রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়নে বাধা ৩ ‘এম’: তারানা

রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়কে ‘প্রধান বাধা’ হিসেবে বর্ণনা করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, এসব বাধা টপকাতে প্রয়োজনে নারীকে ‘শান্ত ও মমতাময়ী’ ভাবমূর্তি বদলে ফেলতে হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকসাজিয়া আফরিনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2017, 05:24 AM
Updated : 12 March 2017, 05:24 AM

রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে শনিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি অভিযোগ করেন, পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বীরা অনেক ক্ষেত্রেই নারীদের বিরুদ্ধে জয়ী হতে ‘টাকা ও বাহিনীকে’ কাজে লাগান।

“আমার মনে হয়, রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়নে বাধা তিনটি ‘এম’- মেন, মাসল অ্যান্ড মানি। যখনই একজন নারী রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হতে চান বা নির্বাচনে অংশ নিতে চান তখন সঙ্গে সঙ্গে (পুরুষ) সহকর্মীরা তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যান।

“প্রতিদ্বন্দ্বীরা জয়ীও হন, কারণ কিছু ক্ষেত্রে তারা অর্থব্যয় করতে পারেন, তাদের বাহিনী থাকে যারা তাদের বিভিন্নভাবে প্রমোট করে এবং সেই সঙ্গে এলাকায় একটি আধিপত্যও সৃষ্টি করে।”

রাজনৈতিক দলগুলো নতুন নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার ঝুঁকি নিতে চায় না বলেও মন্তব্য করেন সংরক্ষিত নারী আসনের এই সংসদ সদস্য।

“ট্রেন্ডটা হচ্ছে, আপনারা দেখবেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির স্ত্রী বা কন্যাকে নমিনেশন দেওয়া এবং অন্য একজন নতুন নারী প্রার্থীকে নমিনেশন না দেওয়া। এর কারণ, ওই এলাকায় আগে থেকেই ওই মেয়েটির (জনপ্রতিনিধির স্ত্রী/কন্যা) একটি অবস্থান থাকে। পার্টি কিন্তু তখন আর রিস্ক নিচ্ছে না।”

এই ধারণা বদলে এখন ‘ঝুঁকি নেওয়ার সময় এসেছে’ বলে মন্তব্য করেন একসময়ের জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী তারানা হালিম।

“বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক রাজনীতি সচেতন, তারা সঠিক মানুষ বেছে নিতে জানে। তাই দলগুলোকে রিস্ক নিতেই হবে। না হলে আমরা এলাকাভিত্তিক লিডারশিপ সেভাবে তৈরি করতে পারব না।”

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিজের জীবনকে উদাহরণ হিসেবে হাজির করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে নারীকে তাদের ভাবমূর্তি বদলে ফেলতে হবে। 

“নারীরা খুব পোলাইট। বাট অ্যাট দা সেইম টাইম, বিলিভ মি, কেউ যদি অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে, আমাকে কোনোরকমভাবে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করে বা ঘুষ দেওয়ার কথা বলার মত ঔদ্ধত্য দেখায়, সে আমার এমন একটি চেহারা দেখবে, যা সে তার পিতামহ, প্রপিতামহসহ জন্ম-জন্মান্তরে সকলে মনে রাখবে।”

অভিনেত্রী থেকে রাজনীতিবিদ ও পরে প্রতিমন্ত্রী হওয়া তারানা বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে নিজের হতাশার কথা বলেন। 

“উইমেন এমপাওয়ারমেন্টের ক্ষেত্রে আমরা এখনো একটু পিছিয়ে আছি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি... আমি একজন ল‘ইয়ার। ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষের ছাত্রী থাকা অবস্থায়ই আমি যুবলীগের মহিলা সম্পাদিকা ছিলাম। আমি কন্টিনিউ করেছি আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার।

“এই কথাগুলো বলছি এজন্য যে, এই যে আমার ফ্যামিলি, এডুকেশন আর পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড- এই সমস্ত কিছু নিয়ে এসে আমি যখন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করি; তখন দেখেছি এইজ ইজ আ ফ্যাক্টর, অ্যাপিয়ারেন্স ইজ আ ফ্যাক্টর, এটা আমি চোখে দেখেছি।”

নারী হওয়ায় এবং বয়স তুলনামূলক কম হওয়ায় দায়িত্বের শুরুতে ‘কিছুটা সমস্যা’ হয়েছিল বলে জানান তারানা। 

“যখন আমি মিনিস্ট্রিতে গেলাম, তখন দেখলাম, অনেক বয়োজ্যেষ্ঠরা আছেন যাদের মধ্যে একটা সমস্যা কাজ করছে, আমার লিডারশিপটা মেনে নেওয়ার সমস্যা। আরও একটি সমস্যা দেখলাম, ধরেই নেওয়া হচ্ছে একজন নারী টেলিকমিউনিকেশনের টেকনিক্যাল বিষয় বুঝবে না। আই টুক ফিফটিন ডেইজ টু প্রিপেয়ার মাইসেল্ফ।

“আই ওয়ান্টেড টু প্রুভ মাইসেল্ফ... ১৫ দিন পর আমি যে মিটিংটা করেছি, বিলিভ মি, আমি তাদের প্রশ্ন করেছি, যে আপনি আমাকে বলেন এখানে ব্যান্ডউইথের স্পিড কত আছে, এখানে পপ কতটি আছে, কেন সরকার ঘোষিত টু এমবিপিএস এনশিওর করতে পারছি না... টেকনিক্যাল টিম গঠন করেন... অ্যান্ড দে স্টার্টেড লিসেনিং টু মি।”

তারানা হালিমের মতে, নারীদের প্রতি পদক্ষেপে নিজেকে প্রমাণ করে এগোতে হলেও পুরুষদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা হয় না।

“রাজনীতিতে তো নিজেকে প্রমাণ করতে হয়েছেই, যখন পরীক্ষা দিতে গিয়েছি এলএলএম, যেখানে আমি আগে সবসময় স্ট্যান্ড করেছি, অ্যান্ড আই ওয়াজ এক্সপেক্টিং আ ফার্স্ট ক্লাস দিস টাইম। আমাদের ইউনিভার্সিটির একজন টিচার এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘তুমি তো ফার্স্ট ক্লাস পাবেই, আমার নম্বরটা রেখে দাও’।

“আমি তখন থেকেই আমার ভ্যালুজ, এথিক্সের ব্যাপারে খুব স্ট্রং ছিলাম। তো আমি বললাম, না স্যার, আমার খাতা কথা বলবে, ফোন নম্বর না। সো আই ডিডনট গেট আ ফার্স্ট ক্লাস ইন মাই এলএলএম। বাট অ্যাট দ্যা সেইম টাইম, আই ওয়াজ প্রাউড।”

পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থায় ‘মানসিকতা পরিবর্তন’ই মূল চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন টেলিকম প্রতিমন্ত্রী।

“আমাদের যে মাইন্ড সেট, সেটা পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থার। একটা জিনিস দেখবেন, আমি খুব ফ্র্যাংকলি বলি, যখন একজন পুরুষ আসেন, সবাই ধরে নেয় যে সে কম্পিটেন্ট। যখন একজন মহিলা আসেন তাকে প্রমাণ করে আগাতে হয় যে সে কম্পিটেন্ট। অ্যান্ড দিস ইজ দ্যা বিগেস্ট হার্ড ওয়ার্ক।”