গ‌্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ বিএনপির; কর্মসূচি ‘পরে’ 

গ্যাসের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলেছে, গণবিরোধী এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে ‘পরে’ কর্মসূচি দেবে তারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2017, 03:44 PM
Updated : 23 Feb 2017, 04:05 PM

বৃহস্পতিবার বিইআরসি গ‌্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পরপরই প্রতিবাদ জানাতে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “মোটা বাজেটের অর্থ জোগান দিতে জনসমর্থনহীন সরকার জনগণের পকেট কেটে বল্গাহীন রাজস্ব আহরণের জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।”

‘জনগণকে জিম্মি করে রাজস্ব আদায়ের সরকারি এই সিদ্ধান্ত দেশের মানুষ মেনে নেবে না’ উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, “আমরা গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে সরকারের এহেন অনৈতিক, অযৌক্তিক, গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিলের জোর দাবি জানাচ্ছি।”

কোনো কর্মসূচি দেবেন কি না- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে ফখরুল বলেন, “এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরে আপনাদের জানানো হবে।”

বিইআরসির ঘোষণা অনুযায়ী, আবাসিক গ্রাহকদের আগামী ১ মার্চ থেকে এক চুলার জন্য মাসে ৭৫০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা দিতে হবে, যা এতদিন ছিল যথাক্রমে ৬০০ টাকা ও ৬৫০ টাকা। দ্বিতীয় ধাপে ১ জুন থেকে এক চুলার জন্য মাসিক বিল ৯০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৯৫০ টাকা হবে।

গৃহস্থালিতে মিটারে যারা গ‌্যাসের বিল দেন, তাদের মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটার গ‌্যাস ব‌্যবহারের জন‌্য ৯ টাকা ১০ পয়সা এবং জুন থেকে ১১ টাকা ২০ পয়সা করে দিতে হবে। এতদিন প্রতি ঘনমিটারে তাদের বিল হত ৭ টাকা করে।

অর্থাৎ, রান্নার গ‌্যাসের জন‌্য চুলাভিত্তিক গ্রাহকদের প্রতি মাসে ৫০ শতাংশ এবং মিটারভিত্তিক গ্রাহকদের ৬০ শতাংশ বেশি অর্থ খরচ হবে।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফখরুল বলেন, “বিএনপি আমলে ১৯৯৩ সালের ২৩ নভেম্বর জারিকৃত রাজস্ব বোর্ডের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বিদেশি কোম্পানি তথা আইওসির গ্যাসকে শুল্ক-ভ্যাটমুক্ত করা হয়, অথচ এখন সে গ্যাসকে শুল্ক-ভ্যাটযুক্ত করে সরকারের নির্দেশে পেট্রোবাংলা গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করে, যার অভিঘাত ভোক্তাদের উপর পড়বে।

“এই অযৌক্তিক প্রস্তাব মানতে গিয়ে একদিকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে গ্যাসখাতের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে জনগণের উপর বর্ধিত করের বোঝা চাপানো হচ্ছে। আসলে রাজস্ব ঘাটতি পুরণ করতে গিয়ে সরকার দিগ্বিদিকশূন‌্য হয়ে সব ক্ষেত্রের করের বোঝা বৃদ্ধির অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে।”

সরকারের জ্বালানি নীতির সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার প্রায় সব ক্ষেত্রে জ্বালানি সঙ্কট নিরসনের জন্য আমদানিনির্ভর নীতি গ্রহণ করেছে। এজন্য তারা কয়লা আমদানি করছে, আমদানি করছে এলএনজি, ফার্নেস অয়েলসহ বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি। এরফলে জ্বালানি নিরাপত্তা বহুমুখীকরণ হুমকির মুখে পড়বে।

এক বছরের মধ্যে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ‌্যায়িত করে তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হলে অর্থনীতি হোঁচট খাবে। রপ্তানিমুখী পোশাকখাত, বস্ত্রখাতসহ সার্বিক শিল্পখাতে উৎপাদন ভয়াবহ সঙ্কটে পড়বে।

“বেড়ে যাবে পরিবহন ভাড়া। চাপে পড়বে গরিব মানুষ।”

গ্যাস সংযোগ না পেয়ে শিল্পে বিনিয়োগ আটকে থাকার মধ‌্যে নতুন করে দাম বৃদ্ধিতে চালু কল-কারখানাও বন্ধ হয়ে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন ফখরুল।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার পর সরকার দেশে তা কমায়নি। এক বছরের ব‌্যবধানে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পর বিদ্যুতের দামও সরকার আবার বাড়াতে পারে বলে শঙ্কিত বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল ২০১৪ সাল নাগাদ বিদ্যুতের দাম কমিয়ে আনবে, সেরকম একটা রোড ম্যাপও ছিল, কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। তারা অগ্রসর হয়েছে বল্গাহীনভাবে রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ‌্যে লাভ ও লোভের রোডম্যাপ ধরে।”

গ্যাসের মূল্য না বাড়িয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করে পুরনো যন্ত্রপাতি ওভারওলিং করে গ্যাসের অপচয় বন্ধ করাটাই প্রাধান্য পাওয়া উচিৎ বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, গত আগস্টে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের গণশুনানিতে অধিকাংশ স্টেকহোল্ডার গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেছিল।

“আমরা আশা করেছিলাম, নতুন করে আর গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হবে না। কিন্তু সরকার মাত্র ১৮ মাসের ব্যবধানে গ্যাস দাম বৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিল!”

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুলের সঙ্গে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ, আ ন হ আখতার হোসেন, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।