সার্চ কমিটিকে বিতর্কিত করলে ক্ষতি বিএনপির: তোফায়েল

ইসি নিয়োগে রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটি নিয়ে বিএনপির ত্বরিত প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেছেন বাণিজ‌্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2017, 10:20 AM
Updated : 26 Jan 2017, 11:48 AM

এই কমিটিকে বিতর্কিত করলে বিএনপিরই ক্ষতি হবে বলে দলটিকে হুঁশিয়ার করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস‌্য প্রবীণ এই রাজনীতিক।

নতুন ইসি গঠনে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ সক্রিয় অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের পর রাষ্ট্রপতি বুধবার ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন।

এই কমিটির সদস‌্যদের সরকারের ‘পছন্দের লোক’ আখ‌্যায়িত করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদের মাধ‌্যমে গ্রহণযোগ‌্য ইসি গঠন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবির সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তোফায়েল বলেন, “আমরা যেটাই করি, সেটারই বিরোধিতা করে বিএনপি। অন‌্যদিকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিএনপি সন্তুষ্ট হয়েছিল এবং রাষ্ট্রপতির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিল।

“রাষ্ট্রপতি সকলের সাথে আলোচনা করেছেন এবং ছয়জন নিরপেক্ষ ব্যক্তির সমন্বয়ে এই সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। আমি মনে করি নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে।”

সার্চ কমিটির বিরোধিতা করা বিএনপির উচিৎ হয়নি মন্তব্য করে তোফায়েল বলেন, এই কমিটির প্রস্তাব থেকে অনধিক পাঁচজনকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি যে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, তাদের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে আসবে বলে তার ‘দৃঢ় বিশ্বাস’।

“এটাকে বিতর্কিত করলে ক্ষতিটা কিন্তু বিএনপিরই হবে। কারণ পরবর্তীকালে দেখা যাবে যেটাকে বিতর্কিত করেছেন তার কার্যকলাপের অধীনেই তারা নির্বাচনে গেছে।”

তোফায়েল বলেন, “আমি মনে করি (সার্চ কমিটি নিয়ে) বিএনপি যে প্রতিক্রিয়া তড়িৎ গতিতে দিয়েছে এভাবে প্রতিক্রিয়া দেওয়া ঠিক হয়নি। কারণ রাষ্ট্রপতি যেটাই করবেন সেটাকেই তারা বিরোধিতা করবে।

“একটা কাজ করা যেতে পারত- বিএনপি সার্চ কমিটির একটা লিস্ট দিত সেটা যদি রাষ্ট্রপতি করতেন তাহলে হয়ত তারা খুশি হতেন। কিন্তু সেটা তো বাস্তবসম্মত না।”

আওয়ামী লীগ আবারও ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করতে চায় বলে বিএনপি মহাসচিব যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা ঠিক নয় বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ

৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের আহ্বানে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাড়া না দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার ছেলে মারা যাওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী গিয়েছিলেন তিনি দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন।

“দরজা বন্ধ করা, আমাদের আহ্বানে সাড়া না দেওয়া, নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা এটাতে বিএনপির কত ক্ষতি হয়েছে এটা আজকে বিএনপি প্রকাশ না করলেও সেটা মর্মে মর্মে তারা উপলব্ধি করে।”

আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, “নির্বাচন না করলে তাদেরই ক্ষতি হবে। সেই নির্বাচনকে বিতর্কিত করে, সে বিতর্কিত নির্বাচনে অংগ্রহণ করা কি তাদের ঠিক হবে?”

‘অন্ধকার কেটে গেছে’

কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা সরকার ভালোমতো মোকাবেলার পর অতীতের যে কোনো সময়ের থেকে দেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে দাবি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বলেন, হলি আর্টিজনের ঘটনায় ৭ জন জাপানি বন্ধুর জীবন চলে গেছে সেজন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করেছি। কিন্তু এখন বাংলাদেশের অবস্থা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।

“কয়েকটি জায়গায় যে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, জঙ্গি তৎপরতা হয়েছিল সেটা আমরা নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছি এবং বাংলাদেশে এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। …কালো অন্ধকারটা কেটে গেছে।”

দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তোফায়েল বলেন, জাপান বাংলাদেশের ভালো বন্ধু। জাপানের ২৪০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করছে।

“জাপানে বাংলাদেশের রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আর জাপান বাংলাদেশে এক দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য দুই দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার এবং প্রতি বছরই তা বাড়ছে।”

জাপানি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের একটা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে জানিয়ে তোফায়েল বলেন, চীন, জাপান, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশকে আমরা একটি করে অঞ্চল দিতে চাই।

“জাপানের বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এদেশে বিনিয়োগ করলে আমরা তাদের বিভিন্ন সুবিধা দেব। জাপান আমাদের ‍দুটি পণ্য ছাড়া সব পণ্যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দিয়েছে।”