচনের জন্য অন্তরায়’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “তার বক্তব্যে এটা পরিষ্কার যে, জঙ্গি হামলার সুবিধাভোগী কারা। কারা জঙ্গিবাদ জিইয়ে রেখে রাষ্ট্র ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছে।

“এখন জনগণের কাছে এটা পরিষ্কার যে, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি বানচাল করতেই জঙ্গি তৎপরতা সৃষ্টি করা হয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, এবিএম মোশাররফ হোসেন, অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, আজিজুল বারী হেলাল ও মুনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানও প্রধানমন্ত্রীর সফরে ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ভারতের সাথে ২৫ বছরেরে মৈত্রী চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের পরে সাত দফা গোপন চুক্তি করেছিল শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব ও তাজউদ্দিন আহমেদ সাহেব। ওই চুক্তি করে বাংলাদেশকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছিল।

“আজকে সেই অবস্থা থেকে আরও অবনতি হচ্ছে। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার যে সাহস তার যে শক্তি অর্জন করেছিল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, সেটা ধীরে ধীরে কমছে। আমরা যে কথা বলতে চাই- সার্বভৌম হচ্ছে দেশের মানুষ। এই  সার্বভৌম মানুষকে নিয়েও সরকার খেলা করছে।”

একাত্তরের সেক্টর কমান্ডার হামিদুল্লাহ খানের স্মরণে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।