ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা পূরণের ইসি হলে গ্রহণযোগ‌্য হবে না: খালেদা

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চাওয়া অনুযায়ী সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশন গঠন হলে তা জনগণ ও বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন খালেদা জিয়া।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2017, 06:02 PM
Updated : 21 Jan 2017, 06:22 PM

শনিবার রাতে এক মতবিনিময় সভায় বক্তব‌্যে ‘নিরপেক্ষ’ ব‌্যক্তিদের নিয়ে সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশনের প্রত‌্যাশা ব‌্যক্ত করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি কোনো দলের না, তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি, তিনি সকলের কাছে সমান। আমরা যেটা আশা করব, জনগণ যেটা আশা করে রাষ্ট্রপতি সকলের কথা শুনে এমন সব ব্যক্তিদের দিয়ে সার্চ কমিটি বা নির্বাচন কমিশনটা গঠন করবেন, যেখানে সকলে বুঝতে পারে যে, রাষ্ট্রপতি সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন।

“উনি (রাষ্ট্রপতি) যদি সরকারি দলের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য যদি কোনো নির্বাচন কমিশন গঠন করে দেন, সেটা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ‌্য হবে না।”

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। সংবিধান অনুযায়ী নতুন কমিশন গঠন করতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ইতোধ্যে ৩১টি দলের সঙ্গে আলোচনা শেষ করেছেন।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বেশিরভাগ দল সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে, তা না হওয়া পর্যন্ত সার্চ কমিটির পক্ষেই মত দিয়েছে অধিকাংশ দল। এই সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন‌্যান‌্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে প্রার্থী খুঁজে বের করবেন।

বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ‌্য দিয়েই গত ১৮ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে এ সংলাপ শুরু হয়। সার্চ কমিটি গঠন ও ইসি নিয়োগের বিষয়ে ১৩ দফা প্রস্তাব দেয় দলটি।

তবে শেষ পর্যন্ত সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশনে কাদের আনা হবে তা নিয়ে উদ্বেগে থাকার কথা জানান বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া। 

তিনি বলেন, “মাঠে নানা রকম কথা শোনা যাচ্ছে। যেমন আওয়ামী লীগ গিয়েছিল রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করতে। তারা এসে বলেছে, তারা কিছু প্রস্তাব দিয়েছে এবং তার সঙ্গে আরও প্রস্তাব দিতে পারে, যা প্রকাশ হয়নি। আমাদের কথাও সব প্রকাশ হয়নি, আমরা লিখিত কী দিয়েছি। তারা (আওয়ামী লীগ) কী দিতে পারে।”

এখন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রত‌্যাশা তুলে ধরে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব হবে, সেগুলোকে (সবার মতামত) বিচার-বিশ্লেষণ করে, আরও ভালোমতো খবর নিয়ে যে ব্যক্তিটা কী রকম, সে কোনো দলীয় কি না, নিরপেক্ষ কি না।

“তার যে নির্বাচন কমিশনের কাজটি তা শক্ত, মাথা উঁচু করে, মেরুদণ্ড সোজা করে কাজ করতে পারে, রকিবের (কাজী রকীব উদ্দিন আহমদ) মতো মেরুদণ্ডহীন দলীয় ওই রকম লোক যদি বসিয়ে দেয়, তাহলে কিন্তু সত্যিকার অর্থে  নির্বাচন কমিশন হবে না, দেশি-বিদেশি কারও কাছেই আস্থা পাবে না।”

গুলশান কার্যালয়ে জিয়া পরিষদের নেতাদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভা করেন বিএনপি নেত্রী।

সকালে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে পরিষদের বার্ষিক প্রতিনিধি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সভায় সর্বসম্মতভাবে কবীর মুরাদ চেয়ারম্যান পুনর্নির্বাচিত হন।

দেশে গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, “বিটিভি হয়েছে এখন আওয়ামী লীগের বাক্স। গণমাধ্যম সরকারি হস্তক্ষেপে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। যে কথা সরকারের মনঃপুত হবে না, তা প্রচার করতে দেয় না।”

সরকারের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “শুধু বিএনপির দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না, আজকে সকলকে সোচ্চার হতে হবে।

“বিএনপি হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চায়। আওয়ামী লীগ মানেই হচ্ছে মানুষের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়, মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন চলে, ব্যাংক লুটপাট চলে। আওয়ামী লীগ মানেই অত্যাচার-মিথ্যাচার-দুর্নীতি। তাদের অধীনে দেশের মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে না।”

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসেছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, “এক এগারোর সরকারের সময়ে আমার সাথেও তাদের কথা হয়েছিল, তারা অন্যায় করেছে, আমি রাজি হইনি। কিন্তু হাসিনা রাজি হয়েছে, তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। তাকে কতগুলো সিট দিয়েছে কেন সেটা জানতে হবে।

“কারণ মইন-ফখরুদ্দিনের (মইন উ আহমেদ ও ফখরুদ্দীন আহমদ) অপকর্ম পার্লামেন্টে পাশ করতে হবে সেজন্য তাদের বেশি সিট দিয়ে ক্ষমতায বসিয়েছে। ওদের অপকর্ম পাশ করেছে আওয়ামী লীগ।”

জাতীয় পার্টির চেয়ারম‌্যান এইচএম এরশাদের সমালোচনা করে তাকে আওয়ামী লীগের ‘দুই নম্বর টিম’ বলেন তিনি।

“মানুষের কাছে এরশাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। মানুষ বুঝেছে এরশাদ কী জিনিস! এরশাদও একই জিনিস সেই লুটপাট করা, দুর্নীতি করা।”

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে ‘দলীয়করণের’ সমালোচনা করে বিএনপি নেত্রী বলেন, “আওয়ামী লীগ হলে তাকে চাকুরিটা দেওয়া হয়। আর যোগ্য হলেও সে চাকুরি পায় না। এই যে অবিচার চলছে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। সত্যিকারভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে জবাবদিহি নিশ্চিত হলে যোগ্য ব্যক্তিরা চাকুরি পাবে।”

বিচার বিভাগ নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন,  “দেশে বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। আইন সকলের জন্য সমান নয়। আওয়ামী লীগ হলে এক রকম বিচার হয় বা অন্যদল ও সাধারণ নাগরিক হলে তাদের জন্য ভিন্ন রকমের বিচার হয়।

“মামলায় মেরিট থাকুক না থাকুক, সেটা দেখা হবে না। দেখা হবে যে বিএনপির লোক হলে যে অপরাধ করুন না করুক তার জেল নির্ধারিত। কেন? সেখানে বিচারকের কোনো দোষ নেই, তাদের বাধ্য করা হয় উপর থেকে নির্দেশ দিয়ে যে তাকে জেলে দিতে হবে।”

সরকারের তিনজন মন্ত্রী আদালতে দোষী সাব‌্যস্ত হওয়ার পরও কীভাবে ‘বহাল তবিয়তে’ মন্ত্রিত্ব করছেন সে প্রশ্ন তোলেন খালেদা জিয়া। 

জিয়া পরিষদকে গ্রামে-গঞ্জে দেশের প্রকৃত অবস্থা এবং ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য’ জনমত গঠনে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান কবীর মুরাদের সভাপতিত্বে সভায় অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, অধ্যাপক মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক আলিম রহমান, অধ্যাপক একেএম মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক নাহিদ জেবা, অধ্যাপক হাসনাত আলী, অধ্যাপক মো. মমতাজ হোসেন বক্তব্য রাখেন।

সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।