রোববার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “তেল-গ্যাস-খনিজ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি সুন্দরবন রক্ষায় আন্দোলন করছে অনেকদিন ধরে। তারা আগামী ২৬ জানুয়ারি ঢাকায় অর্ধদিবস হরতাল কর্মসূচি আহবান জানিয়েছে। আমি দেশের পক্ষে, দেশের মানুষের স্বার্থে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষে তাদের এই কর্মসূচির প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন করছি।”
রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান বন্ধের দাবিতে রাজধানীতে আগামী ২৬ জানুয়ারি সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আধাবেলা হরতাল আহবান করেছে তেল-গ্যাস-খনিজ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। সম্প্রতি তেল-গ্যাস-খনিজ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ চলছে। সুন্দরবনের কাছে হওয়ার কারণ দেখিয়ে শুরু থেকেই এ কেন্দ্রটির বিরোধীতা করছে বামপন্থী কয়েকটি সংগঠন।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। তবে সরকার,বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী এর আগেও বিভিন্ন বক্তব্যে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বলেছেন,এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না।
শুরু থেকেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বিরোধী আন্দোলনে রয়েছে তেল-গ্যাস খনিজ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। তাদের রামপালবিরোধী যে কোনো কর্মর্সূচিতে সমর্থন দেওয়ার কথা এর আগে জানিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, “শুধুমাত্র মুনাফাখোর ও দেশি-বিদেশি লুটেরার স্বার্থে আমাদের নির্মল বাতাসকে বিষাক্ত করা হবে এই সুন্দরবনবিনাশী রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের মাধ্যমে। বিশ্বের ঐতিহ্য, দেশের মানুষের প্রাকৃতিক রক্ষাবর্ম সুন্দরবন রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব।
সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফেরামের প্ল্যানারি সেশনে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শক্ত অবস্থানের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “রামপাল নিয়ে ডাভোসে প্রধানমন্ত্রী যা বলছেন, তাতে মনে হচ্ছে, তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল বিশেষজ্ঞদের অভিমতকে থোড়াই কেয়ার করেন।
“দেশকে দোজখে পরিণত করার লক্ষ্য পূরণই হচ্ছে তার পরিকল্পনা। ডাভোসে প্রধানমন্ত্রী যেসব তথ্য দিয়েছেন, তা সঠিক নয়।”
সম্প্রতি সুইজ্যারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক আলোচনায় রামপাল প্রসঙ্গ প্রশ্ন তোলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ আন্দোলনের নেতা আল গোর।
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন,সুন্দরবন এর আশপাশের পরিবেশ সংরক্ষণ করেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি আল গোরকে বাংলাদেশ সফর করে প্রকল্প এলাকা নিজ চোখে দেখারও আমন্ত্রণ জানান।
রিজভীর সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।