রাজনীতিকদের মামলা স্থগিত করে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ চান বি চৌধুরী

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দলের জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরিতে তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা রাজনৈতিক মামলা দুই বছরের জন্য স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2017, 06:40 PM
Updated : 18 Feb 2017, 02:57 PM

শুক্রবার বিকালে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তো করতে হবে। বিএনপির সাঙ্গ-পাঙ্গ, বাচ্চা-কাচ্চাসহ কত হাজার মামলা যে আছে, গড নোজ। এত হাজার হাজার মামলা থাকলে নির্বাচন করবে কীভাবে? এটা হয় না।

“আমি বলব, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে হলে সমস্ত মামলা আগামী দুই বছর বন্ধ, স্থগিত করে দেন। দুই বছর পর আবার বিচার করুন, কোনো অসুবিধা নাই। রাজনৈতিক সব মামলা অবিলম্বে স্থগিত করার ঘোষণা দেন। সরকার, সুপ্রিম কোর্ট-হাই কোর্টসহ সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তারা সবাই এজন্য ব্যবস্থা নেন। তাহলে আমরা মনে করি, মোর অর লেস লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে।”

আগামী নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ করতে নির্বাচনকালীন ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের প্রস্তাব দেন বি চৌধুরী।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাব বিএনপি নেত্রীর গ্রহণ না করাকে ‘চরম ভুল’ বলে মন্তব‌্য করেন তিনি।

বি চৌধুরী বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সময়ে যে অফার দিয়েছিলেন, যেটা খালেদা জিয়া গ্রহণ করেন নাই। এটা বিগ পলিটিক্যাল মিসটেক, বিরাট রাজনৈতিক ভুল।

“তখন যদি উনি (খালেদা জিয়া) গ্রহণ করতেন, পাঁচ-পাঁচ… সরকার ও বিরোধী। বিরোধী দলকে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দেওয়া হবে, এই দুইটা থাকলে আর কিছু লাগে?”

বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকালীন ‘একমাত্র জাতীয় সরকার ছাড়া’ অন্য কোনো নিরপেক্ষ সরকার হতে পারে না- মন্তব্য করে সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা বলেন, “ওই সহায়ক-টহায়ক এগুলো… শব্দ নাই কোথাও। যদি জাতীয় সরকার গঠন করা যায়, সমস্ত ভালো ভালো লোক ও সব দল নিয়ে একটা সরকার গঠন করা যায়, তাহলেই একটা ভালো নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি এখন নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকারের’ দাবি তুলছে।

বিষয়টি স্পষ্ট না করলেও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে দাবি করে আসছে তারা।

‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচনের জন‌্য নির্বাচন কমিশন নয়, সরকারে কারা থাকবেন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বি চৌধুরী।

বিকল্পধারা সভাপতি বলেন, “আমরা ভোটে বিশ্বাস করি, অন্য কোনো মাধ্যমে বিশ্বাস করি না। ভোট আসবে, জনগণকে আমাদের পক্ষে আনতে হবে। তাদের পক্ষে নিয়ে আমরা ভোটের মাধ্যমে জিততে চাই। মনে রাখতে হবে, জনগণ যখন একত্রিত হয়ে যায়, সংঘবদ্ধ হয়ে যায়, তখন কোনো ধরনের বেআইনি প্রশাসন তাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারে না।

“আমি নির্বাচন কমিশনের নামই তুলতেছি না। কেন জানেন? যতগুলো নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়েছে, ততগুলোতে নির্বাচন কমিশনে কে ছিল- তাদের নাম কারো মনে নাই ভালো করে। ওই সময়ে সরকারটা নিরপেক্ষ ছিল- এটাই মূল কথা। সেজন্য একটা নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন আগামী নির্বাচনে।”

মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানীর ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘জাতীয় স্মরণ মঞ্চ’।

ওসমানীকে নিয়ে বি চৌধুরী বলেন, “অনেক বড়মাপের মানুষ ছিলেন উনি। হৃদয় বড়, মানুষ বড়, অনেক বড় মাপের দেশপ্রেমিক ছিলেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সবচাইতে নেতৃত্বদানকারী মানুষ।

“যুদ্ধের পরে একটা ব্যাপারে সবার শ্রদ্ধা অর্জন করতে পেরেছিলেন, যখন তিনি বাকশালের বিরোধিতা করেছিলেন। তখন বাকশালের বিরোধিতা করা দুঃসাহসের ব্যাপার ছিল। উনি বাকশালে যান নাই। এতো বিশাল সাহসী মানুষ আমি আর কখনো দেখি নাই। উনি গণতন্ত্রের জন্য সাহস করে কথা বলতেন। আমি তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।”

এমএজি ওসমানী জাতীয় স্মরণ মঞ্চের আহ্বায়ক আ হ ম মনিরুজ্জামান দেওয়ানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব জাকির হোসেনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, আবদুল আউয়াল ঠাকুর, মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল বক্তব্য রাখেন।