একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বুধবার আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা বলেন, “ভাষার প্রতি তার (খালেদা) সম্মানই নেই। শহীদ মিনার, একটি পবিত্র জায়গা। ওই শহীদ মিনারে আমরা যেখানে ফুল দিয়েছি। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ফুল দিয়েছেন। আমি ফুল দিয়েছি। মাননীয় স্পিকার ফুল দিয়েছেন। অসংখ্য নেতারা ফুল দিয়েছেন। বিএনপি নেত্রী তার স্ব-দলবল নিয়ে ঠিক ওই জায়গাটায় উঠে দাঁড়িয়েছেন।
“যেখানে সবাই ফুল দেবে, সেই বেদীতে যদি উঠে যায় তাহলে, তিনি ফুলটা দিলেন কোথায়? নিজের পায়ে দিয়ে এলেন কি না, সেটাই প্রশ্ন?”
“এভাবে গিয়ে অপকর্ম করে আসল। শহীদ দিবসের মর্যাদা নষ্ট করে দিয়ে আসল।”
বাংলা ও বাঙালির ‘সত্যিকার’ ইতিহাস লেখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে এ প্রসঙ্গে ১৯৭১ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য তুলে ধরেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “তিনি (বঙ্গবন্ধু) ওই সময় যে কথাটি বলেছিলেন, আমার মনে হয় তা এখনো এই মুহূর্তে আমাদের জন্য প্রযোজ্য। কারণ, জাতির পিতাকে হত্যার পর আমাদের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে।
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা অস্বীকার করার প্রবণতা রয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “উনি (বঙ্গবন্ধু) তো ভাষা আন্দোলনের সময় কারাগারে ছিলেন, উনি কিসের নেতৃত্ব দিলেন- একথাও আমাদের শুনতে হয়েছে। যারা পাকিপ্রেমিক তারা তো ইতিহাস বিকৃত করেই। আমাদের মধ্যেও অনেকে ইতিহাস বিকৃত করেছে।”
পাকিস্তান শাসনামলে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের কবিতাও বিকৃতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মহাশ্মশানের জায়গায় লেখা হয় গোরস্থান। ‘সকালে উঠে আমি মনে মনে বলি’ এর স্থলে লেখা হয় ‘ফজরে উঠে আমি দেলে দেলে বলি’।
“এগুলো আমরা নিজেরাই জানি। আমরা এর ভুক্তভোগী। বরীন্দ্রনাথ তো এক সময় বন্ধই করে দিল। রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া যাবে না, রবীন্দ্রনাথ পড়া যাবে না।”
রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই আলোচনায়ও প্রধানমন্ত্রী ইংরেজি ঢঙে বাংলা বলার প্রবণতা ত্যাগ করার কথা বলেন।
“বাংলা বললে ঠিকমত বাংলা বলতে হবে। ইংরেজি ধ্বনি দিয়ে বাংলা বলা; এটা পরিহার করতে হবে।”
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দ্র মজুমদার ও আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মেরিনা জাহান বক্তব্য দেন।
‘তোমার মুক্তির জন্য হে সুন্দর’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন নির্মলেন্দু গুণ।