মধুর ক্যান্টিনে এরশাদের জন্মদিন পালন!

সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনের সঙ্গে যে স্থানটি জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই মধুর ক্যান্টিনে তার জন্মদিনের কেক কাটা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2017, 06:30 PM
Updated : 20 March 2017, 06:43 PM

এরশাদের দল জাতীয় পার্টির সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজের উদ্যোগে সোমবার দুপুরের পর মধুর ক্যান্টিনে এই কেক কাটা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ এই সংগঠনটির এই তৎপরতার কোনো খবর রাখেনি ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ ক্রিয়াশীল অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী এই দায় ছাত্র সংগঠনগুলোর উপর দিয়ে বলেছেন, তারা ছাত্রসমাজকে করতে দিল কেন?

অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী এরশাদের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলনের শুরুটা হয়েছিল ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। এরশাদকে হটাতে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের বৈঠকগুলো মধুর ক্যান্টিনেই হত।

এরপর ১৯৯০ এ অনেকটা ছাত্র সংগঠনগুলোর চাপেই রাজনৈতিক দলগুলো এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হয়, যার ফলে পতন ঘটে এই সামরিক শাসকের।

তার আগে এরশাদ ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে বললেও ছাত্র সমাজ নামে সংগঠনটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো করায়ত্ত করতে চেয়েছিল, কিন্তু তার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল।

তখন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠন, প্রশাসনের এক ধরনের মতৈক্যে ছাত্র সমাজকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পড়ে- এরশাদকে নিয়ে শিল্পী কামরুল হাসানের এই স্কেচ আলোচিত হয়ে আছে

 

সেই সংগঠনটির গোটা-বিশেক নেতা-কর্মী সোমবার বেলা ৩টার দিকে মধুর ক্যান্টিনে এরশাদের জন্মদিনের কেক কাটেন।

মধুর ক্যান্টিনের পরিচালক অরুণ দে ডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃষ্টি হওয়ার কারণে তখন অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা না থাকায় তারা জন্মদিন পালন করেছে। আমি নিজেও ছিলাম না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসমাজের আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আবদুর রহমান রোহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ বিকালে ৩টার এরশাদ স্যারের জন্মদিন পালন করেছি। সেখানে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিল।”

এর আগেও ক্যাম্পাসে নানা কর্মসূচি পালন করছেন বলে দাবি করেন রোহান।

ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি তুহিন কান্তি দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্যাম্পাসে ছাত্রসমাজ নিষিদ্ধ। তবে এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হওয়ায় ইদানিং ক্যাম্পাসে তারা কর্মসূচি পালন করার জন্য আসে।

“এর আগে একদিন ক্যাম্পাসে এসেছিল বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে। শুনতে পেয়ে কলাভবনের দিকে গিয়েছিলাম, কিন্তু তারা দ্রুত পালিয়ে যায়।”

বাংলাদেশে রাজনীতির পালাবদলে এখন এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূতের মর্যাদায় রয়েছেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনা ছিলেন তিন জোটের প্রধান নেতাদের একজন।

ছাত্র সমাজের এবারের কর্মসূচির খবর জানতেন না বলে তুহিন দাশ জানান। একই কথা বলেন অন্য সংগঠনগুলোর নেতারাও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি জানি না। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত মধুর ক্যান্টিনে ছিলাম। এরপর চলে আসি।” 

ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির বলেন, “মধুর ক্যান্টিনে যদি তারা কর্মসূচি পালন করে থাকে, তা নিন্দনীয়। এদের প্রতিহত করতে হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এরশাদের ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ১৯৯০ সাল থেকে নিষিদ্ধ। তারা ক্যাম্পাসে কোনো কর্মসূচির অনুমতি পাবে না। এমনকি করতেও পারবে না।”

মধুর ক্যান্টিনে এরশাদের জন্মদিন পালনের খবর জানালে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “মধুর ক্যান্টিনে নিষিদ্ধ সংগঠনটি জন্মদিন পালন করল, সেখানে ছাত্রলীগ এবং বাম ছাত্র সংগঠনগুলো করতে দিল!”