অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে নিজেকেই পড়তে হয়: রিজভী

খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব‌্যে ‘প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার পরিকল্পনা’ প্রকাশ পেয়েছে মন্তব‌্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে নিজেকেই পড়তে হয়।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2017, 09:39 AM
Updated : 19 Feb 2017, 09:39 AM

আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ‘আদালতকে প্রভাবিত করছেন’ বলেও রিজভী অভিযোগ করেছেন।

রোববার দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “দেশনেত্রীর সাজা হবে- উনারা (সরকার প্রধান) কী করে জানছেন? এটা সরকারি দল এবং সেই দলের যিনি প্রধান, তার হচ্ছে মনের বাসনা, প্রতিহিংসার চরিতার্থ করার এটা একটা পরিকল্পনা।

“অন্যকে কষ্ট দিলে, অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে নিজেকেই সেই গর্তে পড়তে হয়- সেই কথাটা আমি তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সোয়া পাঁচ কোটি টাকা দুর্নীতির দুই মামলা এখন বিচারের শেষ পর্যায়ে। জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের টাকা আত্মাসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলা দুটি চলছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, “খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার কিংবা জেলে পাঠানোর কোনো ভাবনা সরকারের নেই। আদালতে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে সে কারাগারে যাবে কি না, সে মাফ পাবে কি না সেটা আদালত বলতে পারবে। সময় ও স্রোত যেমন কারো জন্য অপেক্ষা করে না, তেমনি বাংলাদেশের সংবিধান ও নির্বাচন কারও জন্য অপেক্ষা করবে না।”

এর প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, তাদের চেয়ারপারসনকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন ‘হতে পারবে না’।

“সংবিধানের দোহাই দিয়ে একতরফা ও বিতর্কিত নির্বাচন করার কোনো অপচেষ্টা জনগণ রুখে দেবে।”

ওইদিনই জার্মানির মিউনিখে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদালতে অপরাধ প্রমাণ হলে খালেদা জিয়ার শাস্তি হবেই।

“সেজন্য তারা ইলেকশনই হতে দেবে না। একটা চোর … এতিমের টাকা যে চুরি করে খায়, তাকে রক্ষার জন্য ইলেকশন হতে দেবে না। কতো আবদারের কথা, কতো আহ্লাদের কথা। এতো আহ্লাদ যখন, তখন গরীব মানুষের টাকা কয়টা দিয়ে দিলেই হত।”

এর প্রতিক্রিয়ায় রোববারের সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আবারও বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না, হতে পারে না, হতে পারবে না- এটা আমি সুস্পষ্টভাবে আপনাদের সামনে জানিয়ে দিলাম।”

বর্তমান নিয়মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যাবে কিনা জানতে চাইলে রিজভী বলেন, “আমরা এ ব্যাপারে স্পষ্টভাবে বলেছি, সেই সরকারের নাম যেটাই হোক, সেটা নির্দলীয় সরকার হতে হবে, সেই সরকারটি অবশ্যই দলনিরপেক্ষ হতে হবে। যেখানে মানুষ মনে করবে যে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে, প্রভাবমুক্ত হবে, সুষ্ঠু হবে, অংশগ্রহণমূলক হবে এবং স্বচ্ছ হবে, সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে।”

রিজভীর অভিযোগ, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। জরুরি অবস্থার সময় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলা তুলে নেওয়া হলেও খালেদার মামলা চালানো হচ্ছে ‘কেবল তাকে হয়রানি করার জন্য’।

“প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, আইন-বিচার-প্রশাসন সব কিছুই তার করায়ত্বে এবং সেজন্য মামলা ও শাস্তি দেওয়া তার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে।... তিনি নির্ধারণ করে দিয়েছেন, বিরোধী দল হলে তার শাস্তি পেতেই হবে। আর আদালত কর্তৃক সাজা হলেও মন্ত্রীরা তাদের মন্ত্রিত্ব বহাল তবিয়তে রাখতে পারবেন।”

ঢাকার বিভিন্ন সড়কে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি এবং নির্মাণ কাজের কারণে ‘ধুলি দূষণ’ নিয়েও সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির জ‌্যেষ্ঠ ‍যুগ্ম মহাসচিব। 

“দুই মেয়র ঢাকাকে গ্রিন ঢাকা ও ক্লিন ঢাকায় পরিণত করার ঘোষণা দিলেও ধুলোয় উড়ছে ঢাকা। ঢাকা এশিয়ার দ্বিতীয় ধুলিদূষণের নগরীতে পরিণত হয়েছে। ...আওয়ামী মেয়র সাহেবরা নগরবাসীকে ভয়াবহ দুর্ভোগে নিপতিত করার আমি বিএনপির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে অন‌্যদের মধ‌্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ ও তাইফুল ইসলাম টিপু উপস্থিত ছিলেন।