রাষ্ট্রপতির সংলাপ শেষে ‘নিরপেক্ষ সার্চ কমিটির’ আশায় বিএনপি

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে একটি ‘নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি’ আশা করছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2017, 11:17 AM
Updated : 19 Jan 2017, 11:17 AM

ইসি গঠন বিষয়ে ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সংলাপ শেষ হওয়ার প্রেক্ষাপটে অভিমত জানতে চাইলে সাংবাদিকদের কাছে দলের এই প্রত্যাশার কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার শেরেবাংলা নগরে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অপর্ণের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা ইতিবাচক রাজনীতি করি এবং এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একটি অত্যন্ত সুন্দর প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন। সেই প্রস্তাবনার ভিত্তিতেই রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে ডেকেছেন, কথা বলেছেন।

“এখন আমরা আশা করব যে, রাষ্ট্রপতি সত্যিকার অর্থে একটি নিরপেক্ষ সার্চ কমিটির মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন- যা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য যোগ্য হবে।”

নতুন ইসি গঠনে সংসদে বাইরে থাকা বিএনপিসহ ৩১টি রাজনীতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির মাসব্যাপী সংলাপ বুধবার শেষ হয়েছে।

গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির এই সংলাপ শুরু হয়, যাতে ইসি গঠনে সার্চ কমিটি করার দাবি জানিয়ে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দেয় দলটি।

বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮১তম জন্মবার্ষিকীতে তার কবরে পুষ্পস্তবক অপর্নে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বেশিরভাগ দল সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে, তা না হওয়া পর্যন্ত সার্চ কমিটির পক্ষেই মত দিয়েছে বেশিরভাগ দল।

সংলাপ শেষ হওয়ার পর ইতোমধ্যে সব দলের প্রস্তাব বিবেচনা করে ইসি গঠন করার কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি এবিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যেও সংলাপ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতির আহ্বান প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা তো বরাবর রাষ্ট্রপতির এই বক্তব্যই বলে এসেছি; আজ থেকে নয়, প্রথম থেকে। গণতন্ত্র কখনো ফলোপ্রসূ হবে না, কার্য্করী হবে না, যদি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনা না থাকে।

“একটা সহনশীল সমঝোতার মধ্য দিয়ে, সংলাপের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র বিকশিত হয়। সেটা আমাদেরও কথা। রাষ্ট্রপতি সেটা বলেছেন, সেজন্য তাকে ধন্যবাদ।”

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি কার্য্করী পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন এই মহাসচিব।

কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শেষ হচ্ছে। এরপর পাঁচ বছর মেয়াদী নতুন ইসি গঠনে বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির।

সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে এই নির্বাচন কমিশন হবে। এ বিষয়ে প্রণীত আইনের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কমিশন নিয়োগ দেবেন।

কিন্তু সংবিধানের আলোকে ওই আইন সাড়ে চার দশকেও না হওয়ায় প্রতিবারই নির্বাচন কমিশন গঠনে জটিলতা দেখা দেয়। গতবার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটি গঠনের উদ‌্যোগ নিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান।

এবারের সংলাপে ইসি গঠনে সম্ভব হলে এখনই আইন প্রণয়ন কিংবা অধ‌্যাদেশ জারি করা যেতে পারে বলে মত দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে তাদের এই উদ্দেশ‌্য নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি।

এ অবস্থায় সেই সার্চ কমিটি গঠিত হলে বিএনপির বিবেচনায় যদি তা ‘নিরপেক্ষ না হয়’ তাহলে দলটি কী করবে- এমন প্রশ্ন করা হলে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল বলেন, “আমরা আগেই বলেছি যে- নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি ও নির্বাচন কমিশন গঠন না হয়, এদেশের মানুষ কখনোই তা গ্রহণ করবে না।”

বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নেতাকর্মীদের নিয়ে ওই পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

এসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দেশে গণতন্ত্র অবরুদ্ধ বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “আমরা বরাবর বলে এসেছি, একদলীয় শাসনব্যবস্থা ১৯৭৫ সালে এদেশের মানুষ বাতিল করে দিয়েছিল, তা প্রত্যাখান করেছিল, আবার ভিন্ন আঙিকে একদলীয় শাসন চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। মানুষের অধিকারগুলোকে হরণ করা হচ্ছে, গণতন্ত্রকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।”

এ অবস্থার বিরুদ্ধে বর্তমানে গোটা দেশের মানুষ সংগ্রাম করছে বলে দাবি করেন এই বিএনপি নেতা।