২৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণার দাবি বিএনপির

সীমান্তরক্ষা বাহিনীর সদরদপ্তর পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের দিন ২৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2017, 12:51 PM
Updated : 24 Feb 2017, 12:59 PM

শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই দাবি জানান।

তিনি বলেন, “২০০৯ সালেল ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ৫৭ জন গর্বিত সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার যে নির্মম ও মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, তা জাতির জন্য খুবই বেদনাদায়ক ও শোকাবহ।

“আমি বিএনপির পক্ষ থেকে পিলখানায় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণার জোর দাবি জানাচ্ছি।”

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সীমান্তরক্ষা বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) সদরদপ্তরে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হয়। রক্তাক্ত ওই ঘটনার পর সীমান্তরক্ষা বাহিনীর নাম বদলে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

ওই ঘটনার মামলায় বিডিআরের নিজস্ব আইন ও ফোজদারি আইনে ৬ হাজারের বেশি আসামির মধ্যে ৫৯২৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের মামলায় ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় বিশেষ জজ আদালত। বর্তমানে মামলার রায় উচ্চ আদালতের শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

তবে পিলখানার ওই ঘটনার কারণ উৎঘাটিত হয়নি দাবি করে তাতে ক্ষমতাসীনদের অনেকেই জড়িত ‘শোনা যায়’ বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা রিজভী।

তিনি বলেন, “পূর্ব পরিকল্পিত পিলখানার ঘটনায় হত্যাকাণ্ডে অনেকের সাজা হয়েছে, আবার অনেকেই অধরায় থেকে গেছেন। এই ঘটনার সাথে ক্ষমতাসীনদের অনেকের জড়িত থাকার কথা শোনা গেলেও সেগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পুরো বিষয়টা এখন রহস্যের কুয়াশায় ঢাকা।

“একটি জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার প্রতীক সেনাবাহিনীকে এভাবে দুর্বল করায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত থাকতে পারে। পিলখানা ট্র্যাজেডির উচ্চ পর্যায়ের একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে এর রহস্য উদঘাটন করা উচিৎ বলে আমরা মনে করি। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তদন্ত হয়েছে বলে আমরা মনে করি না।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আজিজুল বারী হেলাল, মনির হোসেন, শাহিন শওকত উপস্থিত ছিলেন।

সেনা তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি

এদিকে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ না করার সমালোচনা করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

‘বিডিআর ট্র্যাজেডি: বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব’ শীর্ষক রাজধানীতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “২৫ ফেব্রুয়ারির বিয়োগান্ত ঘটনাটি প্রকৃতপক্ষে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ফলোশ্রুতি।

“যারা বাংলাদেশকে দুর্বল দেখতে চায়, যারা বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ধস নামাতে চায় সেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মীরজাফর চক্র এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটিয়েছে।”

পিলখানায় ওইদিনের ঘটনা শুরুর পর সরকারের তা সামলাতে ব্যর্থ হওয়ায় হত্যাকারীর উৎসাহিত হয়ে দুইদিন ধরে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা চালিয়ে যায় বলে দাবি করে অবসরপ্রাপ্ত এই মেজর বলেন, “এরা সবাই (নিহত সেনা কর্মকর্তারা) ছিল সেনাবাহিনী উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক।”

হাফিজ উদ্দিন বলেন, “বিডিআরে এই ঘটনার ক্ষতিগ্রস্ত সংগঠন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি তদন্ত রিপোর্ট সম্পাদন করা হয়েছিল। লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে ওই তদন্ত রিপোর্ট আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।

“এ ধরনের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কারণ সম্পর্কে যদি দেশবাসী কিছুই জানতে না পারে, তাহলে কী ধরনের রাষ্ট্রে আমরা বসবাস করছি?”

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়নে এই আলোচনা সভায় আয়োজন করে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ।

সভায় ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানির সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মূর্তজা, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমান, ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া বক্তব্য রাখেন।