দল চাঙ্গা করতে ইনুর জাসদের সমাবেশ

নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে ভাঙনের একবছর পর দল ও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে প্রথমবারের মতো বড় সমাবেশ করতে যাচ্ছে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2017, 01:33 PM
Updated : 10 March 2017, 02:57 PM

‘জঙ্গি নির্মূল, ‍দুর্নীতি ও বৈষম্য অবসান সুশাসন ও সমাজতন্ত্র কায়েমের’ আহ্বান নিয়ে শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ হবে বলে জাসদের সহ-দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন জানিয়েছেন।

গত বছর ১২ মার্চ সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে শিরীন আখতারকে সাধারণ সম্পাদক করা নিয়ে দুই ভাগ হয় জাসদ। ইনু ও শিরীনের কমিটির পাশাপাশি কার্যকরী সভাপতি মঈনুদ্দীন খান বাদল, নাজমুল হক প্রধান ও শরীফ নুরূল আম্বিয়া আলাদা কমিটি ঘোষণা করলে বিভক্তি চূড়ান্ত হয়।

এরপর জাসদের দুই অংশই নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে নিজেদের মূল স্রোতধারা হিসেবে দাবি করে তাদের অনুকূলে মশাল প্রতীক বরাদ্দ চায়।

দুই পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে ১৩ এপ্রিল হাসানুল হক ইনু ও শিরীন আক্তারের নেতৃত্বাধীন জাসদকে মূলধারা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের মশাল প্রতীক বরাদ্দ দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

শনিবারের সমাবেশের বিষয়ে জাসদের (ইনু) এক জ্যেষ্ঠ নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সামনে নির্বাচন, আগামীকালের সমাবেশে এ বিষয়ে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য থাকবে। দলের নেতা-কর্মীদের অনুপ্রাণিত করতে সামনে আরও কর্মসূচি নেওয়া হবে।”

অন্যদিকে আম্বিয়া-প্রধানদের নেতৃত্বাধীন জাসদ দলীয় প্রতীক না পেলেও নিজেদের মূলধারা দাবি করে নানা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে আসছে।

নেতৃত্ব নিয়ে মতবিরোধের মুখে বিভক্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাসদের দু্ই অংশকে এক করতে একাধিকবার আলোচনা উঠলেও তা সফলতার মুখ দেখেনি।

সর্বশেষ ঐক্যের জন্য ইনুকে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার শর্ত দিয়েছেন অপর অংশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ডাকসুর সাবেক জিএস মুশতাক হোসেন।

তবে ঐক্যে রাজি থাকলেও কোনো শর্ত মানতে রাজি হননি ইনু নেতৃত্বাধীন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে রাজনৈতিক দল জাসদ প্রতিষ্ঠা হয় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তাদের কথিত তাত্ত্বিক নেতা সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে।

সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা ছিল জাসদের। এ লক্ষ্যে গণবাহিনী নামে তাদের সামরিক শাখাও তৈরি হয়। সেই গণবাহিনীর বিরুদ্ধে রাজনীতিবহির্ভূত সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ৩ থেকে ৭ নভেম্বরের ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে গৃহবন্দি সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে উদ্ধার করেন গণবাহিনীর সামরিক অধিনায়ক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল তাহের। পরবর্তীতে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বিচারের নামে কর্নেল তাহেরকে সামরিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আদালতের এক রায়ে একে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলে এর জন্য জেনারেল জিয়াকে দায়ী করা হয়।

জিয়ার শাসনামলে জাসদ দুইবার ভাঙে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল বেরিয়ে আলাদা জাসদ গঠন করেন। এরপর বেরিয়ে গিয়ে বাসদ গঠন করেন খালেকুজ্জামান ও আ ফ ম মাহবুবুল হক। সেই বাসদ এখন খণ্ড খণ্ড হয়ে টিকে আছে।

আশির দশকে আরেক সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের সময়ে জাসদ আবার ভাঙে। এক সময়ের ছাত্রনেতা আ স ম আব্দুর রব ও শাহজাহান সিরাজ আলাদা আলাদা জাসদ গঠন করেন।

রব সামরিক শাসক এরশাদের রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে ১৯৮৮ সালের সব দলের বর্জন করা নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা হন। এরপর বিএনপি ক্ষমতায় এলে শাহজাহান সিরাজ বিএনপিতে যোগ দেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যের সরকারে মন্ত্রী হন রব। তবে ২০০১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার সময় আওয়ামী লীগের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে এরশাদ ও কাদের সিদ্দিকীসহ পুরানো মিত্রদের জোটবদ্ধ করে রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন তিনি।

২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে এমপি হওয়ার পর সরকারের মন্ত্রীও হন ইনু। শিরিন আক্তারকে জাসদের সাধারণ সম্পাদক করার উদ্যোগের মধ্যে দলটির নাম দিয়ে সর্বশেষ এই ভাঙন হলো।