জঙ্গিবাদের ঘটনাগুলো বিশ্বাসযোগ্য নয়: মোশাররফ

গত কয়েক বছরে দেশ জুড়ে কুপিয়ে হত্যা ও গুলশান-শোলাকিয়ায় হামলার পর সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মধ্যে জঙ্গিবাদের ঘটনাগুলোকে ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2017, 03:32 PM
Updated : 20 March 2017, 07:41 PM

সোমবার বিকালে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “জঙ্গিবাদের যে ঘটনাগুলো ঘটছে, তার কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। যখনই সরকার কোনো সমস্যায় পড়ে, তখনই জনদৃষ্টিকে ভিন্নখাতে ধাবিত করার জন্য এই জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করছে।”

‘অন্যায়ভাবে গায়ের জোরে’ টিকে থাকার জন্য জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করছে অভিযোগ এনে সরকারই জঙ্গিবাদ তৈরি করেছে বলে দাবি মোশাররফের।

“জঙ্গিবাদ তাদেরই সৃষ্টি, তাদেরই নির্দেশে এই জঙ্গিবাদ এখানে প্রচার হচ্ছে। আর বিদেশে গিয়ে তারা (সরকার) বলতে পারছে, জঙ্গি সৃষ্টি করে তা দমনের নামে একটা নাটক করে দেখাতে পারছে যে, আমাদের ক্ষমতায় থাকা দরকার; আমরা থাকলে জঙ্গিবাদকে নির্মূল করব, জঙ্গিবাদকে আমরা মোকাবিলা করছি। জঙ্গিবাদ এই সরকারের সৃষ্ট বলে পত্র-পত্রিকার খবর থেকে আমরা বুঝতে পারি।”

সাম্প্রতিক কয়েকটি জঙ্গি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি নেতা মোশাররফ বলেন, “আজকে কেন প্রয়োজন হল এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর; কেন না আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারতে যাবেন। যেয়ে তো বলতে হবে, আপনারা দয়া করে তিনবারে ডেট পরিবর্তন করে আমাকে আসতে দিছেন, আমি যদি সেখানে না থাকি- এই যে দেখেন জঙ্গিবাদের অবস্থা, বাংলাদেশে সব জঙ্গি হয়ে যাবে। এই যে ক্ষমতায় থাকার যে একটা উছিলা সৃষ্টি- এটার জন্য এই ধরনের কর্মকাণ্ড হচ্ছে।”

ভারতকে ‘অত্যন্ত ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ’ হিসেবে অভিহিত করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ভারত যাচ্ছেন। এই ভারতের সাথে সুসম্পর্ক রাখা বিভিন্ন কারণে আমাদের প্রয়োজন। আমাদের যেখানে ন্যায্য দাবি, সেটা আমাদের পেতে হবে।

“সমঅধিকার ও সমসুযোগ সৃষ্টি করার মাধ্যমে যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করা হয়, সেটা সমান সমান বন্ধুত্ব। আমরা আশা করি, বর্তমান সরকার প্রধান সেই দিকটা চিন্তা করবেন এবং পদক্ষেপ নেবেন।”

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি প্রসঙ্গে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের জনগণের জন্য একমাত্র অগ্রাধিকার চুক্তি হচ্ছে, পানি চুক্তি। এটা আমাদের বাঁচা-মারার সাথে সম্পর্কিত। পানি না হলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। ফারাক্কার সমস্যার কারণে আমাদের কী হচ্ছে, তা টের পাচ্ছি।

“এখান আমরা তিস্তার পানি পাচ্ছি না, এটা আমাদের জীবন-মরণ সমস্যা। আমরা আশা করি তিস্তা চুক্তি হবে।”

‘সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা চুক্তির’ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা শুনতে পারছি, প্রতিরক্ষা চুক্তির ব্যাপারে নাকি আলোচনা হচ্ছে। ভারত সরকার বলছেন, প্রতিরক্ষা চুক্তি, বাংলাদেশ সরকার বলছেন, সমঝোতা স্মারক। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে প্রতিরক্ষা চুক্তি।

“আমাদের প্রশ্ন, জনগণের প্রশ্ন- আমাদের তিন দিকে বন্ধুপ্রতিম ভারত। সেখানে আমাদের কোন দিক থেকে নিরাপত্তার অভাব, যার জন্য একটা নিরাপত্তা চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক হতে হবে।”

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‍“আমরা বলতে চাই, এটা একটি স্পর্শকাতর বিষয়, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-নিরাপত্তার সাথে এটা সম্পর্কিত। এই বিষয়ে চুক্তি করতে হলে এদেশের মানুষকে জানিয়ে চুক্তি করতে হবে।

“এদেশে কেন নিরাপত্তার চুক্তি করতে হবে, তা জনগণকে জানিয়ে করতে হবে। জনগণকে অন্ধকারে রেখে কোনো চুক্তি হলে, দেশের জনগণ তা গ্রহণ করবে না।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘চেতনায় বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ সংগঠনের উদ্যোগে ‘স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন আইনজীবী ফারজানা শাকিলা।

খুব শিগগিরই খালেদা জিয়ার ‘সহায়ক নিরপেক্ষ সরকার’ এর রূপরেখা প্রকাশ করা হবে উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “ ওই সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন আর হতে দেওয়া হবে না।”

‘চেতনায় বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।