বিইআরসিকে নিয়ে প্রশ্ন; ‘গণশুনানি’র ঘোষণা সিপিবি-বাসদের

জ্বালানি খাতের ন্যায্য বিপণন তদারককারী কর্তৃপক্ষ বিইআরসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে গ্যাসের দাম নিয়ে নিজেদের উদ্যোগে গণশুনানি করার ঘোষণা দিয়েছে সিপিবি ও বাসদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2017, 08:23 AM
Updated : 25 Feb 2017, 08:36 AM

গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে আধাবেলা হরতাল ডাকার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে শনিবার বাম দল দুটির সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

গণশুনানি নেওয়ার পর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বৃহস্পতিবার বিভিন্ন খাতে গ্যাসের দাম মার্চ ও জুনে দুই ধাপে গড়ে ২২ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। কিন্তু তাতে আবাসিক গ্রাহকদের রান্নায় ব্যবহৃত গ্যাস ও বাণিজ‌্যিক সংযোগে দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ।

এর প্রতিবাদে শুক্রবারই হরতালের ঘোষণা দেয় সিপিবি-বাসদ।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বিইআরসির সমালোচনা করে বলেন, “এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ সংস্থা হিসেবে ভূমিকা পালন করার কথা। কিন্তু থলের বিড়াল বের হয়ে গেল গতকাল দুজন মন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে।

“দুই মন্ত্রীই বলেছেন যে, সরকারের পক্ষ থেকে দাম বৃদ্ধির যে সুপারিশ করা হয়েছিল সে অনুযায়ীই গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।”

বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, “যে প্রক্রিয়ায় দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, সেটাকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি বলা চলে না। এখানেও স্বেচ্ছাচার করা হয়েছে।”

গ্যাসের দাম কমানোর প্রস্তাব নিয়ে বেসরকারিভাবে গণশুনানির ঘোষণা দিয়ে সিবিবি সভাপতি বলেন, শিগগিরই এর দিনক্ষণ জানানো হবে।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যা বিধানের যে কথা মন্ত্রীরা বলছেন, তার সমালোচনা করেন সিপিবি সভাপতি সেলিম।

তিনি বলেন, “আমরাও সামঞ্জস্য বিধান চাই। দেখি অর্থমন্ত্রী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘোষণা দিক, যেসব মন্ত্রী-এমপি ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি কিনেছেন সামঞ্জস্য বিধানের জন্য তাদের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করা হোক।

“মন্ত্রী-এমপিদের যে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে, তার সাথে সামঞ্জস্য  রেখে গার্মেন্টসসহ সমস্ত শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হোক।”

বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, এই মূল্য বৃদ্ধিতে সরকার বছরে বাড়তি লাভ করবে ৪ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। অন্যরদিকে জনগণের ক্ষতি হবে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার উপরে।

“দুর্নীতি, অপচয়, অব্যবস্থা, মাথাভারী প্রশাসনের চাপ জনগণের উপর চাপিয়ে দিতেই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে একটি হিসাব দিয়ে বলা হয়, ২০১৫-১৬ গ্যাস বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ১৬ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। সরকার ভ্যাট নিয়েছে ৫৫ শতাংশ, লভ্যাংশ নিয়েছে ২ শতাংশ, আগাম কর্পোরেট ট্যাক্স ৩ শতাংশ, সম্পদমূল্য মার্জিন ১৫. ৯৬ শতাংশ, গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড বাবদ ৫.১৪ শতাংশ অর্থাৎ মোট ৮১.১০ শতাংশ সরকার নিয়ে নিয়েছে। এর অর্থমূল্য দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা।

“পরিচালন ব্যয় বাদ দিলে কোম্পানির লাভ ৫ শতাংশ বা ৮৩১ কোটি টাকা। গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে জমা আছে ১৯ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। লাভ হওয়া সত্ত্বেও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কেন?”

গৃহস্থালিতে গ্যাস সরবরাহে সরকারের হিসাব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দল দুটি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “দুই চুলায় মাসে ৯২ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহারের হিসাব ধরা হলেও বাস্তবে গড়ে গ্যাস ব্যবহার করা হয় ৪৫ ঘনমিটার। অর্থাৎ ব্যবহারকারীরা ৪৭ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার না করেও দাম ঠিকই দিয়ে যাচ্ছে।

“অপরদিকে বর্তমানে দুই চুলার জন্য বিল দিতে হয় ৬৫০ টাকা, যার ৫৫ শতাংশ ভ্যাট অর্থাৎ গ্যাসের দাম ২৯৩ টাকা আর ভ্যাট বাবদ সরকার নেয় ৩৫৭ টাকা। সরকারকে এই বিপুল পরিমাণ ট্যাক্স দেওয়ার পরও গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কেন?”

গ্যাসের দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে পিছু হটার আহ্বান জানিয়ে দল দুটি বলেছে, তা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র ও পরীক্ষার্থীদের যাতায়াত হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। রাজধানীতে হরতালের পাশাপাশি সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিবির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যর লক্ষ্মী চক্রবর্তী, কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, রফিকুজ্জামান লায়েক, অনিরুদ্ধ দাস অঞ্জন, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশিদ ফিরোজ, রাজেকুজ্জামান রতন, জাহেদুল হক মিলু, আব্দুর রাজ্জাক, খালেকুজ্জামান লিপন উপস্থিত ছিলেন।