বিএনপি এলে থেমে যাবে উন্নয়ন: শেখ হাসিনা

উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সুমন মাহবুব সান্তাহার (বগুড়া) থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2017, 11:15 AM
Updated : 26 Feb 2017, 02:32 PM

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জেলা বগুড়ার সান্তাহারে রোববার আওয়ামী লীগের বিশাল এক জনসভায় তিনি বলেছেন, “বিএনপি-জামাত জোট আসলে এদেশে কোনো উন্নয়ন হবে না, সবই থেমে যাবে।”

বগুড়া জেলার এক গুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনের পর সান্তাহার স্টেডিয়ামে জনসভায় যান শেখ হাসিনা। সেখানেও অনেকগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের টানা আট বছরের শাসনে নানা উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতা থাকতে হবে।”

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসনামলের তুলনা করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর দল ক্ষমতায় গেলে জনগণ কিছু পায়, নইলে বঞ্চিত হতে হয়।

তিনি বলেন, “২০১৯ সালে যে নির্বাচন হবে.. উন্নয়নের ধারাবাহিকতা যদি বজায় রাখতে চান.. বিনা পয়সায় বই, কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা চান, নদী ভাঙা মানুষ ঘর চান, তাহলে নৌকা মার্কার ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি নির্বাচিত করে দেবেন।”

“আমি আপনাদের মাঝে আমার বাবা-মা, ভাইদের ভালোবাসা খুঁজে পাই। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবার সুযোগ করে দেবেন,” বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়ী করায় সান্তাহারবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন হবে।

সমাবেশস্থলে প্রধানমন্ত্রী নন্দিগ্রাম উপজেলা কমপ্লেক্সের সম্প্রসারিত ভবন ও হলরুম, শাহজাহানপুর থানা ভবন ও সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম ভবন, শিবগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, সোনাতলা উপজেলার সিচারপাড়া-৩ গুচ্ছগ্রাম, সারিয়াকান্দি উপজেলার ১২টি আশ্রয়ণপ্রকল্প, আদমদিঘী উপজেলায় সৌরবিদ্যুৎচালিত পাতকুয়ার মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম, জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস ভবন, বগুড়া সদর উপজেলার নুনগোলা ইউনিয়নে ১০ শয্যার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র উদ্বোধন করেন।

একই সঙ্গে সারিয়াকান্দি মহাসড়কে খৈলসাকুড়ি সেতু, বগুড়া-সারিয়াকান্দি মহাসড়কে জয়ভোগা সেতু, বগুড়া-সারিয়াকান্দি মহাসড়কে হাট ফুলবাড়ী সেতু, কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে সোনাতলা উপজেলায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা, কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে সারিয়াকান্দি উপজেলায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা, বগুড়া প্রেসক্লাব ভবন এবং সোনাতলা উপজেলা পরিষদের সম্প্রসারিত প্রশাসনিক ভবন ও হলরুমের ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করা হয়।

জিয়ার জেলা বগুড়ায় আরও উন্নয়নের সঙ্গে একটি বিশ্ববিদ‌্যালয় প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে নিজের জেলা গোপালগঞ্জের বঞ্চিত হওয়ার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

“বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে বাজেটে গোপালগঞ্জের জন্য বরাদ্দ দিয়েও পরে তা কেটে রাখা হত। আমরা সুষম উন্নয়ন করছি।”

২০২১ সালের মধ্যে দেশের প্রত্যেকটি ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার লক্ষ‌্যে সরকার কাজ করছে করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রত্যেক উপজেলায় মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা ইসলাম ধর্মের মান-মর্যাদা নিশ্চিত করতে চাই। সেভাবেই আমরা কাজ করছি।”

শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের জন্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

“সবাইকে অনেক কষ্টে বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। ছেলেমেয়েদের মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের দিকে গেলে চলবে না। বাবা-মা’র আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে। দেশের সেবা করতে হবে।”

আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী মৃধার সভাপতিত্বে এই জনসভায় বক্তব্য রাখেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন, জাতীয় সংসদের হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার, সাংসদ আব্দুল মান্নান, সাংসদ হাবিবুর রহমান, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান মজনু, সাংসদ আব্দুল মালেক, সাংসদ সাধন মজুমদার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার শামসুল আলম, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন।

এর আগে সান্তাহারে বাংলাদেশের প্রথম সৌরবিদ্যুৎ সুবিধাসহ ২৫ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার বহুতল খাদ্য গুদাম উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ২০০৯ সালে জাইকার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় উন্নত প্রযুক্তির চাল সংরক্ষণাগার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সড়ক ও রেলপথ অবকাঠামো বিবেচনা করে কৌশলগত স্থান হিসাবে নওগাঁ ও বগুড়ার মধ্যবর্তী সান্তাহারকে বেছে নেওয়া হয় এ প্রকল্পের জন্য।

এই খাদ্যগুদামের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। এই অঞ্চলের মানুষ যেনে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, সে ব্যবস্থা করেছি।”

সান্তাহারের এই খাদ্যগুদামকে দক্ষিণ এশিয়ার ‘সবচেয়ে চমৎকার’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কৃষকরা এখন শস‌্যের ন্যায্য মূল্য পাবে।