রোববার ঢাকার তোপখানা রোডে বিআরটিএ-এর মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম দেখতে এসে এক সপ্তাহ আগের ওই ঘটনা নিয়ে আবারও সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের।
প্রথমে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে নো কমেন্ট, কারণ সংসদ সদস্য বলে দিয়েছেন, এরপর আর বলার কিছু থাকে না। এসব বিষয় নিয়ে অযথা... করবেন না।”
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে কর্মীসভা শেষে শনিবার রাতে ঢাকায় ফেরার পথে বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রান্তে যমুনা রিসোর্টে যাত্রাবিরতি করেন সেতুমন্ত্রী কাদের। সেখানেই রাত পৌনে ৯টার দিকে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে এমপি ছানোয়ারকে চড় ও ঘুষি মারেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে কয়েকটি পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে খবর প্রকাশিত হয়।
টাঙ্গাইলের এমপি মো. ছানোয়ার হোসেন পরদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, মন্ত্রী শুধু নেতা-কর্মীদের ভিড় আর স্লোগানে বিরক্ত হয়ে ‘রাগারাগি করেছেন’, লাঞ্ছিত করার খবর ‘সঠিক নয়’।
রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রথমে ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করতে রাজি না হলেও পরে বলেন, “আওয়ামী লীগ একটি পরিবার, আমার কর্মীকে শাসন করার অধিকার আমার আছে, কিন্তু তার গায়ে হাত দেওয়ার অধিকার নেই।”
এ বিষয়ে প্রশ্নে স্পষ্টতই বিরক্ত মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “ওখানে কি কোনো সাংবাদিক ছিল? সাজিয়ে গুছিয়ে, এটা কি কোনো আনুষ্ঠানিক সভা ছিল? যেখানে সংসদ সদস্য অস্বীকার করছেন, সেটা নিয়ে এতো তেতো বানানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না। এ বিষয়টি প্লিজ ড্রপ করুন।”
‘সাজা হবে ধরেই নিচ্ছেন কেন?’
দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না, সেই বিতর্কে যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের।
তিনি বলেছেন, “আমি বুঝি না বিএনপি নেতারা কেন ধরেই নিয়েছেন যে মামলায় বেগম জিয়ার দণ্ড হবে, সাজা হবে...। সব কিছু যদির মধ্যে আছে, মামলা হয়েছে, দণ্ড হতেও পারে, নাও হতে পারে। আদালত তাকে খালাসও দিয়ে দিতে পারে। আমি আগাম মন্তব্য করব কীভাবে?”
ঢাকার জজ আদালতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার কাজ শেষ পর্যায়ে। বিএনপি নেতারা বলে আসছেন, খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য করতে তাকে সাজা দেওয়ার ‘সরকারি ষড়যন্ত্র চলছে’।
এ নিয়ে দুই দলের নেতাদের পাল্টাপাল্টি নানা মন্তব্যের মধ্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা মওদুদ আহমদ শনিবার বলেন, খালেদার সাজা হলেও নির্বাচনে অংশ নিতে তা বাধা হবে বলে তিনি মনে করেন না।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে কাদের বলেন, “এ মুহূর্তে তো এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাচ্ছে না। যদি কারও দণ্ড হয়, নিম্ন আদালতে রায় হলে সে রায় উচ্চ আদালতের পর্যায়ে যেতে ইলেকশনের সময় এসে যাবে, হয়তো তিনি এ বোধ থেকে মন্তব্যটা করেছেন।”
ধর্মঘট ‘অযৌক্তিক’
সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মনিরসহ পাঁচজনের মৃত্যুর দায়ে বাসচালকের যাবজ্জীবন সাজার প্রতিবাদে খুলনার দশ জেলায় রোববার শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটকে ‘অযৌক্তিক’ বলেছেন ওবায়দুল কাদের।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তারা আমার কাছে পরামর্শ চেয়েছে, আমি তাদের পরিষ্কারভাবে বলেছি, আদালতের যে রায়, এ রায় অমান্য করা উচিত নয়। তারা যদি আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট না হন, তারা উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন। সে সুযোগ রয়ে গেছে। সে সুযোগ কাজ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছি।”
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা আঞ্চলিক কমিটির ডাকে রোববার সকাল থেকে এই ধর্মঘটের কারণে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
ওই সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি নৌমন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেছেন, “শ্রমিকরা সংক্ষুব্ধ হয়ে কোনো কিছু করতেই পারে। তবে আমরা আশা করি, তারা যা করবে তা আইন কানুনের মধ্যে থেকেই করবে।”
তবে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের বলেছেন, “অযৌক্তিক এ ধর্মঘট-হরতাল জনগণের ভোগান্তি বাড়াবে, জনগণের কোনো লাভ হবে না।
গ্যাসের দাম বাড়ছে মার্চ থেকে; পরিবহন ভাড়াও বাড়বে কিনা জানতে চাইলে কাদের বলেন, “যখন গ্যাসের দাম বাড়ে, তখন তো পরিবহনে এর প্রতিক্রিয়া হয়। এ মুহূর্তে কিছু বলতে চাইছি না, অনেক সময় দাম বাড়ানোর পরও আমরা ভাড়া বাড়াইনি।”
মন্ত্রী বলেন, পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণে বিআরটিএর একটি কমিটি আছে। ভাড়া বাড়াতে হবে কি না- সে বিষয়ে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই তারা সিদ্ধান্ত দেবে।